বাস কমে গিয়েছে কোটাসুর-রামনগর সড়কে
লাকার অন্যান্য রাস্তাগুলি সম্প্রসারণ কিংবা সংস্কার হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তাও। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর-রামনগর সড়ক। ওই রাস্তা বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আবেদন-নিবেদন থেকে শুরু করে অবরোধ এবং অনশন করেও ওই রাস্তার ফেরানো যায়নি বলে ক্ষোভ বাসিন্দাদের। এর সত্যতা স্বীকার করে নেন প্রশাসনিক কর্তারা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পূর্ত দফতরের (সড়ক) আওতাধীন এই রাস্তাটি ১৮ কিলোমিটার। সংস্কারের অভাবে রাস্তাটি কোথাও হাঁটু সমান গর্ত আবার কোথাও ভেঙেচুরে একশেষ হয়ে গিয়েছে। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে ওই রাস্তা দিয়ে যেতে সমস্যা হয় বলে দাবি বাসিন্দাদের। অথচ রাস্তাটির উপরে শুধু ময়ূরেশ্বর থানা এলাকাই নয়, সংলগ্ন লাভপুর থানা এবং মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানা এলাকার এক বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন নির্ভরশীল। জীবন-জীবিকা, বাজার-হাট, স্কুল-কলেজে যেতে এই রাস্তাটি তাঁদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
খানাখন্দে ভরা ময়ূরেশ্বরের এই রাস্তায় বর্তমানে মাত্র দু’টি বাস চলাচল করে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
এক সময় ওই সড়কে বিভিন্ন রুটের প্রায় ১২টি বাস চলত। বর্তমানে মাত্র দু’টি বাস চলে। সংশ্লিষ্ট সাঁইথিয়া বাসমালিক কল্যাণ সমিতির সহ-সম্পাদক পতিতপাবন দে বলেন, “দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ওই রাস্তায় আমরা বাস চালানো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। সকল স্তরে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে লাভ না হওয়ায় অবরোধও করেছিলাম। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।” স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও জেলা প্রশাসনের দফতরের সামনে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে অনশনও করেছিল। ওই স্কুলের কর্মকর্তা বাবন মণ্ডল বলেন, “সেই সময় প্রশাসনিক কর্তারা সংস্কারের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনও কাজ হয়নি।”
জেলা পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র জাহ্নবী কোনার বলেন, “ওই রাস্তা সাময়িক ভাবে সংস্কার করে বেশিদিন টেকানো যাচ্ছে না। পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য আমরা ইতিমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অর্থ বরাদ্দ হলেই সংস্কারের কাজ করা হবে।”
বর্তমানে জেলা প্রশাসন এবং পূর্ত দফতরের (সড়ক) অধীনে ওই থানা এলাকারই সাঁইথিয়ার তালতলা, শিবগ্রাম-ষাটপলশা, সুলতানপুর-সহ বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারের কাজ হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে রসুনপুর মোড় থেকে বেলেপুকুরের পাড়, নওয়াপাড়া-সাহড়া নতুন রাস্তা তৈরির কাজ। অথচ কোটাসুর-রামনগর রাস্তাটি অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, ৫ বছর আগে আগে ওই রাস্তা সংস্কার হয়েছিল। কিছু দিন যেতে না যেতেই রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এর জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। কারণ, ওই রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া ময়ূরাক্ষী নদীতেই ব্যাঙের ছাতার মতো একের পর এক গজিয়ে উঠেছে বৈধ ও অবৈধ বালিঘাট। ওই ঘাটগুলি থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ট্রাক ভর্তি করে বালি পাচার হচ্ছে। ভারী ট্রাক চলাচলের ফলে রাস্তার পিচ অল্প দিনেই মধ্যে সরে যাচ্ছে। বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসন ওই পাচার রোধে কোনও ভূমিকাই নিচ্ছে না। কারণ, শাসক ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ওই সব ঘাটগুলিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক-বিরোধী উভয় দল। সিপিএমের ময়ূরেশ্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক অরূপ বাগ বলেন, “আইনি বাধা থাক বা নাই থাক, জনমানসে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন কোনও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে আমরা নীতিগত ভাবে বিরোধী। আমাদের কেউ যদি কোনও এলাকায় অবৈধ বালির ঘাটের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তদন্ত করে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোনও ব্যবসার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত প্রামানিত হলে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।”
সাঁইথিয়া কলেজের ছাত্রী অমিতা দত্ত, সোনালি ভল্লারা বলেন, “সরাসরি বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।” রাস্তার জন্য তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে বলেন জানান, ব্যবসায়ী কাঞ্চন সিংহ, জয়দেব রুজরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা সংশ্লিষ্ট উলকুন্ডা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য রামমোহন প্রামাণিক। তিনি বলেন, “একের পর এক বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছেই। রাস্তা দিয়ে হাঁটাও যাচ্ছে না। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও বালি পাচার রোধ কিংবা রাস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা হয়নি।” পঞ্চায়েত প্রধান সামসুল আলম মল্লিক বলেন, “পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বার বার রাস্তা সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “ওই এলাকায় বালি পাচারের বিষয়টি জানা নেই। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.