আয়কর রিটার্ন
জেনে নিন কোন রিটার্ন-ফর্মটি আপনার জন্য
মি দেখেছি সমাজের একটা বড় অংশের মধ্যে আয়কর নিয়ে প্রবল ভীতি কাজ করে। যে কারণে বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারতে রিটার্ন জমার হার টেনেটুনে ৩ শতাংশও নয়। অথচ করের হার কিন্তু আগের দশকের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। আসলে প্রকৃত সমস্যা হল বিষয়টা না-জানা। এই পর্বে সেই জানানোর কাজটাই করব আমি। গত ৩১ র্মাচ শেষ হওয়া ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের আয়কর মেটাতে চলতি ২০১৩-’১৪ কর-বর্ষে (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার) সরকারের কাছে যে-রিটার্ন জমা দিতে হবে, আলোচনা করব সেটা নিয়ে।

কার জন্য কোন ফর্ম
অনেকেই বুঝতে পারেন না, আয়কর দিতে গেলে কোন রিটার্ন ফর্ম জমা করতে হবে তাঁকে। কিন্তু রিটার্ন জমার গোড়ার কথা তো এটাই। আপনাকে কোন ফর্মটি পূরণ করে জমা দিতে হবে, সেটা জেনে গেলেই তো অর্ধেকের বেশি কাজ হয়ে গেল। সেটাই তা হলে আগে জেনে নিই।

ব্যক্তি আয়করদাতার জন্য
• আইটিআর ১ (সহজ): আপনার যদি বেতন/ পেনশন/ পারিবারিক পেনশন/ নিজের একটি বাড়ি/ অন্যান্য সূত্র থেকে (লটারি বা ঘোড়দৌড় জিতে আয় ছাড়া) আয় হয়, তবে এই রিটার্ন ফর্মটি পূরণ করে জমা দিতে হবে।
• আইটিআর ২: যে আয়ে কর দিতে হয় না (ডিভিডেন্ড, কৃষি থেকে আয় ইত্যাদি) তা যদি ৫০০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে রিটার্ন জমা দিতে এই ফর্ম লাগবে। আপনি লটারি বা ঘোড়দৌড় জিতে রোজগার করলেও ভরবেন এই ফর্মটিই।
• আইটিআর ৩: যদি আপনি কোনও অংশীদারি সংস্থার (পার্টনারশিপ ফার্ম) একজন অংশীদার হন এবং আলাদা করে নিজের ব্যবসা না-থাকে বা স্বাধীন পেশাদার হিসেবে কাজ না-করেন, তা হলে আপনি নেবেন এই ফর্মটি।
• আইটিআর ৪: নিজের ব্যবসা থাকলে কিংবা পেশাদার হিসেবে স্বনির্ভর হলে এবং সেখান থেকে মুনাফা করতে করলে, আপনার ফর্ম এটি। আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মতো স্বাধীন পেশাদারদের এটিই পূরণ করতে হবে।
• আইটিআর ৪এস (সুগম):
আপনার যদি ছোট ব্যবসা থাকে এবং মোট ব্যবসা (টার্নওভার)/ বিক্রি (সেল)/ হাতে আসা মোট টাকার পরিমাণ (গ্রস রিসিট) বছরে এক কোটি টাকা না-পেরোয়, তা হলে আয়কর আইনের ৪৪এডি ধারায় আপনি অনুমানিক আয়ের ভিত্তিতে কর দেওয়ার সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার আয় বা মুনাফা মোট ব্যবসার অঙ্কের ৮ শতাংশের সমান ধরে নিয়ে তার উপর কর হিসাব হবে। এবং আপনাকে পূরণ করে জমা দিতে হবে এই আইটিআর ৪এস (সুগম) ফর্মটি।
যদি পণ্য পরিবহণের ব্যবসা করেন এবং হাতে ১০টির বেশি মালপত্র পরিবহণের গাড়ি না-থাকে, তা হলে আয়কর আইন মাফিক ব্যবসাটি ছোট বলেই ধরা হয়। তখন ৪৪এ ই ধারায় আনুমানিক আয় ধরে কর হিসাব করা যায়। প্রতিটি ভারী গাড়ির জন্য আয় ধরা হয় ৫০০০ টাকা। আর অন্যান্য গাড়ির জন্য ৪৫০০ টাকা। এই কর দিতেও আইটিআর ৪এস (সুগম) রিটার্ন ফর্মই জমা দিতে হবে।
অংশীদারি সংস্থার জন্য
আইটিআর ৫: পার্টনারশিপ ফার্মকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে গেলে পূরণ করতে হবে এই ফর্মটি।

কোম্পানি করদাতার জন্য
আইটিআর ৬: যে কোনও কোম্পানিকে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য এই ফর্ম পূরণ করতে হয়।

দাতব্য ট্রাস্ট, সোসাইটির জন্য
আইটিআর সেভেন: দাতব্য প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট, সোসাইটি ইত্যাদি এবং রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, চিকিত্‌সা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির জন্য এই ফর্ম। তারা কাগজের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে পারে। আবার চাইলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে (ই-ফাইল) ডিজিটাল সই করেও জমা দিতে পারে। এ ছাড়া, আরও একটি পদ্ধতি আছে। ইন্টারনেটে রিটার্ন জমা দেওয়ার পর প্রদত্ত তথ্যের প্রমাণ (ভেরিফিকেশন) হিসেবে আইটিআর V ফর্ম পূরণ করে পাঠিয়ে দিতে পারে বেঙ্গালুরুতে, আয়কর দফতরের সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টারে (সিপিসি)।

