|
|
|
|
|
|
অর্পণ |
কষ্টের বাড়ি। সারা জীবনের সঞ্চয়। লকারের গয়না। সিন্দুকের চাবি। প্রিয়জনকে সব দিয়ে যেতে
চান ঠিকই। কিন্তু তার জন্য উইলের নিয়ম জানেন তো? মনে করালেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী |
সারা জীবন ধরে তিলে তিলে করা সঞ্চয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগারের টাকায় তৈরি সম্পত্তি। চোখ বোজার পর তার উত্তরাধিকার যেন ঠিক লোকের হাতে বর্তায়, তা তো যে কেউ চাইবেনই। বেঁচে থাকতে যে সব থেকে প্রিয় ছিল, হয়তো তাকে দু’আনা বেশি দিয়ে যেতে চাই আমি। আবার শয্যাশায়ী জেনেও যে-ছেলে কখনও খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি, তাকে হয়তো বঞ্চিতই করতে চাই সম্পত্তির অধিকার থেকে।
কিন্তু শুধু চাইলেই তো হবে না। বেঁচে থাকতে তার বন্দোবস্ত করাও জরুরি। আর আইন মেনে নিজের ইচ্ছেমাফিক সম্পত্তির এই ভাগ-বাটোয়ারা করে যাওয়ার পোশাকি নামই উইল।
আজকের আলোচনায় উইলের অ-আ-ক-খ চেনার চেষ্টা করব আমরা। দেখব, কেন তা করে যাওয়া জরুরি। করার সময়ে কী কী মাথায় রাখা প্রয়োজন। কিংবা উত্তরাধিকারী হিসেবে উইল সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির দখল নিতে ঠিক কী করতে হবে আপনাকে।
উইল কী?
• ‘উইল’ ইংরেজি শব্দ। সোজাসাপ্টা বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় ইচ্ছে।
• তাই উইল হল আইন মেনে তৈরি নথি, যার মাধ্যমে সম্পত্তি (কিংবা সঞ্চিত অর্থ) নিজের ইচ্ছেমতো উত্তরাধিকারী (ছেলে, মেয়ে ইত্যাদি) কিংবা পছন্দের কাউকে দিয়ে যেতে পারি আমি।
• একমাত্র এর মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে নিজের সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়ে যাওয়া সম্ভব। একেবারে স্পষ্ট ভাবে লিখে দিয়ে যেতে পারি, মৃত্যুর পর আমার যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মালিকানা কার হাতে যাবে।
• তবে মনে রাখবেন, উইল কার্যকর হবে উইলকারী মারা যাওয়ার পরই। তিনি বেঁচে থাকতে কখনওই নয়।
লিঙ্গ ভেদ!
যিনি উইল করছেন, কিংবা যিনি সেই সূত্রে সম্পত্তির হকদার হচ্ছেন, আইনের ভাষায় তাঁদের প্রত্যেকেরই আলাদা নাম রয়েছে—
• কোনও পুরুষ উইল করলে, তাঁকে বলা হয় টেস্টেটর।
• উইলকারী মহিলা হলে, তিনি টেস্টারিক্স।
• সম্পত্তির অধিকার যিনি পাবেন, তাঁকে চিহ্নিত করা হয় বেনিফিশিয়ারি হিসেবে।
|
|
করবেন কেন?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারে আবার উইল করার দরকার কী? বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে মাথাব্যথা থাকলে না-হয় তা করার যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু সঞ্চয় বা সম্পত্তি নিজের ছেলে-মেয়েকেই দিয়ে যাব ঠিক করলে, আলাদা ভাবে উইল করার আদৌ প্রয়োজন আছে কি?
