|
|
|
|
|
|
দ্বিতীয় বাড়িতে কর |
ছাদ ছাড়াও আর একটি
সম্পত্তি বাড়াতে আরও এক বা একাধিক ফ্ল্যাট কিনে
রাখলে
খারাপ হয় না।
তবে জেনে রাখুন, তালাবন্ধ
করে
ফেলে রাখলেও
সেগুলির জন্য কর-সহ
বিভিন্ন খরচ
কিন্তু বইতেই হবে। জানাচ্ছেন অমিতাভ গুহ সরকার |
|
|
বেশ কয়েক বছর হল, লগ্নির জায়গা হিসেবে স্থাবর সম্পত্তি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ একটাই, অতি দ্রুত বাজার দর বৃদ্ধি। ধনীরা তো বটেই, মধ্যবিত্তদের মধ্যেও অনেককে দেখা যাচ্ছে, প্রথমটির পর দ্বিতীয় ফ্ল্যাট কেনার তোড়জোড় করতে। প্রথমটি নিজের বসবাস করার জন্য। দ্বিতীয়টি লগ্নির জায়গা হিসেবে। পৈতৃক বাড়ি যাঁদের আছে, তাঁদেরও অনেকে ফ্ল্যাট কিনছেন এখানে-ওখানে।
এই কারণেই অনেক বহুতলে দেখা যায় ফ্ল্যাট অনেক, কিন্তু বাসিন্দা কম। পরে চড়া দাম পেলে বিক্রি করে দেওয়া হবে, এটাই লক্ষ্য। জমি-ফ্ল্যাটে এই ভাবে লগ্নি করে লাভ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার ঝক্কিও কম নয়। বিক্রি না-করা পর্যন্ত থাকবে নিয়মিত খরচের ধাক্কাও। বসবাস করা না-হলেও। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্পত্তি করার আগে ব্যাপারগুলি জেনে রাখা ভাল। একনজরে দেখে নেব ঝুটঝামেলা ও দায়দায়িত্ব কী কী।
• ফ্ল্যাট কেনার আগে যে-জমিতে ফ্ল্যাট তৈরি হবে, তার মালিকানা বা স্বত্ব সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে হবে। দেখতে হবে মালিকানার ব্যাপারে যেন কোনও ত্রুটি না-থাকে। বড় প্রকল্পগুলিতে কোনও কোনও ব্যাঙ্ক অথবা গৃহঋণ সংস্থা সার্চ করিয়ে থাকে। এটা করা হয়ে থাকলে খানিকটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।
• দেখে নিতে হবে নির্মাণকারী সংস্থার আকার, অতীত সুনাম এবং অভিজ্ঞতার দিকগুলি। সংস্থাটি লিমিটেড কোম্পানি হলে ভাল হয়। এদের তৈরি পুরনো কোনও প্রকল্প দেখলে তাদের নির্মাণের মান সম্পর্কে আন্দাজ হবে। কথা বলা যেতে পারে পুরনো কোনও ক্রেতার সঙ্গেও।
• নির্মাণ চলাকালীন মাঝেমধ্যেই তদারকি করতে হবে। দেখতে হবে যে-সমস্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না। এই সময়ে নজর না-দিলে পরে সমস্যা হতে পারে।
• ফ্ল্যাট কেনার সময়ে শুধু মাত্র ফ্ল্যাট এবং পার্কিংয়ের দামের কথা মাথায় রাখলে চলবে না। সঙ্গে ধরতে হবে স্ট্যাম্প ডিউটি এবং রেজিস্ট্রেশনের খরচও। দাম ২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে হলে স্ট্যাম্প ডিউটি পড়বে ৬%। এর বেশি হলে ৭%। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন বাবদ খরচ পড়বে ১.১%। থাকবে উকিলের খরচও। বাজেট করার সময়ে এই সব কিছুই হিসাব করতে হবে। |
|
• কোনও নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনলে ৩.০৯% হারে দিতে হবে পরিষেবা কর। ‘রি-সেল’ ফ্ল্যাট কিনলে অবশ্য এই কর দিতে হবে না। ছোট আকারের প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই কর নাও দিতে হতে পারে।
