গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ভুলে পঞ্চায়েতে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ার বার্তা দলের নেতা-কর্মীদের দিয়েছেন তৃণমৃলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে তাতে যে খুব একটা কাজ হয়নি বুধবারই তার ইঙ্গিত মিলল সিউড়িতে। বুধবার বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়ের ডাকা কর্মী সম্মেলনে। দলের একাধিক নেতার অনুপস্থিতি যে তিনি ভাল চোখে দেখছেন না, তা গোপন করেননি শতাব্দী। বলেন, “আমি গলায় গামছা দিয়ে কার্ড ছাপিয়ে কাউকে নিমন্ত্রণ করব না! এটা আমার বাবার বিয়ে নয়!” পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিশদে আলোচনা করার লক্ষ্যেই এ দিন সিউড়ি মহকুমার নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহরের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মিসভা করেন শতাব্দী। কিন্তু উপস্থিত ছিলেন না দুবরাজপুর, খয়রাশোল, সাঁইথিয়া এবং সিউড়ি ১ ও ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতিরা। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যাঁরা প্রত্যেকেই জেলা রাজনীতিতে সাংসদের বিরোধী গোষ্ঠী তথা দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসাবে পরিচিত।
এর জেরে এ দিন প্রকাশ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন শতাব্দী। কেন ওই সব নেতা এলেন না, সে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ওঁরাই বলতে পারবেন, কেন আসেননি!” কর্মিসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়েও তাঁর মন্তব্য, “যাঁরা আজ আসেননি, গত নির্বাচনের আগে এই সব নেতাকে কে চিনত? পঞ্চায়েতে ভাল ফল হয়েছিল দলগত কারণেই। বরং লোকসভা নির্বাচনের পরে এলাকায় আমার করা উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমেই ওঁরা পরিচিতি পেয়েছেন।” সাংসদের বার্তা, “বেইমানি ও অকৃতজ্ঞতাকে রাজনীতির অঙ্গ করবেন না।” জেলা তৃণমূলের এক নেতা জানান, মহকুমায় দলের প্রত্যেককেই কর্মিসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবু ওই পাঁচ ব্লকের সভাপতিরা না আসায় চটেছেন সাংসদ। তবে অনুব্রত-গোষ্ঠীর নেতারা না থাকলেও কর্মিসভায় ছিলেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিউড়ির বিধায়ক স্বপন ঘোষ।
বীরভূমে অনুব্রত-গোষ্ঠী ও শতাব্দী-গোষ্ঠীর বিরোধ নতুন নয়। নানা কর্মসূচিতে তা বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। সিউড়ি থেকে দুবরাজপুর, বোলপুর থেকে নানুরনানা এলাকায় দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র আকার নেওয়ায় খোদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জেলায় গিয়ে রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। বোলপুরে দলীয় নেতাদের বলেছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা যে ভাবেই
হোক তুলে ধরতে হবে। সিউড়ির এ দিনের ঘটনায় সেই উদ্যোগ ফের হোঁচট খেল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
দলের পর্যবেক্ষক রজত মজুমদারও বলেন, “যাঁরা আসেননি, তাঁদের নিজেদের এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে তাঁদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। নির্বাচনে ফল কী হয়, সেটা দেখার পরে হিসাব বুঝে নেব।” যদিও দুবরাজপুর খয়রাশোল, সাঁইথিয়া, সিউড়ি ১ ও ২ ব্লকের সভাপতি ভোলানাথ মিত্র, আশোক মুখোপাধ্যায়, স্বর্ণশঙ্কর সিংহ, সাবের আলি বা নুরুল ইসলামেরা বিতর্কে জড়াতে রাজি হননি। সভায় উপস্থিত না হওয়ার কারণ হিসাবে কেউ শারীরিক অসুস্থতা, কেউ সংগঠন সংক্রান্ত বৈঠক, কেউ বা বাইরে থাকার কারণ জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, “আমরা সবাই এক। দলে কোনও মতান্তর বা বিভেদ নেই।” অনুব্রতবাবু বলেন, “আমি কলকাতায় ছিলাম। এ দিনের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলাম না, তাই মন্তব্য করতে পারব না।” |