ঐক্য দেখাতে একমঞ্চে, তবু এড়ানো সম্ভব হল না বিতর্ক
চার দিন আগেও দলীয় সাংসদের ডাকা কর্মিসভায় হাজির হননি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর অনুগামী নেতা-কর্মীরা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে ফের ভোলবদল। রবিবার সেই শতাব্দী রায়ের ডাকা কর্মিসভাতেই দেখা গেল দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, রাজ্যের দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও নুরে আলম চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ প্রমুখকে। যাঁদের একটা বড় অংশই অনুব্রত-অনুগামী বলেই পরিচিত। পঞ্চায়েত ভোটের স্বার্থে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে ঐক্যমত তুলে ধরতেই কাযর্ত ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নামল তৃণমূল। যেখানে একই মঞ্চে দেখা গেল মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের একপাশে দলের জেলা সভাপতি এবং অন্য পাশে সাংসদ শতাব্দী রায়কে।
রামপুরহাটের রেলওয়ে ইন্সটিটিউটে তৃণমূলের ঐক্যমত তুলে ধরার সেই কর্মিসভায় আবার বিতর্কিত মন্তব্য করে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিলেন অনুব্রত মণ্ডল। যেখানে সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতেই বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, “কংগ্রেস আমাদের শত্রু। সিপিএম আমাদের শত্রু। কাউকে মনোনয়ন ফাইল করতে দেবেন না। দরকার হলে আমাকে ডাকবেন। আমি আপনাদের পাশে থাকব!” তৃণমূল নেতা যখন এই ‘হুমকি’ দিচ্ছেন, তখন সভায় উপস্থিত রাজ্যের দুই মন্ত্রী থেকে সাংসদ শতাব্দী রায়। স্বভাবতই দলের জেলা সভাপতির এই মন্তব্যে বিড়ম্বনায় পড়েছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। পরে শতাব্দী অনুব্রতবাবুর মন্তব্যের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। তাঁর দাবি, “এটা অনুব্রতবাবুর ব্যক্তিগত মত। এতে দলের কোনও অনুমোদন নেই।” অনুব্রতবাবুর ওই মন্তব্যকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে তাঁর সমালোচনায় সামিল হয়েছেন বিরোধীরাও। বস্তুত, এ দিনের সভায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ভুলে এক হয়ে লড়াই করার ডাক দিলেও অনুব্রতবাবুর ওই মন্তব্যে সুর অনেকটাই কেটে যায়। আরও প্রকাশ্যে চলে এল শতাব্দী-অনুব্রত মতানৈক্যও।

ব্যবধান কি ঘুচল? —নিজস্ব চিত্র
গত বুধবারই সিউড়ির নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সাংসদ শতাব্দী রায়ের উদ্যোগে একটি দলীয় কর্মিসভা হয়। যেখানে দলের জেলা সভাপতি, মন্ত্রী, ব্লক সভাপতি-সহ জেলা নেতৃত্বের একটি বড় অংশই গরহাজির ছিলেন। ওই ঘটনার জন্য সেদিন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছিলেন শতাব্দী-গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীরা। এমনকী ক্ষুব্ধ শতাব্দী অনুপস্থিত নেতাদের প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। এ দিন অবশ্য আগের সভায় অনুপস্থিতদের একটা বড় অংশেরই দেখা মিলল। যদিও সিউড়ির কর্মিসভায় উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না অনুব্রত-গোষ্ঠীর বিরোধী বলে রাজনৈতিক মহলে পরিচিত, সিউড়ির বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ।
সভার প্রথম বক্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে মঞ্চে আসীন শতাব্দী রায়, চন্দ্রনাথ সিংহ, অনুব্রত মণ্ডল, নুরে আলম চৌধুরীদের প্রতি ইঙ্গিত করে কর্মীদের উদ্দেশ্যে বার কয়েক বলতে শোনা গেল, “আপনাদের কি মনে হচ্ছে, আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব আছে? ও সব মিথ্যা অপপ্রচার। আপনারা এলাকায় গিয়ে সত্যিটা বলুন।” একমঞ্চে শতাব্দী-ঘনিষ্ঠ আশিসবাবুর মতো অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বিধায়ক মনিরুল ইসলামও আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলকে জেতানোর কথা বলেন। জেলা সভাপতি ও আশিসবাবুর নামে কার্যত ‘জয়ধ্বনি’ তুললেও লাভপুরের বিধায়কের মুখে একবারও শতাব্দীর নাম শোনা যায়নি।
যদিও বাস্তব পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে দলের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা কার্যত স্বীকার করে নেন মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “অনেক পরিবারে ভাইয়ে-ভাইয়ে, বোনে বোনে মনোমালিন্য থাকে। আমাদের মধ্যেও তেমন কিছু কথা কাটাকাটি-গণ্ডগোল আছে। কিন্তু অন্তত এই দেড় মাস সব কিছু ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে।” পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের টিকিট না পেয়েও যাঁরা ভোটে লড়বেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দেন মন্ত্রী। এ দিন শতাব্দী অবশ্য একবারও সাংগঠনিক কোনও অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা মুখে আনেননি। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি মন্তব্য করেন, “শতাব্দী, অনুব্রত মণ্ডল, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় নন, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য দলকে ভোট দিয়েছেন।” তাঁর আরও সংযোজন, “এই জেলায় অল্প সংখ্যক পঞ্চায়েত আমাদের দখলে। বিরোধী পঞ্চায়েতগুলি কাজ করছে না। ওই পঞ্চায়েতগুলি আমাদের দখল করতে হবে। মানুষ উন্নয়ন ও কাজ চান। সেই কাজ পৌঁছে দিতে হবে।”
এ দিন যদিও শতাব্দী বা অনুব্রত কেউই একটি বারের জন্যও নিজেদের মধ্যে কথা বলেননি। বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের ঐক্যমত দেখানোর চেষ্টা জেলা সভাপতি নিজেই অনেকটাই ব্যর্থ করলেন বলে জেলার রাজনৈতিক মহলের মত।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.