|
|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
রং দিয়ে যায় চেনা
ছোটবেলায় গোঁফ দিয়ে মানুষ চেনার কথা পড়েছি।
এ বার জানলাম রং দিয়ে ফান্ড চেনার ফান্ডা।
বললেন নীলাঞ্জন দে |
|
ট্রাফিকে
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। তিতিবিরক্ত হয়ে সিগন্যালের রং সবুজ হওয়ার অপেক্ষায় সেকেন্ড গোনা। এমন ঘটনা তো রোজই ঘটে জীবনে। অথচ হাজারো যানবাহনের ভিড় ঠেলে সাবধানে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াই কিন্তু ওই রঙের প্রধান লক্ষ্য।
ভাবছেন মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে আলোচনা করতে বসে ট্রাফিক লাইট নিয়ে পড়লাম কেন? তা হলে বলি, ট্রাফিকের মতো এ বার থেকে মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুঁকির বিষয়টি যাচাই করতেও শুরু হতে চলেছে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার। তবে লাল, সবুজ বা হলুদ নয়। তার রং হবে নীল, হলুদ ও খয়েরি। আগামী জুলাই থেকেই ফান্ডের দুনিয়ায় যা দেখতে পাবেন আপনি।
সেবি-র প্রস্তাব
ফান্ডের ক্ষেত্রে রং ব্যবহারের বিষয়টি জানতে হলে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) লগ্নিকারীদের ‘সঠিক’ মিউচুয়াল ফান্ড কেনার সুবিধা দিতে এই রং ব্যবহারের প্রস্তাব আনে। কারণ হিসেবে তুলে ধরে, অনেক সময়েই নিজস্ব চাহিদা না-বুঝে লগ্নিকারীর ফান্ড কেনার বিষয়টি। এর ফলে এক দিকে যেমন লগ্নিকারীর ফান্ড কেনার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না, আবার তাঁকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়তে হয়। এই ঘটনা আটকাতে এবং ফান্ডের ঝুঁকি সম্পর্কে লগ্নিকারীদের সচেতন করে তুলতে রং ব্যবহারের প্রস্তাব এনেছিল সেবি। ফান্ড চিহ্নিতকরণ সম্পর্কে পরামর্শ দিতে একটি কমিটিও গঠন করে তারা।
|
|
কমিটির সুপারিশ
কমিটির প্রস্তাব অনুসারে ফান্ডে বিনিয়োগে সহায়তা করতে ঝুঁকির তারতম্য অনুসারে তিনটি রং ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়।
নীল- কম ঝুঁকি
হলুদ- মাঝারি ঝুঁকি
খয়েরি- বেশি ঝুঁকি
জুলাই থেকেই প্রতিটি ফান্ডে এই রং ব্যবহার শুরু হবে। বাজারে চালু থাকা ফান্ড তো বটেই, যেগুলি আগামী দিনে বাজারে আসবে, সেগুলিতেও রং দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে ঝুঁকি।
ফান্ডের রং-বাজি
আসুন বোঝার সুবিধার জন্য আমরা তিনটি আলাদা ফান্ডের মধ্যে তুলনা করি। এই বিভাজন হয়তো অনেকটাই সরল মনে হবে, কিন্তু তা দিয়েই আমরা বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করব |
|
|
|
বেশি ঝুঁকি |
মাঝারি ঝুঁকি |
কম ঝুঁকি |
|
বেশি ঝুঁকি (শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত ফান্ড): যে-সব লগ্নিকারী বেশি ঝুঁকি নিতে স্বচ্ছন্দ, এই ফান্ড তাঁদের জন্য। এতে লগ্নিকারীরা বাজারের ওঠা-পড়া সামলে লগ্নিতে পিছপা হন না। দীর্ঘ মেয়াদে ভাল রিটার্নের কথাও এঁদের মাথায় থাকে। এই ফান্ডের রং খয়েরি।
মাঝারি ঝুঁকি (ইনকাম ফান্ড): দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মিত আয় যাঁদের লক্ষ্য, অথচ বেশি ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক নন, তাঁদের প্রয়োজন মেটাতে তৈরি এই ফান্ড। যার রং হলুদ।
