গাছ লাগিয়েই তৃপ্তি বৃদ্ধ শ্রীমন্তের
বটুলিয়ার যুগলপ্রসাদ আর জগদ্দলের শ্রীমন্তকুমার জানার মধ্যে একটাই মিল। ঘুম ভাঙার পর থেকেই গাছের চারা নিয়ে বেরিয়ে পড়া। দিনের আলো যত ক্ষণ থাকে, একের পর এক গাছ লাগিয়ে চলা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যক কখনও পড়েননি শ্রীমন্তবাবু। তাই যুগলপ্রসাদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়নি।
শ্রীমন্তবাবুর জীবনের একটাই লক্ষ্য ধোঁয়া, ধুলো আর কল-কারখানার দূষণে ভরা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলকে সবুজের আচ্ছাদন দেওয়া। ৬৭ বছরের ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছে, ক্ষত অনেকটাই ছড়িয়েছে। ঠিক করে কিছু খেতে পারি না। বুঝতে পারি, দিন ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু যত দিন বাঁচব, চেষ্টা করে যাব পরিবেশটাকে সুন্দর করতে। অনেক গাছ লাগাব।”
প্রাক্তন সেনাকর্মী শ্রীমন্তবাবু চাকরিজীবনে সেনা-ছাউনিগুলিতেও গাছ লাগিয়েছেন। সেই স্মৃতি রোমন্থনের করে বলেন, ‘‘এখন ভাল চারার অনেক দাম। অত টাকা কোথায়? কিন্তু চাকরির সময় সরকারি চারা মিলত। কর্ণেল বা ব্রিগেডিয়ার শখ করে বাগান বানাতেন। মালির দরকার হত না। ভোর থেকে গাছ লাগানোর নেশাটা সেই তখন থেকে।” শ্রীমন্তবাবুর ছেলে রবীন্দ্র বলেন, “অসুস্থ শরীরেও বাবার গাছ লাগানোর খামতি নেই। এতেই ওঁর তৃপ্তি।”
পরম মমতায় গাছের পরিচর্যা। —নিজস্ব চিত্র
জগদ্দলের গোলঘরে নিজের একটা সাইকেল সারানোর দোকান আছে। সেখানে নিজে সাইকেলও বানান ওই বৃদ্ধ। দোকানের সামনের সরু রাস্তার দু’ধারে বাহারি গাছের সারি। কাজের ফাঁকে গাছগুলির সঙ্গেই গল্প করেন। কিছুটা দূরে প্রীতিনগরের ঘিঞ্জি এলাকায় প্লাস্টারহীন শ্রীমন্তবাবুর বাড়িটাও গাছ দিয়ে ঘেরা। বকুল, পলাশ, শিমূল, মেহগিনির চারাও আছে। ভোর হলেই সেই চারাগাছ ব্যাগে ভরে নিজের তৈরি সাইকেলের সামনের বাস্কেটে গাছ লাগানোর সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাড়ির আশেপাশের অঞ্চলে ঘিঞ্জি রাস্তার পাশের ফাঁকা জায়গায় ছোট ছোট চারাগাছ পরম যত্নে লাগিয়ে দেন। সঙ্গের বালতিতে জলও থাকে। গাছের গোড়ায় দেওয়ার জন্য। গাছ লাগানোর পাশাপাশি সেই গাছকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাঁশের বেড়াও লাগান। কাছাকাছি দোকান বা বাড়ি থাকলে সেখানকার বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন গাছগু যাতে বাঁচে, একটু খেয়াল রাখার জন্য। শ্রীমন্তবাবু বলেন, ‘‘ঘিঞ্জি শহরে গরু অনেক। মাঠ কম বলে সবাই রাস্তায় ছেড়ে দেয়। ওগুলোই গাছ মুড়িয়ে খেয়ে ফেলে। তা না হলে এত দিনে সব রাস্তা সবুজে মুড়ে দিতাম।” বকুল, কামিনী, পলাশ হরেক রকমের গাছ বৃদ্ধের ঝোলায়। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পার্কগুলিকে নিজের দায়িত্বে সবুজ দিয়ে সাজানো শুরু করেছেন তিনি।
বুধবার, পরিবেশ দিবসের সকালে ভাটপাড়ায় একটি পার্কে গাছ লাগাতে লাগাতে বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আগে এখানে পুরনো গাড়ির গ্যারাজ ছিল। পুরসভা এখানে শিশু উদ্যান বানানোর পর থেকেই বিভিন্ন রকম গাছ লাগাব ভেবেছিলাম। কাজও শুরু করে দিয়েছি। বিকেলে ছোটরা এলে খেলার ফাঁকে ওদের গাছ চেনাই। গাছেদের কত নাম, কত ফুল আর তার কত রকমের গন্ধ। মানুষের থেকে এরা অনেক অনেক ভাল বন্ধু।” ভাটপাড়ার পুরপ্রধান তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘ওঁর গাছ লাগানোর নেশার জন্য সকলে ওঁকে চেনে। সত্যিই ঘিঞ্জি শহরের পরিবেশটাকে বদলে দিয়েছেন কয়েক বছরেই। চেষ্টা করি গাছ কেনার ক্ষেত্রে ওঁকে সাহায্য করার। পুর এলাকায় গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আমাদের আছে। কিন্তু উনি একাই সেই কাজ শুরু করে দিয়েছেন।”
শ্রীমন্তবাবুর স্বপ্ন, ‘‘যে দিন আমি আর বেঁচে থাকব না, সে দিনও এই বকুল, কামিনীর গন্ধে, দেবদারু আর পলাশের মধ্যেই বেঁচে থাকব। চেষ্টা করব ছোটদের মধ্যেও এই নেশাটা ধরিয়ে যেতে। দূষণের শিল্পাঞ্চলে নিশ্চয়ই এক দিন সকলে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.