নেটে হেঁটে রিটার্ন জমা
রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে আলোচনার শীর্ষে এখন ‘ই-ফাইলিং’। অনলাইনে (ইন্টারনেট মারফত) রিটার্ন জমার ব্যবস্থা এটি। অর্থাত্‌ সামনে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে বাড়িতে বসেই মাউস ক্লিকে কেল্লা ফতে। এ সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে রাখুন—
১) রিটার্ন জমার ঝক্কি অনেক কম। জমার পর প্রসেসিংয়ে আগের থেকে অনেক কম সময় লাগে। রিফান্ডও পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি।
২) আপনি যদি ব্যক্তি আয়করদাতা হন এবং ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষে আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তবে আপনাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই রিটার্ন জমা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি ডিজিটাল সই করে তা জমা দিতে পারেন। কিংবা ই-ফাইলিংয়ের পর আইটিআর V ফর্ম ভেরিফিকেশন হিসেবে সিপিসি-তে পাঠিয়ে দিতে পারেন।
৩) যদি ৪৪এবি নম্বর ধারায় আপনাকে আয়কর অডিট করাতে হয় এবং আইটিআর ফোর রিটার্ন ফর্মটি আপনার জন্য উপযুক্ত হয়ে থাকে, তা হলে ডিজিটাল সই করেই রিটার্ন ই-ফাইলিং করতে হবে।
৪) পার্টনারশিপ ফার্ম এবং কোম্পানিকেও ডিজিটাল সই করে ইন্টারনেটে রিটার্ন জমা দিতে হয়।
৫) যদি আপনি ভারতের নাগরিক হন এবং দেশের বাইরে আপনার আর্থিক সম্পদ থাকে বা সেখানে কোনও ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, কিংবা বিদেশে অবস্থিত কোনও অ্যাকাউন্টে সই করার অধিকার থাকে, তা হলে আপনি ডিজিটাল সই করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে পারেন। আবার ই-ফাইল করার পর আইটিআর V ফর্ম সিপিসি-তে পাঠিয়ে প্রদত্ত তথ্যের প্রমাণ দিতে পারেন।

সম্পত্তির হিসাব
আয় যদি বছরে ২৫ লক্ষ টাকার বেশি হয়ে থাকে, তা হলে আপনি উচ্চবিত্ত স্তরে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে আইটিআর ৩ কিংবা আইটিআর ৪, যে রিটার্ন ফর্মই ভরুন না কেন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি আলাদা করে দেখিয়ে জমা দিতে হবে। জানাতে হবে, স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ অর্থাত্‌ বাড়ি, জমি ইত্যাদি এবং সেগুলি কত টাকায় কিনেছিলেন এবং অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এবং কত টাকায় কিনেছিলেন। অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে পড়ছে, আর্থিক সম্পদ (ব্যাঙ্কে জমা অর্থ, অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা টাকা, শেয়ার, ঋণপত্র, বিমা প্রকল্প, ঋণ, অগ্রিম দেওয়া অর্থ ও হাতে থাকা নগদ), গয়না, সোনার সম্পদ (বুলিয়ন), প্রত্নতাত্ত্বিক সম্ভার, আঁকা ছবি, ভাস্কর্য বা ওই ধরনের কোনও শিল্পকর্ম, গাড়ি, প্রমোদতরণী (ইয়ট), নৌকো ও বিমান।
মোট সম্পদের বিবরণ দেবেন, সেগুলি কিনতে কত টাকা খরচ হয়েছিল তার হিসাব দাখিল করবেন ও সেগুলির জন্য যদি কোনও ঋণ নেওয়া হয়ে থাকে, সেটাও উল্লেখ করবেন তথ্য জমা দেওয়ার সময়ে। তবে এই নিয়ম শুধু ব্যবসা বা পার্টনারশিপ সংস্থা থেকে যাঁরা আয় করেন, তাঁদের জন্য।

সিপিসি-র ঠিকানা
আপনাকে যদি ডিজিটাল সই ছাড়াই রিটার্ন ই-ফাইল করার অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে আইটিআর V ফর্মটি বেঙ্গালুরুতে আয়কর দফতরের সেন্ট্রাল প্রসেসিং সেন্টারে (সিপিসি) পাঠাতেই হবে। কারণ রিটার্নে দেওয়া তথ্যের প্রমাণ সেটি। সে ক্ষেত্রে যে-দিন আপনি ইন্টারনেট খুলে রিটার্ন ফর্ম পূরণ করে জমা দিয়েছেন, তার ১২০ দিনের মধ্যে আইটিআর V ফর্মটি সিপিসি-তে পৌঁছতে হবে। সাধারণ পোস্ট বা স্পিড পোস্টে পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়
ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট- সিপিসি, পোস্ট ব্যাগ নম্বর ১, ইলেকট্রনিক সিটি পোস্ট অফিস, বেঙ্গালুরু- ৫৬০১০০ (কর্নাটক)

হাতে পাবেন ক’দিন
চাকুরিজীবীদের রিটার্ন জমা দিতে হবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে। নিজের ব্যবসা থাকলে ও তা অডিট না-করাতে হলেও তাই। কিন্তু কোম্পানি, পার্টনারশিপ ফার্ম-সহ কারও আয় যদি অডিটযোগ্য হয় তবে সময় পাওয়া যাবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

লেখক: আইনজীবী ও কর সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.