চিকিৎসকেরা জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লিখছেন কি না, এসএসকেএম হাসপাতালে তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের দোকানে জিনিস মজুত থাকা সত্ত্বেও যে চিকিৎসকেরা ওষুধ বা সরঞ্জাম বাইরে থেকে কিনে আনতে বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে কে? ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন স্বাস্থ্যকর্তাদের সামনে এসেছে। ন্যাশনালের সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎকেরা অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ন্যায্য মূল্যের দোকানের জিনিসের মান যথাযথ নয়। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা বাইরে থেকে সরঞ্জাম কিনে আনতে বলছেন। সব মিলিয়ে তরজা জমে উঠেছে ন্যাশনালে।
ন্যাশনালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ওই হাসপাতালেরই ন্যায্য মূল্যের দোকানের কর্মীরা। কর্তৃপক্ষকে লেখা একটি চিঠিতে তাঁদের অভিযোগ, রোগীর প্লাস্টার করার সরঞ্জাম তাঁদের দোকানে সব সময়ে মজুত থাকে। অথচ ওই বিভাগ থেকে রোগী বা তাঁদের পরিবারের লোককে বেশির ভাগ সময়েই স্থানীয় অন্য একটি দোকানে পাঠানো হয়। এরই পাল্টা অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই দোকানে তাঁদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কোনও সরঞ্জামই মজুত থাকে না। ফলে সব কিছুই রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। পাওয়া যায় শুধুমাত্র প্লাস্টার অফ প্যারিস, সেটাও এত নিম্ন মানের
যে তাতে প্লাস্টার করলে হিতে বিপরীত হয়।
ন্যাশনালের সুপার পার্থ প্রধান জানান, তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক এবং ওই দোকানের প্রতিনিধিদের নিয়ে একত্রে বৈঠক করেছিলেন। ডাক্তারেরা সেখানে সরাসরিই মান নিয়ে অভিযোগ তোলেন। বলেন, ওই প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহার করলে প্লাস্টার শুকোয় না। সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে যে গতিতে কাজ করতে হয়, ওই প্লাস্টার অফ প্যারিস ব্যবহার করলে তা বজায় রাখা যাবে না। এক জন রোগীর প্লাস্টার শেষ হতেই দিন গড়িয়ে যাবে। পাথর্র্বাবুর বক্তব্য, “সংস্থার কর্মীরা সরঞ্জামের মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটা তাঁরা করেছেন কি না, সে বিষয়ে এখনও আমাকে কিছু জানাননি। মান ঠিক থাকলে জিনিস ব্যবহার না করার কোনও কারণ নেই।”
যে বেসরকারি সংস্থা ন্যাশনালে ন্যায্য মূল্যের দোকান চালাচ্ছে, তাদের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, মান ঠিকই ছিল। চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীদের একাংশের সঙ্গে বাইরের দোকানের যোগসাজস থাকায় তাঁদের দোকান থেকে বিক্রি কম হচ্ছিল। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “লিখিত অভিযোগ জানানোর পরে কিছুটা কাজ হয়েছে। আগের তুলনায় আমাদের বিক্রি বেড়েছে।” অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অলয়জ্যোতি কুণ্ডু বলেন, “আমাদের যে ধরনের সরঞ্জাম প্রয়োজন পড়ে, তার তালিকা ওই দোকানকে দেওয়া হয়েছ। তবে অভিযোগের ব্যাপারে আমি বিস্তারিত জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।” মাস দুয়েক আগে আচমকাই এক সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকেরা যেন ব্র্যান্ড নামে ওষুধ না লেখেন, সে বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি ব্র্যান্ড নামে লেখা কয়েকটি প্রেসক্রিপশনও বাজেয়াপ্ত করেন তিনি। তার ভিত্তিতে এ বার তদন্তে নেমেছে ভবানীপুর থানার পুলিশ। ন্যাশনালের ঘটনাও তেমনই কোনও দিকে ইঙ্গিত করছে কি না, সে নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরে।
সুপার পার্থবাবু জানিয়েছেন, জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখার ব্যাপারে তাঁরা সব বিভাগকেই নির্দেশ দিয়েছেন। বাইরের দোকানের প্রতিনিধিরা যাতে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকতে না পারেন,
সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “দালালদের দৌরাত্ম্য রুখতে
পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে আমাদের চেষ্টা চলছে।
দিন কয়েক আগেই ন্যাশনালের অর্থোপেডিক আউটডোরে এক রোগীর প্লাস্টার করানোর প্রয়োজন পড়ে। হাসপাতালের নিজস্ব স্টোরে তা মজুত নেই বলে জানিয়ে রোগীর পরিবারের লোককে প্লাস্টারের সরঞ্জাম কিনে আনতে বলা হয় বাইরের একটি নির্দিষ্ট দোকান থেকে। অভিযোগ, রোগীর সেই আত্মীয় হাসপাতালের ভিতরের ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কিনতে গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওতে কাজ হবে না। যে দোকান থেকে আনতে বলেছি, শুধুমাত্র সেই দোকান থেকেই আনতে হবে।’’ কিন্তু বাইরের দোকানের চেয়ে ন্যায্য মূল্যের দোকানে দাম অনেকটা কম হওয়ায় ওই রোগীর বাড়ির লোকেরা সেখান থেকেই সরঞ্জাম কিনে আনেন। তাতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তাঁদের গোলমাল বাধে এবং তাঁরা প্লাস্টার করতে অস্বীকার করেন বলে অভিযোগ।
এর পরেই বিষয়টি নিয়ে সরব হন একাধিক রোগীর বাড়ির লোকেরা। চিকিৎসকেরা যদি প্রেসক্রিপশন লেখার সময়ে বাইরের দোকানের নামই নির্দিষ্ট করে দেবেন, তা হলে হাসপাতালের ভিতরে দোকান খুলে লাভ কী, এমন প্রশ্নও তোলেন তাঁরা। এর দিন কয়েকের মধ্যেই কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই দোকান কর্তৃপক্ষ। |