স্পট এক্সচেঞ্জ
পণ্য বাজারে ডিম্যাট
শেয়ার বাজারের লেনদেন ব্যবস্থার চালচিত্রটাই বদলে দিয়েছে ডিমেটিরিয়া-লাইজড বা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। গাদা গাদা কাগজপত্র সামলানোর ঝামেলা নেই। শেয়ার কেনা, বেচা যা-ই করুন, সব ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই হয়ে যায় অনায়াসে। আর লেনদেনের এই সহজ পন্থাতেই মজেছে পণ্য বাজার। কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও চালু হয়ে গিয়েছে ডিম্যাট ব্যবস্থা। অর্থাত্‌ পণ্য হাতে নিতে বা হস্তান্তর করতে আর গুদামে দৌড়তে হবে না। তা করা যাবে ওই অনলাইন অ্যকাউন্টের মাধ্যমেই।

রসিদের রূপান্তর
লগ্নিকারী যে-পণ্য কেনেন, তা তাঁর নামে জমা থাকে গুদামে। পরিবর্তে তাঁকে একটি রসিদ দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ পরে ওই পণ্য বিক্রির সময়ে বা ডেলিভারি নেওয়ার সময়ে ওই রসিদ দেখাতে হয়। সেই রসিদই এ বার পাওয়া যাবে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। অর্থাত্‌ ডিম্যাট ব্যবস্থায়। ওই রসিদ দেখিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পণ্য ফের কেনা বা বেচাও যাবে ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। অতএব কাগজের রসিদ নিয়ে লগ্নিকারীদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা নানা রকম পণ্যের গুদামে ছোটার জমানা প্রায় শেষের পথে।

