কেন্দ্র পারবে না বাহিনী দিতে, বার্তা দেখিয়ে জানালেন মমতা
ঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী দেওয়া সম্ভব নয় বলে রাজ্যকে জানিয়ে দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বুধবার মহাকরণে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এক বার্তায় বলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য প্রান্তে আগে থেকেই মোতায়েন থাকায় রাজ্য ৩০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে যে আবেদন করেছিল, তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডিরেক্টর (পার্সোনেল) দীনেশ মাথুরের পাঠানো ওই চিঠি সংবাদমাধ্যমকে দেখিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আরে, এত দিন পাগল করে দিচ্ছিল ফোর্স চাইছে না-ফোর্স চাইছে না বলে! এই তো চেয়েছিলাম। দিতে পারল দিল্লি? আমি তো জানতাম, ওরা দিতে পারবে না। কোথা থেকে দেবে?” তা হলে কী ভাবে ভোট হবে? মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য: তিনি নিজে পঞ্জাব-ওড়িশা-মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা এখনও কিছু জানাননি। “হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট হচ্ছে। এখন আমি কিছু বলব না। তবে উপায় না-থাকলে রাজ্যের যা বাহিনী আছে, তাই দিয়েই ভোট করতে হবে।” মত মমতার। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া কী?
রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের দাবি, দিল্লির ওই চিঠি সম্পর্কে রাজ্য এখনও তাঁদের অবহিত করেনি। এ দিন সন্ধ্যায় অফিস ছাড়ার আগে মীরাদেবী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠি সম্পর্কে রাজ্য সরকার আমাদের কিছু জানায়নি। রাজ্য সরকারকে বিষয়টি আদালতকে জানাতে হবে। আমরাও যা বলার, আদালতকে বলব। তাই এখনই ওই চিঠির ব্যাপারে আমার কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”
বস্তুত এই প্রশ্ন ঘিরেই জটিল হয়েছে পঞ্চায়েতের প্রথম দফার ভোট পরিচালনার কাজ। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশে ভোট হচ্ছে। কোন বুথে কত বাহিনী দেওয়া হবে, কোর্টই তা স্থির করে দিয়েছে। উপরন্তু মঙ্গলবার আদালত ফের সতর্ক করে দিয়েছে যে, বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত সেই নির্দেশ রাজ্যকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। ফলে বাহিনী জোগাড়ের দায়িত্ব এখন রাজ্যেরই। সরকার প্রয়োজনীয় বাহিনী দিতে না-পারলে তার দায়িত্ব মহাকরণকেই নিতে হবে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
পর্যাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী না-পেলে কমিশন কী করবে?
কমিশনের একটি সূত্র বলেন, ইতিমধ্যে তিন দফায় নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছে। প্রয়োজনে পাঁচ দফার নির্বাচন করা যায় কি না, তা নিয়ে কমিশনে আলোচনা চলছে। কমিশন-সূত্রের ইঙ্গিত, তাদের তরফে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক, হাইকোর্টকে জানিয়ে নেওয়া হবে। রাজ্য সরকারের এক সূত্রেরও দাবি, তিন দফার বদলে পাঁচ দফায় ভোট হলে রাজ্যের কাছে এখন যে বাহিনী (প্রায় ৫০ হাজার) রয়েছে, তা দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানো সম্ভব।
তবে কমিশন মনে করছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়ে রাজ্য গত সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা শুরু করলে এই সমস্যার আদৌ উদ্ভব হতো না। “শেষ মুহূর্তে চাইলে দিল্লি যে পর্যাপ্ত বাহিনী দিতে পারবে না, তা বুঝেই রাজ্য মাত্র গত সপ্তাহে বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছে। না-পাওয়ার দায় মুখ্যমন্ত্রী এখন কেন্দ্রের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন!” মন্তব্য করছেন কমিশনের এক সূত্র। তাঁর দাবি: রাজ্য যদি প্রথম দফায় ৯টি জেলায় ভোট করানোর গোঁ ধরে না-থাকত, তা হলেও বাহিনী-বিতর্ক এতটা গুরুতর আকার নিত না।
কলকাতা হাইকোর্টকে মঙ্গলবার রাজ্য জানিয়েছিল, আরও ৪০ জন পর্যবেক্ষকের নাম তারা তিন দিনের মধ্যে পাঠাবে। তার পরে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কমিশন এত পর্যবেক্ষক চাওয়ায় রাজ্যে উন্নয়নের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মহাকরণে তিনি বলেন, লোকসভা ভোটে আয়কর, শুল্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার লোকজনকে কেন্দ্র পর্যবেক্ষক করে পাঠায়। কিন্তু রাজ্যের সে সুবিধা নেই। কমিশন যে ভাবে সব অফিসারকে তুলে নিয়েছে, তাতে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটছে বলে অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “একে তো ভরা বর্ষায় ভোট হবে! ভগবান না-করুন, এর মধ্যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়ে গেলে কী হবে? সব অফিসারকে, ডব্লিউবিসিএসদেরও পঞ্চায়েতের কাজে পাঠানো হচ্ছে!”
একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক অফিসারের ঘাটতির প্রসঙ্গও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। “এ রাজ্যে ৩১৪ জন আইএএস অফিসার থাকার কথা। আছেন মাত্র ২১২ জন। বিপদ হলে কাজ করার অফিসার কই? শুধু প্রধান সচিবেরাই দফতরে আছেন। যা অবস্থা, তাতে তো মুখ্যসচিব-স্বরাষ্ট্রসচিবকেও ভোটের কাজে পাঠিয়ে দিলে খারাপ হয় না!” বলেন তিনি। মমতার আক্ষেপ, “যদি কেউ প্রশ্ন তোলেন, ২০১২-১৩ সালে এত ভাল কাজ করলেন, আর ২০১৩-১৪ সালে কাজ এত খারাপ হল কেন, কী উত্তর দেব? তিন মাস ধরে তো পঞ্চায়েত ভোটের কাজ হচ্ছে!” ভোটে নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তঃরাজ্য সীমানা সিল করায় জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যের সঙ্গে ওড়িশা-বিহার-ঝাড়খণ্ডের সীমানা সিল করা দরকার। আমি বার বার বলছি। হচ্ছে কি? একা রাজ্য সরকার সেই সিদ্ধান্ত কী ভাবে নেবে?”
অভিযোগ উঠছে, পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারছে না। মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন?
মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “সিপিএমই তো সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছে! আগের সব পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের বহু প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেনি। এ বার বিরোধীরাও নিশ্চিন্তে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন।” মমতা আরও বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে ১৮০ জনের প্রাণ গিয়েছিল। সে সব রেকর্ডও ওরা রাখেনি! এ বার এ পর্যন্ত এক জনের মৃত্যু হয়েছে।”
এবং নিহত সেই ব্যক্তি তৃণমূলেরই কর্মী বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.