আমার উত্তর হল—
• উইল করা থাকলে, মৃত্যুর পরে এমনকী ছেলে-মেয়েদের হাতেও সম্পত্তি হস্তান্তর অনেক নির্ঝঞ্ঝাট হয়। বিশেষত যাঁদের একাধিক ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তাই সময় থাকতে উইল করে গেলে অনেক সময়েই সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিবাদ কিংবা তিক্ততা এড়ানো সম্ভব।
• এমনিতে উইল না-থাকলে, কারও মৃত্যুর পরে নিজেদের মধ্যে সমান ভাবে সম্পত্তি ভাগ করে নিতে পারেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা। কিন্তু যদি মনে করি যে, ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী আমি আমার সঞ্চয় কাউকে বেশি কিংবা কম দিয়ে যাব, তা হলে কিন্তু উইল অবশ্যই জরুরি। মনে করুন, কারও তিন ছেলে। এর মধ্যে বড় দু’জন বাবা-মার দেখাশোনা তো দূর অস্ত্, ব্যবহারটুকুও ভাল করে না। সেখানে ছোটটি তাঁদের যত্ন নেয়। এমনটা হলে, উইল করে ছোট ছেলেকে বেশি (এমনকী পুরো) সম্পত্তির মালিক করে যেতেই পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে অন্যকে বঞ্চিত করা বা কম দেওয়ার কারণ লিখে যাওয়া জরুরি।
• সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত হলে, অনেক সময় কাউকে পুরোপুরি সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাই আমরা। ধরুন, ‘ক’-বাবুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ডিভোর্স হয়নি। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। সেই স্ত্রী থাকেনও ‘খ’-বাবুর সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে স্বামী নিজের অবর্তমানে স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চাইতেই পারেন। আর তা করতে হলে, উইল-ই হাতিয়ার। কারণ, উইল মারফত বঞ্চিত না-করলে, তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সম্পত্তিতে ভাগ দাবি করতেই পারেন।
• তবে মনে রাখবেন, যাঁরা ন্যায্য/ স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী (স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে), তাঁদের সম্পত্তি দিয়ে যেতে না-চাইলে তার কারণও স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে উইলে। তা না-করলে, সেই উইল পরে আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
কোন কাগজে?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, সাধারণ সাদা কাগজে উইল করলে, তা আইনি ভাবে গ্রহণযোগ্য কি না?
উত্তর হল: সাদা কাগজে করা উইল অবশ্যই আইনের মাপকাঠিতে স্বীকৃত। স্ট্যাম্প পেপারে করতে হবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে উইল রেজিস্ট্রি করতে হলে স্ট্যাম্প পেপার লাগবে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করব আমরা।
|
|
দেওয়ার চৌহদ্দি
• যা কিছুর উপর আপনার পূর্ণ মালিকানা আছে, সেই সমস্তই উইল করে কাউকে দিয়ে যেতে পারেন। এই তালিকায় রয়েছে—
ঘর-বাড়ি, জমি, টাকা-পয়সা, গয়না, বাসন, নিজের আঁকা বা সংগ্রহ করা ছবি, বই, রয়্যালটির অর্থ, ব্যাঙ্ক আমানত থেকে আয় ইত্যাদি।
ব্যাঙ্কের লকারে রাখা গয়না বা অন্যান্য সামগ্রীও দিয়ে যেতে পারেন। তবে তা পেতে আদালতে ‘লেটার অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ পেশ করতে হবে উত্তরাধিকারীকে।
• কোনও জিনিসের উপর হয়তো আপনার মালিকানা নেই। শুধু ভোগ-দখলের অধিকার (লাইফ ইন্টারেস্ট/ রাইট অফ রেসিডেন্স) রয়েছে। সেই ধরনের সম্পত্তি কিন্তু উইল করে অন্য কাউকে দিতে পারবেন না।
• যৌথ পরিবারের অবিভক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে নিজের মালিকানার অংশটুকু উইল করতে পারেন।
• লিজের মাধ্যমে পাওয়া জমি বা বাড়িও উইল করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে ওই লিজের মেয়াদ যত দিন, তত দিন পর্যন্তই উত্তরাধিকারী ওই সম্পত্তি ভোগ করতে পারবেন। ধরা যাক, উইল মারফত এমন জমি আপনি হাতে পেলেন, যা ৯৯ বছরের লিজে নেওয়া। এবং তার মধ্যে ৭০ বছর ইতিমধ্যেই কেটে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওই জমি আর ২৯ বছর ভোগ করতে পারবেন আপনি।
আবার ধরুন, লিজের বাড়ি বা জমি কেউ উইল করলেন। কিন্তু তিনি বেঁচে থাকাকালীনই লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। সে ক্ষেত্রে কিন্তু উত্তরাধিকারী আর সেটির মালিকানা পাবেন না।
উইল করার যোগ্যতা
যে-কেউ উইল করলেই কিন্তু তা গ্রাহ্য হয় না। এর জন্যও নির্দিষ্ট নিয়মকানুন রয়েছে। যেমন—
• উইলকারীকে প্রাপ্তবয়স্ক (অন্তত ১৮ বছর) হতে হবে।
• তিনি নির্বোধ কিংবা মানসিক ভারসাম্যহীন হলে চলবে না। তবে কেউ যদি এমন হন যে, তিনি পরে মানসিক ভারসাম্য হারালেও উইল করার সময়ে সুস্থ ছিলেন, তা হলে সেটি আইনের চোখে গ্রাহ্য হবে।
• দৃষ্টি, বাক্ কিংবা শ্রবণশক্তি না-থাকলেও উইল করতে পারেন। কিন্তু উইলের পরিণতি সম্পর্কে তাঁকে পুরোদস্তুর ওয়াকিবহাল হতে হবে।
• এ বিষয়ে বিশদ জানতে ১৯২৫ সালের ইন্ডিয়ান সাকসেশন আইনের ৫৯ নম্বর ধারা দেখে নিতে পারেন।
পাল্টাতে পারি?
