প্রস্তাবিত ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন বিল’ নিয়ে দেশে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছু বড় সংস্থা মনে করছে, এর ফলে এক দিকে যেমন তাদের ব্যবসায়ে অনাবশ্যক সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ হবে, তেমনই আবাসনের দাম ৪০ থেকে ৫০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিলটিতে সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরে আজ অধিকাংশ আবাসন সংস্থার শেয়ারের দাম পড়ে গিয়েছে। আবার কিছু বহুজাতিক সংস্থা বিলটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এর ফলে এই শিল্পে স্বচ্ছতা আসবে। ক্রেতারা চোখ বুজে আবাসন সংস্থাগুলিকে ভরসা করতে পারবেন। সময়ে ফ্ল্যাটও মিলবে। কী রয়েছে এই বিলে? খসড়া অনুযায়ী, কেন্দ্র ও রাজ্যে এক বা একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকবে, যাদের কাছে ৪০০০ বর্গ মিটার ও তার বেশি আয়তনের আবাসন প্রকল্পগুলি নথিভুক্ত করাতে হবে। প্রকল্পের সব রকম প্রয়োজনীয় অনুমোদনের বিষয়টি সেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাই দেখবে। জমি ও প্রকল্পের বিষয়ে সব রকম ছাড়পত্র না-পাওয়া পর্যন্ত কোনও আবাসন বিক্রি বা বুকিং করা যাবে না। বিভ্রাম্তিকর বিজ্ঞাপনের জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। এমনকী প্রোমোটার যদি পূর্বঘোষিত সময়ে প্রকল্প শেষ করতে না-পারেন, তার জন্যও ক্রেতাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।
কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রী অজয় মাকেন জানিয়েছেন, মূলত ক্রেতাদের স্বার্থেই সরকার এই বিলটি আনছে। আবাসন কিনতে গিয়ে তাঁরা হামেশাই প্রোমোটারদের কাছে হেনস্থা বা প্রতারণার শিকার হন। অনেক আবাসন সংস্থা বিজ্ঞাপনে নানা ধরনের দাবি করে পরে আর তা পূরণ করে না। মাকেন জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি পালন করতে না-পারা, বা হেনস্থার প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে জরিমানার ব্যবস্থা থাকছে। কারও বিরুদ্ধে একই অভিযোগ বার বার উঠতে থাকলে কারাদণ্ডের ব্যবস্থাও থাকছে নতুন আইনে। এ ছাড়া বিলে আরও কয়েকটি বিষয় থাকছে, যাতে ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষা হবে। যেমন, কোনও প্রোমোটার লিখিত বোঝাপড়া করে ১০ শতাংশের বেশি অগ্রিম নিতে পারবেন না। বোঝাপড়ার শর্ত লঙ্ঘন হলে ক্রেতারা সেই টাকা সুদ-সহ ফেরত পেতে পারবেন। এ ছাড়া আবাসন বিক্রি করতে হবে ‘কার্পেট এরিয়া’ অনুযায়ী। তার সঙ্গে ২০-৪০% এলাকা যোগ করে অনেক প্রোমোটার ‘সুপার এরিয়া’ বা ‘সুপার বিল্ট আপ এরিয়া’ ধরে আবাসন বিক্রি করেন, যা আর করা যাবে না। তবে এই বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রোমোটার-রা। তাঁদের বক্তব্য, সিঁড়ি, লিফ্ট বা কমন স্পেস-এর খরচ কে জোগাবে? কার্পেট এরিয়ার সঙ্গে এগুলির দাম যোগ হলে ফ্ল্যাটের দাম ৪০ থেকে ৫০% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
অবশ্য, মন্ত্রীর দাবি, এই বিল আইনে পরিণত হলে দেশের আবাসন শিল্পও লাভবান হবে। স্বচ্ছতা এলে এ ক্ষেত্রে লগ্নি যেমন বাড়বে, তেমনই মাফিয়া নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হবে। |