সুবিধা
• পণ্য খুব তাড়িতাড়ি হাতবদল করা যায়।
• ইচ্ছে হলে পণ্যের কিছু অংশ বিক্রি করা যায়।
• রসিদ চুরি যাওয়া বা হারিয়ে ফেলার ভয় নেই।
জেনে রাখুন
• পণ্যের ডিম্যাট মানে আপনার কেনা পণ্য কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নির্দিষ্ট ভল্ট/গুদাম/হিমঘরে জমা আছে এবং তার প্রমাণ রয়েছে বৈদ্যুতিন ব্যবস্থায় (ডিম্যাট আকারে গুদামের রসিদ)।
• কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সদস্য ও তাঁদের অধীনে যাঁরা পণ্য কেনা-বেচা করছেন, তাঁরা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
• দু’ধরনের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট হয়। পুল অ্যাকাউন্ট ও বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট। কমোডিটি এক্সচেঞ্জের সদস্যরা খুলতে পারেন পুল অ্যাকাউন্ট। আর বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট লগ্নিকারীরা একা বা যৌথ ভাবে খুলতে পারেন। লগ্নিকারীদের পাশাপাশি বহু কর্পোরেট সংস্থাকেও এই অ্যাকাউন্ট খুলতে দেখা যায়।
• আপনাকে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহ্যয্য করবেন ডিপি (ডিপোজিটরি পার্টিসিপ্যান্ট)। ইনি এজেন্ট। ক্রেতার ইচ্ছে অনুযায়ী পণ্য হস্তান্তরের কাজ করেন ডিপি।
• অ্যাকাউন্ট খোলা উচিত এমসিএক্স ও এনসিডিইএক্স-এর মতো পণ্য বাজার অনুমোদিত প্রায় ১০০টি ডিপজিটরি পার্টিসিপ্যান্ট (ডিপি) সংস্থার কাছে। তবে প্রতিটি ডিপি-কেই ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপজিটরি লিমিটেড (এনএসডিএল) এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি সার্ভিসেস ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিডিএসএল) স্বীকৃত হতে হয়। না হলে তারা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার অধিকার পায় না।
• অ্যাকাউন্ট খুলতে ডিপি-র কাছে কমোডিটি ডিপোজিট ফর্ম পূরণ করতে হবে। এর সঙ্গে জমা দিতে হবে কেওয়াইসির (নো ইওর ক্লায়েন্ট) তথ্য।
• ফিউচার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে পণ্যের কেনা-বেচা চালানো যায় একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে আর এক জনের অ্যাকাউন্টে। অনেকটা ব্যাঙ্কের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যটিতে টাকা বা চেক পাঠানোর মতো।
• ওই অনলাইন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই ডিপি-রা হিসেব রাখেন, কার হাতে কতটা পণ্য রয়ে গেল, কে কতটা হস্তান্তরিত করেছেন ইত্যাদি।
• এখন যে-সমস্ত পণ্যের রসিদ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট মারফত লেনদেন হয়, সেগুলির মধ্যে আছে সোনা, রুপো, ইস্পাত, ছোলা, আলু, চিনি, ধনে, ছোট এলাচ, হলুদ, গোলমরিচ, সোয়াবিন বীজ, লঙ্কা ইত্যাদি।
• পণ্য পচনশীল হওয়ার কারণে নিয়মিত লেনদেন না-চালালে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর সংশ্লিষ্ট ডিম্যাটের গুরুত্ব থাকে না।
• ডেলিভারি বা ডিম্যাট ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ জানতে মন দিয়ে পড়ুন এক্সচেঞ্জের চুক্তিপত্র।
নয়া জীবন বিমা
বাজারে নতুন জীবন বিমা প্রকল্প এনেছে এডেলওয়েজ টোকিও লাইফ ইনশিওরেন্স। সংস্থার দাবি, এই এনডাওমেন্ট প্রকল্পে এক বার মাত্র প্রিমিয়াম দিলে মেয়াদ শেষে তার ১০গুণ রিটার্ন পাওয়া যাবে। পলিসিটির সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর। ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে। তার পর ২৫ লক্ষ টাকা এবং তার বেশি প্রিমিয়াম দেওয়া যাবে। এটি থেকে ঋণ নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। চাইলে এক বছর পরেই প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। ২ বছর পরে তা বন্ধ করলে ৫০% ম্যাচিওরিটি বেনিফিট এবং প্রিমিয়ামের ৮০% টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। ৫ বছর পরে প্রকল্প বন্ধ করলে ৬৩% ম্যাচিওরিটি বেনিফিট ও প্রিমিয়ামের ৯০% টাকা ফেরত পাবেন বিমাকারী। আয়কর আইনের ৮০সি এবং ১০ (১০ডি) ধারায় করছাড়ের সুবিধাও রয়েছে।
পণ্য নিতে চাইলে?
এমন হতেই পারে যে, আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে জমা থাকা পণ্যের পুরোটা বা তার একাংশ হাতে নিতে (ডেলিভারি) চান আপনি। সেই পথও খুব জটিল নয়। ডিম্যাট থেকে পণ্য ভাঙিয়ে নেওয়াকে বলা হয় পণ্য রিমেটিরিয়ালাইজেশন। কী ভাবে তা করতে হবে জেনে নিন—
• ফিজিক্যাল ডেলিভারি রিকোয়েস্ট ফর্ম-এর মাধ্যমে কতটা পণ্য হাতে নিতে (ডেলিভারি) চান, সেটা জানান।
• আপনার আর্জি ডিম্যাট এজেন্টের কাছে পৌঁছে যাবে অনলাইনেই।
• ওই এজেন্ট অ্যাকাউন্টহোল্ডার, আপনার সই-সহ যাবতীয় তথ্য পণ্য গুদামে পাঠাবেন। যাতে তারা পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে।
• এই বিষয়ে ডিপি-র অনুমতিপত্রও আপনাকে জমা দিতে হবে গুদামে।
• গুদাম ফিজিক্যাল ডেলিভারি রিকোয়েস্ট ফর্মে দেওয়া বিস্তারিত তথ্য এবং আপনার সম্পর্কে ডিম্যাট এজেন্টের পাঠানো তথ্য দেখে সন্তুষ্ট হলে পণ্য ডেলিভারি করবে।
• কোথায় এবং কী পদ্ধতিতে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে, তা উল্লেখ করা থাকবে পণ্য সম্পর্কে এক্সচেঞ্জ থেকে দেওয়া নথিতেই।

ডিম্যাটের সাত-সতেরো
• ডিম্যাট খুলে দেওয়ার জন্য অনুমোদিত ডিপি হিসেবে ১০০টি সংস্থার তালিকা আছে বিভিন্ন কমোডিটি এক্সচেঞ্জে। এদের কাছেই খোলা উচিত ওই অ্যাকাউন্ট।
• গুদামের কাগজের রসিদ ডিম্যাট ব্যবস্থায় বদলে নিতে ডিপি-র কাছে কমোডিটি ডিপোজিট ফর্ম পূরণ করতে হবে লগ্নিকারীকে।
• ওই অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলে গেলে সেখানেই দেখা যাবে কতটা পণ্য আপনার হাতে থাকছে এবং কতটা বেচে দিয়েছেন।
• শেয়ার বাজারে লেনদেনের জন্য খোলা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট পণ্য বাজারে ব্যবহার করতে পারবেন না। এখানে পণ্য রাখার জন্য আলাদা ডিম্যাট লাগবে।
• তবে মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে যদি আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে থাকে, তা হলে সেটি ন্যাশনাল স্পট এক্সচেঞ্জ লিমিটেডেও ব্যবহার করতে পারবেন।
• লগ্নিকারীদের থেকে অ্যানুয়াল মেনটেনেন্স চার্জ নেন ডিপিরা। অনেক সময়ে পণ্য কেনা-বেচা বাবদও ফি দিতে হয়।

লেখক: এমসিএক্স স্টক এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট,
(মতামত ব্যক্তিগত)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.