• হ্যাঁ। নিজের ইচ্ছেমতো যত বার খুশি উইল বদলাতে পারেন।
• সব থেকে শেষে (জীবত্কালের শেষ তারিখে) যে উইলটি করবেন, জানবেন সেই অনুযায়ীই ভাগ-বাটোয়ারা হবে আপনার সম্পত্তি।
• যে কারও পক্ষেই উইল বদলানো খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলায়। সেই অনুযায়ী পাল্টাতে পারে উইলও। হয়তো দুই ছেলেকেই সমান ভাবে সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। সেই অনুযায়ী তৈরি ছিল উইলও। কিন্তু দেখলেন, আর্থিক ভাবে বড় ছেলের অবস্থা বেশ নড়বড়ে। ছোটটি সেই তুলনায় অনেক ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত। তখন উইল বদলে বড়জনকে একটু বাড়তি পয়সাকড়ি দেওয়ার কথা ভাবা অন্যায় নয়।
সাক্ষী রাখুন
• উইল সইয়ের সময়ে সাক্ষী রাখতে ভুলবেন না। মনে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখা কিন্তু বাধ্যতামূলক।
• ওই সাক্ষীকে নিজের চোখে দেখতে হবে যে, আপনি উইল সই করছেন।
• দু’তিন জন সাক্ষী থাকা বাঞ্ছনীয়।
• এঁদের মধ্যে এক জন ডাক্তার আর এক জন আইনজীবী থাকলে খুবই ভাল। কারণ, উইল করার সময়ে আপনি যে সুস্থ মস্তিষ্কে ছিলেন, তা প্রমাণে ডাক্তারের বয়ান গুরুত্ব পেতে পারে। তেমনই আইনি জটিলতায় কাজে আসতে পারে আইনজীবীর সাক্ষ্য।
রেজিস্ট্রির ভাল-মন্দ
উইল রেজিস্ট্রি (নথিভুক্ত) করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে তা করলে, কিছু বাড়তি সুবিধা অবশ্যই আছে। যেমন—
• সে ক্ষেত্রে উইলের একটি কপি থেকে যাবে রেজিস্ট্রারের দফতরে। ফলে কেউ যদি অসত্ উদ্দেশ্যে উইল বিকৃত (ট্যাম্পার) করে, তা হলে তাঁর পার পাওয়া শক্ত হবে।
• উইল হারিয়ে গেলে কিংবা কোনও কারণে (জলে বা পোকায় কেটে) নষ্ট হয়ে গেলে, রেজিস্ট্রারের দফতর থেকে সার্টিফায়েড কপি পাওয়া যাবে।
• লিজহোল্ড সম্পত্তির ক্ষেত্রে উইল রেজিস্ট্রি করা থাকলে, প্রবেট পাওয়ার আগেও নাম খারিজ বা মিউটেশন করানো যেতে পারে।
• অসুস্থতার কারণে উইলকারী অফিসে যেতে না-পারলে, রেজিস্ট্রারকে বাড়িতে এনেও উইল রেজিস্ট্রি করতে পারেন।
উইল রেজিস্ট্রির এই সব সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনই তার অসুবিধাও জেনে রাখা ভাল—
• এমনিতে উইল বদলানো বেশ সহজ। কিন্তু তা রেজিস্ট্রি করা থাকলে, সেটি বাতিল করার জন্য বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে।
• এক বার উইল নথিবদ্ধ করা হলে, যত বার পাল্টাবেন, তত বারই কিন্তু তা নতুন করে রেজিস্ট্রি করতে হবে।
তাই যদি উইল করে মনে হয়, খুব কিছু না-ঘটলে আর তা বদলাব না, তবেই সেটি রেজিস্ট্রি করা উচিত।
|
|
এগ্জিকিউটর আছে?
