বিরোধীদের মনোনয়ন আটকান, নির্দেশ তৃণমূল জেলা সভাপতির
ঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে জেলায় জেলায় রাজনৈতিক হিংসার আবহে নতুন বিতর্ক বাধল বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্যে। বিরোধী প্রার্থীরা যাতে মনোনয়নপত্রই পেশ করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তিনি।
রবিবার রামপুরহাটে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে দলের একটি কর্মিসভায় অনুব্রতবাবু বলেন, “সোমবার থেকে মনোনয়নপত্র পেশের (দ্বিতীয় দফার) দিন শুরু হচ্ছে। আপনারা মনোনয়ন জমা দিন। কিন্তু, কংগ্রেস-সিপিএম আমাদের শত্রু। কাউকে মনোনয়ন ফাইল করতে দেবেন না। দরকার হলে আমাকে ডাকবেন। আমি আপনাদের পাশে থাকব!” অনুব্রতবাবুর বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, অনুব্রতবাবুর মন্তব্য উস্কানিমূলক। এতে হিংসা আরও বাড়বে। বিব্রত শাসক দলের রাজ্য নেতৃত্বও। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে অনুব্রতবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চান। তাঁদের মতে, উনি যা বলেছেন, তা দলের বক্তব্য নয়। দল তা অনুমোদনও করছে না।
রামপুরহাটের দলীয় সভায় অনুব্রত মণ্ডল।
শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দলের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, আমরা রাজ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। যা বাম জমানায় হত না। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্যই আমরা লড়াই করছি।” অনুব্রতবাবুর বক্তব্য যদি দলের মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি? এর কোনও নির্দিষ্ট উত্তর দিতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের অন্দরে তাঁদের যুক্তি, অনুব্রতবাবুদের সঙ্গে সাংসদ শতাব্দী রায়ের বিরোধ দলেরই ক্ষতি করছে। জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলে সাংসদের কিছু মন্তব্যও খতিয়ে দেখা উচিত।
এ দিনের ওই কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের শতাব্দীও। তাঁর বক্তব্য, “তখন গরমে হাঁসফাঁস করছিলাম। উনি ঠিক কী বলেছেন, আমি শুনিনি। তবে, এমন কিছু যদি উনি বলে থাকেন, তা নিজের দায়িত্বে বলেছেন। এটা দলের সিদ্ধান্ত নয়। তবে, অনেক সময়েই আবেগে এসে কেউ কোনও কথা বলে ফেলেন।” কিন্তু, দলের কর্মিসভায় নিছক আবেগের বশে কি জেলা সভাপতি এমন ব্যক্তিগত মন্তব্য করতে পারেন? শতাব্দীর জবাব, “সেটা ওঁকেই জিজ্ঞেস করুন। উনিই ভাল বলতে পারবেন!” এর থেকেই স্পষ্ট, অনুব্রতবাবুর মন্তব্যের দায় শতাব্দী কোনও ভাবেই নিতে চাইছেন না।
পরে ফোনে অবশ্য অনুব্রতবাবু দাবি করেন, “আমি ও-রকম কিছু বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি, ৩৪ বছর তো বামফ্রন্ট রাজ্য চালাল। তারা কোনও উন্নয়নই করেনি। মা-মাটির মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় এসে উন্নয়ন করছেন। সেই কারণেই আমি বিরোধীদের উদ্দেশে অনুরোধ জানিয়েছি, কারও উস্কানিতে তাঁরা যেন পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা না দেন। জেলায় আমাদের মিনি রাইটার্স চালাতে দিন।”
ওই কর্মিসভায় শতাব্দী রায়।
বিরোধীরা কিন্তু মনে করছেন, তাঁরা গত কয়েক দিন ধরে যা অভিযোগ করে আসছেন, তারই হাতেনাতে প্রমাণ মিলেছে অনুব্রতবাবুর মন্তব্যে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের কথায়, “এটা শুধু দেওয়ানি বিধিভঙ্গই নয়, ফৌজদারি অপরাধ। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার কথা কী ভাবে কেউ বলতে পারেন? তৃণমূলের এক জেলা সভাপতির বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল, জেলায় জেলায় পঞ্চায়েতের মনোনয়নের নামে কী চলছে!” তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা অভিযোগ জানাবেন। পাশাপাশি এমন মন্তব্যের জন্য ফৌজদারি অপরাধেও অনুব্রতবাবুর শাস্তিও দাবি করবেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের মতে, “যত দিন যাচ্ছে, স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে শাসক দল পঞ্চায়েত নির্বাচনটা কোনও ভাবেই সুষ্ঠু ভাবে হতে দেবে না।” আজ, সোমবারও মনোনয়ন পেশে বাধা পেলে তাঁরা ফের নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে এ দিন জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।
বস্তুত, প্রথম দফায় যে ৯টি জেলায় ভোট হচ্ছে, সেগুলিতে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়াকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। আহত অনেকে। অভিযোগের তির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শাসক দলের দিকে। দ্বিতীয় দফায় যে চার জেলায় (বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ) ভোট, সেখানেও মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে হিংসার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। প্রার্থীরা যাতে নির্ভয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, রাজ্য সরকারকে তার ব্যবস্থা করার জন্য ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতির মন্তব্য বিরোধীদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কটাক্ষ, “আমাদের বিরুদ্ধেও বিরোধীদের অভিযোগ কম ছিল না। তবু বাম জমানাতেও পঞ্চায়েত স্তরে অনেক জায়গায় বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিলেন। এরা তো দেখছি বিরোধীদের নামগন্ধও রাখতে চায় না!”
ঘটনা হল, হিংসা থামার কোনও লক্ষ্মণই আপাতত দেখা যাচ্ছে না। শনিবার রাত থেকেও একাধিক জেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার মাইতিপাড়ায় হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের দাবি, তাদের জেলা পরিষদের প্রার্থী মনোরঞ্জন দিয়াশী, ক্যানিং-২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী অঞ্জলি গাইন এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী মইনুদ্দিন শেখের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয় তৃণমূল। মারধরও করে। আহত হন মনোরঞ্জনবাবুর ভাইয়ের স্ত্রী। ওই রাতেই ক্যানিং-২ পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম প্রার্থী মোকলেশ মিস্ত্রির বাড়িতে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। শনিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া ও সন্দেশখালিতে সিপিএম ও তৃণমূলের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কয়েক জন। সন্দেশখালির বেড়মজুর-২ পঞ্চায়েতের পশ্চিম ঝুপখালি গ্রামেও ওই দুই দলের সংঘর্ষে ৬ জন আহত হন।
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এলাকা দখলকে ঘিরে শনিবার রাতেই মুর্শিদাবাদের লালবাগের কাছে শিবনগর এলাকায় কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যে গুলির লড়াই বাধে। গুলিবদ্ধ হন সিপিএমের দু’জন, কংগ্রেসের তিন জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এক কংগ্রেসকর্মীকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বর্ধমানে পাণ্ডবেশ্বরের মুচিপাড়ায় শনিবার তৃণমূলের একটি অফিস সিপিএমের লোকজন ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে রবিবার সকালে প্রায় দু’ঘণ্টা ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় পাণ্ডবেশ্বর ব্লক তৃণমূল। সিপিএমের অভিযোগ, এ দিনই ভাতারে তৃণমূলের হাতে তাদের এক প্রার্থী মার খান। আহত হন ভাতার জোনাল কমিটির এক সদস্যও।

—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.