পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই।
মাধ্যমিকে ভাল নম্বর পেলেও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারার বিষয়ে নিশ্চিত নয় মন্দিরবাজার ব্লকের নিশাপুর পঞ্চায়েতের রহিমা খাতুন ও সাবেরা খাতুন। কারণ তাদের বাড়ির আশেপাশে কোনও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বাস নিশাপুর এলাকায়। কিন্তু নিকটবর্তী উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় হল সংগ্রামপুর সপ্তগ্রাম হাইস্কুল অথবা জগদীশপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। রহিমা, সাবেরাদের বাড়ি থেকে ওই যার দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।
নিশাপুর এলাকায় তবুও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাশের পঞ্চায়েত কেচারকুড়ে সেটাও নেই। প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বাস কেচারকুড়ে। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক দূরের কথা, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও নেই। ফলে চতুর্থ শ্রেণির পরে স্কুলমুখো হতে পারছে না অনেকেই, অভিযোগ এমনটাই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও বক্তব্য, নিশাপুর ও কেচারকুড়-দু’টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। অন্য গ্রামের মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তে গেলে উপায় সাইকেল অথবা হেঁটে আসা। কৃষিপ্রধান ওই এলাকায় দিনমজুর ও চাষির সংখ্যা বেশি। খানাখন্দ উজিয়ে ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে রাজি হন না অনেকে।
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন দুই পঞ্চায়েত প্রধানই। কেচারকুড় পঞ্চায়েতের প্রধান প্রতিমা কয়াল বলেন, “মাধ্যমিক বিদ্যালয় অনুমোদনের দাবি নিয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু আজও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” নিশাপুর পঞ্চায়েত প্রধান সহদেব খাঁ বলেন, “এই এলাকায় একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় দরকার। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো সত্ত্বেও কোনও উদ্যোগ করা হয়নি।” স্থানীয় বাসিন্দা কালাম গাজি, মোজ্জামেল মোল্লাদের অভিযোগ এলাকার অধিকাংশ মানুষ দুঃস্থ। তাই ছেলেমেয়েদের পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব হয় না।
যদিও সমস্যার কথা জানা নেই মন্দিরবাজার ব্লকের যুগ্ম বিডিও সৌগত রায়ের। একই বক্তব্য জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দেবজ্যোতি বড়ালের। তিনি অবশ্য বলেন, “গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বিদ্যালয় না থাকলে আবেদন করলে ব্যবস্থা নেব।”
মন্দিরবাজারের বিধায়ক তৃণমূলের জয়দেব হালদার বলেন, “বিষয়টি জানি। কেচারকুড় এলাকায় শরিফনগর ও ধান্যকাটা এলাকার দুটি আপার প্রাইমারি স্কুলকে মাধ্যমিক ও নিশাপুর পঞ্চায়েতের ঝাঁপবেড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ করার জন্য আমি রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি।” সরকার উদ্যোগী না হলে হয় তো নিজেদের অনিচ্ছাতেই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হবে একের পর রহিমা, সাবেরা। |