গত মাসে শান্তাকুমারন শ্রীসন্তরা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বারবার প্রশ্নটা উঠছিল। স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে যে টিমের তিন ক্রিকেটারের হাতে হাতকড়া পড়েছে, তার মালিককে কবে জেরা করবে দিল্লি পুলিশ? শেষ পর্যন্ত আজ লোধি রোডে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের দফতরে ডেকে পাঠিয়ে টানা ছ’ঘণ্টা জেরা করা হল রাজ কুন্দ্রাকে। তাঁর স্ত্রী শিল্পা শেট্টিকে এখনও জেরার মুখে পড়তে হয়নি।
দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ধৃত তিন রয়্যালস ক্রিকেটার, শ্রীসন্ত, অঙ্কিত চহ্বাণ এবং অজিত চান্ডিলা সম্পর্কে বিস্তারিত খবরাখবর জানতেই রাজকে এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাজস্থান টিমে কার কতটা মালিকানা রয়েছে, সে খবরও নেওয়া হয় তাঁর কাছে (রাজ জানান, তাঁর মালিকানা ১১.৭ শতাংশ)। রাজের সঙ্গেই এ দিন জেরা করা হয় তাঁর ব্যবসার অংশীদার উমেশ গোয়েনকাকে। বিশেষ সূত্রের দাবি, একটি ম্যাচে আমদাবাদের পিচ ও রাজস্থান টিম সম্পর্কে উমেশ তাঁর কাছে তথ্য চেয়েছিলেন বলে রাজস্থান পেসার সিদ্ধার্থ ত্রিবেদী সম্প্রতি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া বয়ানে দাবি করেছিলেন। রাজ কুন্দ্রাদের জেরার সময়ে আজ সিদ্ধার্থকেও ডেকে পাঠানো হয়। এক পুলিশ অফিসারের বক্তব্য, সিদ্ধার্থের মতো উমেশকেও সরকারি সাক্ষী করা হয়েছে।
|
রাজ কুন্দ্রা।
—ফাইল চিত্র |
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্রের খবর, কোর্টের কাছ থেকে শ্রীসন্তদের বিরুদ্ধে ‘মকোকা’ (মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট) প্রয়োগের অনুমতি খুব শীঘ্রই মিলবে বলে স্পেশ্যাল সেল-এর কর্তারা আশাবাদী। তাঁরা চাইছেন আদালতের নির্দেশ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চার্জ গঠন সেরে ফেলতে, যাতে ১৮ জুন তিন ক্রিকেটারের জেল হেফাজতের মেয়াদ ফুরনোর আগেই জামিন অযোগ্য ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। এই মকোকা প্রয়োগের আর্জি নিয়ে ইতিমধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে একপ্রস্ত বিতর্ক। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন মকোকা যে রাজ্যের আইন (অর্থাৎ মহারাষ্ট্র), সেখানকার পুলিশ গুরুনাথ মইয়াপ্পন ও বিন্দু দারা সিংহের বিরুদ্ধে তা প্রয়োগের কোনও ইঙ্গিত এখনও দেয়নি। তা হলে দিল্লি পুলিশ তড়িঘড়ি তাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া ২৬ জনের বিরুদ্ধে মকোকা-য় চার্জ আনতে চাইছে কেন? বস্তুত, শ্রীসন্তের আইনজীবী রেবেকা জন গত কালই অভিযোগ করেছিলেন, জামিন দেবে না বলেই দাউদ ইব্রাহিমের প্রসঙ্গ টেনে মকোকা আনতে চাইছে দিল্লি পুলিশ। মুম্বই পুলিশ ও দিল্লি পুলিশের মধ্যে রেষারেষির কথাও বলেছিলেন তিনি। দিল্লি পুলিশের অবশ্য দাবি, অভিযুক্তরা দাউদ ও ছোটা শাকিলের কথায় চলছিলেন বলেই তাঁদের বিরুদ্ধে মকোকা আনতে চাওয়া হয়েছে।
গত কাল অবশ্য গুরুনাথ-বিন্দুকে জামিন দিতে গিয়ে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের তীব্র সমালোচনা করে আদালত। বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হলেও তার কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ। গুরুনাথ-বিন্দুর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র জালিয়াতি ও প্রতারণাই জামিন অযোগ্য অপরাধ। কিন্তু জামিনের নির্দেশে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট এম এন সালিম বলেন, “জেরা ও প্রমাণ সংগ্রহের যথেষ্ট সুযোগ পেয়েও সরকার পক্ষ বার করতে পারেনি, ঠকানোটা হল কাকে। নথিপত্রে জালিয়াতিরও কোনও প্রমাণ মিলছে না।” আদালতের আরও বক্তব্য, গুরুনাথ শুধু বিন্দুকে চিনতেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি বাজি ধরতেন। কিন্তু সরকার পক্ষ কোথাও এমন দাবি করেনি যে, কোনও ক্রিকেটারকে গুরুনাথ চিনতেন। আম্পায়ার আসাদ রউফের সঙ্গে বুকিদের যোগাযোগের অভিযোগ প্রসঙ্গেও আদালত বলে, রউফের সাহায্যে কোনও নির্দিষ্ট ম্যাচ ফিক্স হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে কোনও সূত্রের হদিস নেই। প্রসঙ্গত, আইপিএল কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ।
আজ আবার বিসিসিআইয়ের কাছে অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন প্রাক্তন আইপিএস রবি সাওয়ানি। গোটা তদন্ত প্রক্রিয়ায় যদিও কোনও অভিযুক্ত ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি তিনি। তবে শ্রীসন্তের বাবা-মা আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের ছেলে নির্দোষ। ওকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য আমরা আপনাদের সবার সহযোগিতা ও সমর্থন চাইছি।”
|