• এগ্জিকিউটর হলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি উইলটি কার্যকর (এগ্জিকিউট) করবেন।
• এমনিতে এগ্জিকিউটর নিয়োগ বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু করা থাকলে, উইল কার্যকর করতে সুবিধা হয়।
• উইলকারী নিজেই এগ্জিকিউটর নিয়োগ করেন। এবং তিনি তা করেন উইল করার সময়েই। এ জন্য তিনি বেছে নেন নিজের বিশ্বস্ত কাউকে।
• যাঁরা সম্পত্তি পাবেন, তাঁদের কাউকেও এগ্জিকিউটর হিসেবে বাছা যেতে পারে।
• তবে ব্যক্তির বদলে কোনও সলিসিটর ফার্ম (আইনি পরামর্শদানের সংস্থা), কোম্পানি, ট্রাস্ট (অছি পরিষদ) কিংবা ব্যাঙ্কও এগ্জিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত হতে পারে।
• অনেক সময়ে এগ্জিকিউটরের কাজের জন্য পারিশ্রমিকেরও বন্দোবস্ত করে যান উইলকারী।
কাজের তালিকা
আগেই বলেছি, উইলে লিখে যাওয়া ইচ্ছে কার্যকর করাই এগ্জিকিউটরের কাজ। একটু ভেঙে বললে তা মোটামুটি এ রকম—
• উইলের প্রবেট আদালতের কাছ থেকে পাওয়ার বন্দোবস্ত করা। তবে তিনি মারা গেলে বা প্রবেট নিতে গড়িমসি করলে, বেনিফিশিয়ারি নিজেই তা নিতে পারেন।
• সম্পদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলে, তা এক জায়গায় করে তার থেকে প্রথমে উইলকারীর দেনা মেটানো।
অর্থাত্, ব্যাঙ্কের ধার, পুরসভার কর, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি মিটিয়ে বাকি সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তাঁকে।
মাথায় রাখুন
• উইলকারীর মৃত্যুর পর তবেই তো উইল কার্যকর করার প্রশ্ন। তাই যিনি উইল করছেন, এগ্জিকিউটরের বয়স তাঁর থেকে বেশ খানিকটা কম হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
• প্রবেট স্থানীয় আদালতের কাছ থেকে নিতে হবে। তাই এগ্জিকিউটরও সেই এলাকার হলেই সুবিধা।
ট্রাস্ট গড়তেও উইল?
যাঁরা নিঃসন্তান কিংবা যাঁদের সে ভাবে কোনও নিকটাত্মীয় নেই, অনেক সময়ে উইল করে নিজের সম্পত্তি সমাজ- সেবা, ধর্মীয় কাজ কিংবা কল্যাণমূলক প্রকল্পের জন্য দিয়ে যান তাঁরা। সেই অর্থ যাতে ঠিক ভাবে ব্যয় হয়, তা নিশ্চিত করতে উইলের মাধ্যমে ট্রাস্ট (অছি পরিষদ) তৈরি করে দেন তাঁদের অনেকে। আমার মতে, এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। তা হল
আপনার তৈরি অছি পরিষদের সদস্য (ট্রাস্টি) কারা হবেন, তা অনেক ভাবনা-চিন্তার পর ঠিক করুন। এমন প্রতিনিধি বাছুন, যিনি আপনার অবর্তমানেও আপনার স্বপ্নকে সঠিক ভাবে রূপায়িত করবেন।
সটান বাতিল!
