বিতর্কটা দানা বেধেছিল গত ১৫ মে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ দেওয়ার দিনই।
সোমবার সেই বিতর্ক উস্কে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা নতুন মামলায় অর্ন্তবর্তী নির্দেশ দানের সময়ে আইনজীবী সমরাদিত্য পালের একটি মন্তব্য। তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়লেন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্যবাবু। তাঁদের এ দিনের কথোপকথন নজিরবিহীন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
১৫ মে-র নির্দেশে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন করে ফেলতে হবে। নির্দেশে আরও বলা ছিল, ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের পরস্পরের সহমতের ভিত্তিতে। তার পরেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল জানিয়েছিলেন, প্রধান বিচারপতি সহমতের ভিত্তিতে নির্দেশের যে কথা বলেছেন তা তিনি শুনতে পাননি। দুই পক্ষের সহমতের ভিত্তিতে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নির্দেশ থেকে ওই সহমতের প্রসঙ্গটি ছেঁটে বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে ওই বেঞ্চেই মামলা করে নির্বাচন কমিশন।
এ দিন নির্বাচন কমিশনের নতুন মামলায় প্রধান বিচারপতি তাঁর মৌখিক নির্দেশ পড়া শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সমরাদিত্যবাবু বলেন, “ডিভিশন বেঞ্চ যে নির্দেশটি দিল তা ফের
পড়ে শোনানো হোক।” প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, “আমি যা বলার মাইকে বলেছি। স্পষ্ট করে বলেছি। আপনি কেন শুনতে পেলেন না সেটাই আশ্চর্যের।”
সমরাদিত্যবাবু পাল্টা বলেন, “আপনি অনেক সময়েই মাইক থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে কথা বলেন। এখানে দাঁড়িয়ে সব কথা শোনা যায় না। তাই আপনাকে ফের নির্দেশটি পড়ে শোনানোর জন্য আর্জি জানাচ্ছি। কারণ আমি দেখছি, আদালতে বিচারপতিরা অনেক কথা বলছেন, কিন্তু লিখিত নির্দেশে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।”
সমরাদিত্যবাবু জানান, এ দিন আদালত মৌখিক ভাবে যে নির্দেশ দিলেন তা লিখিত নির্দেশে থাকবে কি না তা জানতেই ফের মৌখিক নির্দেশ শুনতে চাইছেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি এই সময়ে বলেন, “আদালতের উপরে যে আইনজীবীর বিশ্বাস নেই এমনটা আমি আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে কখনও দেখিনি।” সমরাদিত্যবাবু পাল্টা বলেন, “আমি গত ৪৩ বছর সুনামের সঙ্গে হাইকোর্টে, সুপ্রিম কোর্টে ওকালতি করছি। আমিও দেখিনি নির্বাচন কমিশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্থার সমস্যার কথা শুনতেই চাইছেন না বিচারপতি।”
এর পরে অবশ্য তর্কাতর্কি আর বেশি দূর এগোয়নি। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে কোর্ট অফিসার পুনরায় নির্দেশটি পড়ে শোনান। |