বাড়িতে তালা ঝোলানোর পরে হাতে-পায়ে ধরেছিলেন অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের দিদিমা। অভিযোগ, এক লগ্নিকারী ওই তাঁর সঙ্গীরা ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বুধবারের ঘটনা।
মৃত বৃদ্ধার নাম জুম্মাতুন বেওয়া। সারদা-কাণ্ডের পর থেকেই ঘরছাড়া মৃতার নাতি, বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার হাজামপাড়ার বাসিন্দা জামানত ইসলাম নামে সারদা সংস্থার ওই এজেন্ট। বুধবার রাতে মাড়গ্রাম থানায় লগ্নিকারী সাফিউল শেখ ও তাঁর দাদা-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন জামানতের দিদি নার্গিস বেগম। এর পর থেকেই অভিযুক্তেরা এলাকাছাড়া। বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলিধর শর্মা বলেন, “একটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে। পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজ চালাচ্ছে।”
রামপুরহাটে সারদার বড় এজেন্টদের অন্যতম জামানত। তাঁর দাবি, “সারদা-কাণ্ডের পরে প্রচণ্ড চাপে আছি। বারবার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই দীর্ঘদিন আমি পাড়াছাড়া। তবু আমি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু, বাড়িতে এসে হামলা চালাচ্ছে কিছু লগ্নিকারী। বাবার মুখ থেকে এ দিনের ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি।” জামানতের বাবা আবজুর শেখের অভিযোগ, “এ দিন সকালে বাড়ির বারান্দায় বসেছিলাম। হঠাৎ সাফিউলরা এসে বাইরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। আমাকে ধাক্কা মারে। ঝামেলা বেধেছে দেখে শাশুড়ি বেরিয়ে আসেন। তিনি হাতে-পায়ে ধরলেও তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।”
সারদা-কাণ্ডের পরে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার অফিসে ও এজেন্টদের বাড়িতে হামলার ঘটনা নতুন নয়। চলতি মাসের গোড়ায় উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে এক এজেন্টের বৃদ্ধ বাবাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে চটি, ঝাঁটা নিয়ে মারধর করেন কিছু লগ্নিকারী। ওই বৃদ্ধ আত্মঘাতী হন। মাড়গ্রামের ঘটনায় যে লগ্নিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন জামানত, বাড়ি স্থানীয় খানকাশরিফ পাড়ায়। এ দিন বাড়িতে গিয়ে সাফিউল ও তাঁর দাদাকে পাওয়া যায়নি। মুখ খুলতে চাননি জামানতদের পড়শিরাও। তাঁদের দাবি, তাঁরা কিছুই দেখেননি।
সাফিউলের স্ত্রী সাইদা বিবি বলেন, “আমার স্বামী কল মিস্ত্রি। জামানতকে বিশ্বাস করে টাকা রেখেছিলেন। সারদা নিয়ে গণ্ডগোলের খবর পাওয়ার পরে জামানতকে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। আজ দেবে, কাল দেবে বলে ও গড়িমসি করতে থাকে।” বৃদ্ধাকে ধাক্কা দেওয়ার কথা স্বীকার না করলেও এজেন্টের বাড়িতে তালা দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সাফিউলের স্ত্রী ও বাবা। স্ত্রী-র কথায়, “আমার ননদের জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। তাই এ দিন স্বামী আরও কয়েক জনের সঙ্গে জামানতের বাড়িতে গিয়ে তালা দিয়ে দেন।” বাবা শের মহম্মদ বলেন, “তালা দেওয়ার কথা শুনে ছেলেকে বকাবকি করেছিলাম। পরে শুনলাম ছেলের নামে জামানতের দিদিমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ হয়েছে। এর পরেই ছেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।” |