কোনও প্রতিবন্ধকতাই দমাতে পারেনি ফিরোজকে
ন্মের এক বছরের মাথায় পোলিও কেড়ে নিয়েছিল পা দু’টো। তাতেও লড়াই থেমে থাকেনি সিউড়ির কড়িধ্যা যদু রায় মেমোরিয়ালের ছাত্র ফিরোজ আনসারির। প্রতিবন্ধকতা ও আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ কিন্তু কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। এ বার মাধ্যমিকে স্কুলের সেরা হয়েছে সে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৫৬। নম্বরের বিচারে হয়তো বিশাল কিছু নয়, কিন্তু যে পরিস্থিতিতে ফিরোজ ওই নম্বর পেয়েছে সেটাকে কুর্নিশ না করে উপায় নেই। কারণ ট্রাইসাইকেলে করে প্রতিদিন চার কিমি দূরের স্কুলে যেতে হত তাকে। বিহারের ভাগলপুর থেকে আসা ফিরোজদের পরিবারে একমাত্র বাংলা মাধ্যমের ছাত্র সেই-ই। ফলে ভাষাগত সমস্যা ছিল। কোনও টিউশন পড়েনি সে। একমাত্র স্কুলের শিক্ষকেরাই যেটুকু দেখিয়েছেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা পরীক্ষার আগেই অ্যাপেনডিক্স ও কিডনিতে পাথর ধরা পরে তার। ফিরোজের কথায়, “এক সময়ে ভেবেছিলাম পরীক্ষা দিয়ে লাভ নেই। কারণ পরীক্ষার আগে অস্ত্রোপচার করার খরচ জোগাড় করা সমস্যা ছিল। কিন্তু পরিবার ও শিক্ষকদের কথায় শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার না করিয়েই পরীক্ষা দিই। এখন ভাবনা উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার।”
এই সাইকেলে কলে স্কুলে যায় পোলিও আক্রান্ত ফিরোজ। —নিজস্ব চিত্র।
বছর ষোলো আগে ১১ জন সন্তানকে নিয়ে সপরিবার ভাগলপুর থেকে পাকাপাকি ভাবে সিউড়ির কাছে মিনিস্টিল আমবাগান লাগোয়া এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেছিলেন ফিরোজের বাবা কুতুবউদ্দিন আনসারি। তিনি বলেন, “সামান্য একখণ্ড জমি চাষ করে সংসার চালাতান। এখন ছেলেরা বড় হওয়ায় কিছুটা শুধরেছে অর্থিক অবস্থা। আমার আর এক ছেলে ও দুই মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। বাকিদের বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলেকে চোখের আড়াল করতে চাইনি ওর ওই অবস্থার জন্য। কাছের বাংলা মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেছিলাম।” তিনি জানান, তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার আগে পর্যন্ত এখানে-ওখানে যাওয়ার জন্য ছিল হাত দু’টোই ভরসা। তার পরে জোটে ট্রাইসাইকেল। সেই সাইকেলটাই এখন সর্বক্ষণের সঙ্গী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কল্যাণ ভট্টাচার্য বলেন, “যেদিন ও স্কুলে ভর্তি হতে এসেছিল সবাই সংশয়ে ছিলাম কী ভাবে ক্লাস করবে এই ছেলে। কিন্তু ওর মেধা এবং অধ্যাবসায় আমাদেরকে অবাক করেছে। তবে অসুস্থ না হয়ে পড়লে আরও অনেক ভাল ফল করতে পারতো ফিরোজ।” তবে চিন্তা একটাই। যেহেতু নিজের স্কুলে বিজ্ঞান শাখা নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে সিউড়ির যে কোনও স্কুলে ভর্তি হলে ট্রাইসাইকেলে করে যেতে হবে সাত কিমি রাস্তা। কিন্তু ওই পথ বাধা হবে না বলে জানায় ফিরোজ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.