কম ঝুঁকি (লিকুইড ফান্ড): স্বল্প মেয়াদে ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নন, এমন লগ্নিকারীর পছন্দের গন্তব্য হতে পারে এই ফান্ড। এতে নিয়মিত টাকা আসার সম্ভাবনা থাকে। যার রং হবে নীল।
কমিটির প্রস্তাব মেনে সেবি যে-নির্দেশগুলি দিয়েছে, আসুন তার উপর এক বার চোখ বুলিয়ে নিই
• রংগুলি যাতে সহজেই লগ্নিকারীর চোখে পড়ে, সে রকম জায়গাতেই তা ব্যবহার করতে হবে।
• প্রতিটি রঙের ব্যাখ্যা স্পষ্ট লেখা থাকতে হবে।
• বাজারে ফান্ডের প্রথম ইস্যু এলে, আবেদনপত্রের প্রথম পাতাতেই ওই ফান্ডের উপযুক্ত রং দেখাতে হবে।
• বিজ্ঞাপনেও যেন রংগুলি স্পষ্ট বোঝা যায়।
|
মনে রাখুন |
• প্রতিটি রং-এর গুরুত্ব বুঝে নিন আগেই।
• ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা মাপার কোনও মাপকাঠি হয় না। এক জনের কাছে যা বেশি ঝুঁকি, অন্যের কাছেই তা কম ঝুঁকি হতে পারে। তাই আগে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করুন।
• আপনার ফান্ডের রং বুঝতে অসুবিধা হলে, বেশি জটিলতার মধ্যে যাবেন না। বরং সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। |
|
রং দেখার আগে...
প্রত্যেক লগ্নিকারীই বয়স, আয়, খরচ ও অন্যান্য বিষয়ের বিচারে একে অপরের থেকে আলাদা। আর এই সব মিলিয়ে তৈরি হয় তাঁর লগ্নির ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা। সে কথা মাথায় রেখেই তাঁকে সম্পদ তৈরিতে মন দিতে হয়।
মিউচুয়াল ফান্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর লগ্নির ক্ষমতাকেই মাপকাঠি হিসেবে ধরতে হবে। দেখতে হবে তাঁর চাহিদা কী? নিজেকেই প্রশ্ন করতে হবে, আমি কি দীর্ঘ দিন ধরে নিয়মিত আয় পেতে চাই, না কি অল্প সময়ে ঝুঁকি নিয়ে বেশি সম্পদ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য? অথবা স্বল্প মেয়াদের কম ঝুঁকির পণ্যই আপনার বেশি পছন্দের? দেখবেন প্রত্যেকের উত্তরই আলাদা।
উদাহরণ: একটা সহজ উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। ধরুন, এক জন প্রবীণ নাগরিক একটি ফান্ডে লগ্নি করতে চান। ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও চাহিদা বিচার করলে বোঝা যায়, এই সময়ে তাঁর নিয়মিত আয় প্রয়োজন। তাই তাঁর শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত বেশি ঝুঁকির ফান্ডের প্রয়োজন নেই। বরং, ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডই উপযুক্ত। বিশেষজ্ঞদেরও সেই পরামর্শ দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অনেক সময়েই তা হয় না।
অতঃকিম?
বিশেষজ্ঞের সঠিক পরামর্শ না-পাওয়াই হোক, বা না-বুঝে লগ্নির পথে পা বাড়ানোই হোক উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতি বিনিয়োগকারীর। কোন কারণে ভুল ফান্ডে টাকা ঢালছেন তিনি, সে বিতর্কে না-গিয়ে বলতে পারি, এ ক্ষেত্রে আখেরে তাঁর লগ্নির উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে। তাই এক-নজরে ফান্ডের চরিত্র কিছুটা হলেও যাতে আন্দাজ করা যায়, সেই ভাবনা থেকেই রং চালুর এই প্রস্তাব। ওই প্রবীণ নাগরিকও যাতে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডই কিনতে পারেন, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যই পূরণ করতে চায় শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি।
|
লেখক: উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|