বিয়ে নয়, আগে পড়াশোনা। নাছোড় এই জেদের কাছে হার মানল আরও এক নাবালিকার পরিবার। কিন্তু পড়ার খরচ চালাবে কে? ভরসা দিয়েছে পুলিশ। স্কুলে ভর্তিতে সাহায্যও করেছে।
পরিবারের বিরুদ্ধে যে লড়াই লড়ে জিতেছেন পুরুলিয়ার বীণা কালিন্দি, সঙ্গীতা বাউরি বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাবিবা খাতুন, সেই লড়াইয়ে এ বার জিতল রায়দিঘির বকুলতলা গ্রামের বছর পনেরোর সেলিমা খাতুন। সেলিমা ভূগোল নিয়ে গবেষণা করতে চায়। কিন্তু গত সপ্তাহে মাধ্যমিকের ফল হাতে নিয়ে বাড়ি ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার স্বপ্ন হারাতে বসেছিল। পরিবারের লোকজন জানিয়েছিলেন, আর পড়াশোনা নয়। এ বার বিয়ের জন্য প্রস্ততি শুরু হবে। মানেনি সেলিমা। পরের দিনই সাহায্য চায় পুলিশের। পুলিশের সহায়তায় বুধবার সে বাড়িভাঙা বামাচরণ বিদ্যাপীঠে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হল।
নারী সচেতনতা নিয়ে মাস ছয়েক আগে ওই এলাকায় শিবির হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। তার আলোচনাই সেলিমাকে ‘যুদ্ধজয়ে’ সাহায্য করেছে। সেলিমার কথায়, “ওই শিবিরে পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন নম্বর দেওয়া হয়। আমি খাতায় টুকে নিই। দেখলাম, বাড়ির লোক কিছুতেই আর পড়াবে না। তাই থানায় ফোন করি।” বুধবার দুপুরে পুলিশের গাড়ি করেই সে স্কুলে ভর্তি হয়। রায়দিঘির ওসি কৌশিক কুণ্ডু বলেন, “নাবালিকা পড়াশোনা ছেড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে, এটা মানা যায় না। তাই ওর পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছি। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ওর পড়ার খরচ আমরাই চালাব।”
দিনমজুর সেলিম মোল্লার চার মেয়ের মধ্যে সেলিমা বড়। সে যে পুলিশের সাহায্য নিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছে এ দিন দুপুর পর্যন্ত তা জানতেন না সেলিম। জানতে পেরে অবশ্য মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। তবে, কেন প্রথমে বাধা দেওয়া? তাঁর আক্ষেপ, “দিন আনি দিন খাই। সারা মাসে তিন হাজার টাকার মতো আয়। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। কী করে মেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করব? তবে কেউ যদি দায়িত্ব নেয়, আমার আপত্তি নেই।” |