উইল করার জন্য কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি আমরা। সেই সব না-মানলে উইল যে আইনের চোখে গ্রাহ্য হবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তা ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উইল পত্রপাঠ বাতিল হতে পারে। যেমন
• যদি প্রমাণিত হয় যে, উইলটি জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে করানো।
• যদি দেখা যায়, উইল করার সময়ে নিজের স্বাধীন চিন্তা প্রয়োগের রাস্তা খোলা ছিল না ইত্যাদি।
• এ নিয়ে বিশদ জানতে ইন্ডিয়ান সাকসেশন আইনের ৬১ নম্বর ধারায় চোখ বোলাতে পারেন।
সটান বাতিল!
উইল করার জন্য কী কী যোগ্যতা থাকতে হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি আমরা। সেই সব না-মানলে উইল যে আইনের চোখে গ্রাহ্য হবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তা ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে উইল পত্রপাঠ বাতিল হতে পারে। যেমন—
• যদি প্রমাণিত হয় যে, উইলটি জোর করে বা ভুল বুঝিয়ে করানো।
• যদি দেখা যায়, উইল করার সময়ে নিজের স্বাধীন চিন্তা প্রয়োগের রাস্তা খোলা ছিল না ইত্যাদি।
• এ নিয়ে বিশদ জানতে ইন্ডিয়ান সাকসেশন আইনের ৬১ নম্বর ধারায় চোখ বোলাতে পারেন।
উইল কিন্তু দান নয়
অনেকেই উইল আর দানপত্রের মধ্যে ফারাক গুলিয়ে ফেলেন। লেখা শেষের আগে বলে রাখি, দু’টো জিনিস কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। কারণ
• কারও নামে উইল করা মানে কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পত্তির মালিক হলেন না। উইলকারী মারা গেলে, তবেই তা তাঁর হাতে আসবে।
• দানের ক্ষেত্রে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। এক জন আর এক জনকে কিছু দান করলে, প্রথম জনের জীবদ্দশাতেই দ্বিতীয় জন তা পেতে পারেন।
|
চেকলিস্ট |
• উইলে সই করেছেন তো? সই ছাড়া কিন্তু উইল অর্থহীন।
• পরে ঝামেলা এড়াতে উইল করার সময়ে অবশ্যই সাক্ষী রাখুন। তাঁদেরও সই নিতে ভুলবেন না।
• বাধ্যতামূলক না-হলেও এগ্জিকিউটর রাখুন। পরে সুবিধা হবে।
• উইলের সূত্রে উত্তরাধিকারী মানেই কিন্তু সম্পত্তি আপনার নয়। তার মালিকানার জন্য আদালতে প্রবেট নেওয়া জরুরি। |
|
প্রবেট-নামা |
• মনে রাখবেন, উইলকারী মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সম্পত্তির মালিকানা বেনিফিশিয়ারি পাবেন না। তা পেতে হলে তাঁকে (কিংবা তাঁর এগ্জিকিউটরকে) প্রবেট নিতে হবে আদালতের কাছ থেকে।
• প্রবেট হল আদালতের সেই সার্টিফিকেট, যার মাধ্যমে প্রমাণ হবে উইলটি গ্রহণযোগ্য (ভ্যালিড)।
• প্রবেট নেওয়ার জন্য প্রথমে নোটিস দিতে হবে সমস্ত উত্তরাধিকারীকে। জানাতে হবে যে, প্রবেট নেওয়া হচ্ছে। যাতে এ নিয়ে কারও কোনও আপত্তি থাকলে, তিনি তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতকে জানাতে পারেন।
• আপত্তি জমা না-পড়লে, সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের উপর কোর্ট-ফি দিয়ে প্রবেট নিতে হবে। বর্তমানে সম্পত্তির মূল্য ১০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হলে, কোর্ট-ফি লাগবে ৫০ হাজার টাকা। তার কম হলে, ফি লাগবে সম্পত্তি মূল্যের আনুপাতিক হারে।
• আসলে প্রবেটের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি-দাওয়া-অভিযোগ শোনার পথ খোলা রাখে আদালত। যাতে ভুল বুঝিয়ে, জোর করে বা অন্য কোনও অন্যায় পথে উইল করানো হয়ে থাকলে, তা নিয়ে আইনি পথে হেঁটে আপত্তি তোলার সুযোগ থাকে। |
|
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
|
|
|
|
|