• ফ্ল্যাট নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে ছুটতে হবে মিউটেশনের জন্য। বিদ্যুত্ সংযোগ পাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।
• ফ্ল্যাটে যদি নাও থাকেন, তবুও প্রতি মাসে টাকা গুনতে হবে মেন্টেন্যান্স বাবদ। দিয়ে যেতে হবে পুরসভার করও। ফ্ল্যাটের ভিতরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকবে নিজের।
• ফ্ল্যাট ভাড়া দিলে ভাড়া বাবদ আয় যুক্ত হবে আপনার অন্যান্য আয়ের সঙ্গে। এবং তার উপর নির্ধারিত হারে দিতে হবে আয়কর। গৃহসম্পত্তি সূত্রে আয় থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায় খরচ বাবদ।
• আপনার যদি একের বেশি গৃহসম্পত্তি থাকে, তবে তার মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে নিজের বাসগৃহ হিসাবে। এই সম্পত্তির উপর আপনাকে কোনও আয়কর দিতে হবে না। অন্য বাড়ি বা ফ্ল্যাট যদি নাও ভাড়া দেওয়া হয়, তা হলেও ওই অঞ্চলে তার কী ভাড়া হতে পারে (ফেয়ার রেন্ট) তা আপনার আয় হিসাবে ধরা হবে (ডিমড ইনকাম) এবং তা আপনার অন্যান্য আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে করযোগ্য আয় হিসাব করার জন্য। একের বেশি প্রত্যেকটি ফ্ল্যাট বা বাড়ির এই ভাবে মূল্যায়ন করা হবে এবং তার উপর আয়কর ধার্য হবে।
•একের অধিক গৃহসম্পত্তি থাকলে তা সম্পদ করের (ওয়েলথ ট্যাক্স) আওতায় এসে যেতে পারে, যদি নিট সম্পত্তির মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি হয়। সম্পত্তির মূল্য এর বেশি হলে তার উপর সম্পত্তিকর ধার্য হবে ১ শতাংশ হারে।
• করের বোঝা চাপবে ফ্ল্যাট বিক্রি করলেও। কেনার তিন বছরের মধ্যে বিক্রি করে কোনও লাভ হলে লাভের পুরোটাই যোগ হবে আপনার অন্যান্য আয়ের সঙ্গে এবং তার উপর দিতে হবে প্রযোজ্য হারে কর। কেনার পর তিন বছর ধরে রাখলে তা দীর্ঘকালীন মূলধনী সম্পদ হিসাবে গণ্য হবে এবং তার উপর পাওয়া যাবে বিশেষ হারের সুবিধা। পাওয়া যাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি সূচকের (ইনফ্লেশন ইনডেক্স) সুবিধাও। লাভের টাকা ৬ মাসের মধ্যে ৩ বছর মেয়াদি ক্যাপিটাল গেইন্স বন্ডে লগ্নি করলে লাভের উপর আর কোনও কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। করছাড়ের আরও একটি রাস্তা আছে। ফ্ল্যাট-বাড়ি বিক্রি বাবদ লাভের টাকা দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তরের এক বছর আগে অথবা দু’বছরের মধ্যে যদি কোনও গৃহসম্পত্তি কেনা হয়, অথবা তিন বছরের মধ্যে কোনও গৃহসম্পত্তি নির্মাণ করা হয়, তবে ওই লাভের উপর কোনও কর ধার্য হয় না।
অর্থাত্ দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তি কেনার সঙ্গে সঙ্গে আপনার মাথায় ঢুকবে নানা দুশ্চিন্তা। চাপবে খরচের বোঝাও। এই সব ঝক্কি সামলাতে পারলে তবেই স্থাবর সম্পত্তি বাড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। সব জায়গায় সম্পত্তির দাম একই হারে বাড়েনি। কিন্তু নানা খাতে খরচ থাকবেই। দেখতে হবে, লাভের গুড় যেন পিঁপড়েয় খেয়ে না যায়! |
লেখক: ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|