ভাই, তোমার জন্মদিনটা কবে?
দলের এক উঠতি নেতাকে এখন এই প্রশ্নই করছেন তাঁর অগ্রজেরা! তাঁরা ভেবেছিলেন, ওই তরুণই ভবিষ্যৎ। এখন একই অঙ্গে নানা রূপ আবিষ্কার করে পড়েছেন বিড়ম্বনায়! দিল্লি থেকে কলকাতা, বিড়ম্বনার বার্তা গিয়েছে রটে!
গত বিধানসভা নির্বাচনে কসবা থেকে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন শতরূপ ঘোষ। সে বারের ভোটে কনিষ্ঠতম প্রার্থী। বয়স তখন সবে ২৫। পরিবর্তনের ঝোড়ো হাওয়ায় ঝকঝকে তারুণ্য অবশ্য কোনও প্রতিরোধ গড়ে
তুলতে পারেনি। কিন্তু আলিমুদ্দিনের আস্থা তাতে টলেনি। গত বছর তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লিতে এসএফআইয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠনে কাজ করার জন্য। অধুনা ছাত্র সংগঠনের সর্বভারতীয় স্তরে পাঁচ জন যুগ্ম সম্পাদকের মধ্যে তিনিও এক জন। দেশের নানা প্রান্তে সংগঠনের কাজেই ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এ কে জি ভবন আর আলিমুদ্দিন, দুই-ই তাঁকে নিয়ে ব্যতিবস্ত! কারণ, দলেরই ভিতর থেকে প্রকাশ কারাট এবং বিমান বসুর কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে, সিপিএমের এই তরুণ মুখ ‘জন্মদিন-জালিয়াতি’ করেছেন!
গোলমাল অবশ্য ধরা পড়েছে শতরূপেরই জন্য। একটি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তিনি নিজের সম্পর্কে তথ্য দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর জন্মদিন ১৯৮৬ সালের ২২ এপ্রিল। ঘটনাচক্রে, সে দিনটাই কিংবদন্তি ভি আই লেনিনের জন্মদিন এবং কমিউনিস্টদের কাছে বিশেষ স্মরণীয় দিন! লেনিনের সঙ্গে এক জন্মদিনের গর্বিত অধিকারী হিসাবে গত এপ্রিলে সোস্যাল সাইটে বিস্তর শুভেচ্ছাও কুড়িয়েছেন শতরূপ। আর সেই জন্মদিনের তথ্য সংবলিত পেজ-ই রীতিমতো ‘পিডিএফ’ করে বিমানবাবুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থক। পাছে বিতর্ক উঠলেই ওই পেজ ‘এডিট’ হয়ে যায়!
কিন্তু লেনিনের জন্মদিনে কারও জন্মদিন হলে বিতর্ক কেন? অভিযোগ-পত্রে জানানো হয়েছে, ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল ছিল কলকাতায় বিধানসভা ভোট। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৯ এপ্রিল। যদি শতরূপের জন্মদিন ২২ এপ্রিলই হবে, তা হলে মনোনয়নের সময় ২৫ বছর বয়স না-হওয়ায় নির্বাচন কমিশনেরই তাঁর প্রার্থী-পদ খারিজ করে দেওয়ার কথা! তা যখন হয়নি, তার মানে কমিশনকে অন্য তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এবং তার মানে, ২২ এপ্রিল জন্মদিনের গৌরব নেহাতই ‘নকল’!
অভিযোগ শুনে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন, শতরূপের জন্মদিন আসলে ২২ মার্চ। সার্টিফিকেটেও তেমনই আছে, কমিশনের কাছে হলফনামাতেও তা-ই। এবং এটা আবিষ্কার করেই তাঁরা হতভম্ব! আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু এখনও না-হলেও শতরূপকে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, ঘোর অন্যায় হচ্ছে! সোস্যাল সাইটে তিনি যা দাবি করছেন, সে সব যেন বন্ধ করা হয়! শতরূপ অবশ্য দাবি করছেন, তাঁকে দলের তরফে এই ব্যাপারে কোনও কথাই বলা হয়নি। চণ্ডীগড় থেকে সোমবার তাঁর দাবি, “দলের পক্ষ থেকে কখনওই এই সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন আমাকে করা হয়নি। দল জানতে চাইলে যা বলার বলব।” দলের শতরূপের সমর্থকেরা অবশ্য বলছেন, সার্টিফিকিটে যা আছে, তা-ই প্রামাণ্য। কোন সাইটে কী লেখা হয়েছে, তা দিয়ে হইচই কেন?
আলিমুদ্দিনের বিড়ম্বনা সহজে কাটার নয়। কারাট ও বিমানবাবুর কাছে পাঠানো চিঠিতেই আরও অভিযোগ, আশুতোষ কলেজে নির্বাচনের দায়িত্ব পাওয়ার পরে ওই ছাত্র-নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্র সংসদটা তৃণমূলকে ‘উপহার’ দিয়েছিলেন! অথচ সংগঠন লড়তেই চেয়েছিল। শতরূপের উপরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের ‘স্নেহের হাত’ আছে বলে দলের অন্দরে সুবিদিত। সাম্প্রতিক বিতর্কে ওই নেতা স্বভাবতই ব্রিবত। বলছেন, “এখন থেকেই এ সব? ওর সঙ্গে কথা বলব!” দলে তারুণ্যের প্রবক্তা কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের সবিস্ময় প্রতিক্রিয়া, “কমিউনিস্ট পার্টিতে এ জিনিস হবে কেন!”
ঠিক একই কথা দলীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে চেয়েছে অভিযোগের চিঠিও। দলের কর্ণধারদের কাছে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ভুল জন্মতারিখ দাবি করে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় তরুণ হয়তো নিজেকে ‘এ যুগের লেনিন’ ভাবছেন! কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি কি এ জিনিস মানবে? প্রশ্ন সেই পার্টির কাছেই, যারা কিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভুয়ো’ ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে হইচই করেছিল! |