|
|
|
|
ভাল সাজার প্রতিযোগিতা আইন অমান্যে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পুলিশি ব্যারিকেডের ও’পার থেকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দাবি করছেন, আমাদের ধরুন! গ্রেফতার করে জেলে ভরুন!
ব্যারিকেডের এ’পারে পুরোদস্তুর বর্ম-সজ্জিত পুলিশ। চার ধারে বিশালাকার জল-কামান, র্যাফ, রোবো কপ, কম্যান্ডো! তারা বলছে, কিছুতেই ধরব না! জেলেও নেব না!
দু’পক্ষের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাতেই শুক্রবার বয়ে গেল বেলা! বস্তুত, কে বেশি ‘ভাল ছেলে’ হবে, তা-ই নিয়ে রীতিমতো টানাপোড়েন চলল কলকাতার রাজপথে। আর এই ভালত্বের প্রতিযোগিতার মাঝে পড়ে কয়েক ঘণ্টার জন্য কিছু হয়রানি পোহাতে হল আম জনতাকে।
দু’দিন পরে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। নিজেদের চার পাশে তাই গণ্ডি কেটে নিয়ে নেমেছিল দু’পক্ষ। কিছুতেই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কোনও কাজ করা চলবে না, সতর্ক বামফ্রন্ট। কোনও ভাবেই বিরোধীদের হাতে ভোটের মুখে কোনও অস্ত্র তুলে দেওয়া চলবে না, পুলিশের উপরে কড়া নির্দেশ শাসক পক্ষের। এমনিতেই আইন অমান্যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে পুলিশ। আর এ দিনের স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে বিরোধীদের অঙ্গস্পর্শেও তাদের আপত্তি! আইন অমান্য উপলক্ষে তাই টানটান নাটক চলল ধর্মতলা এলাকায়।
আদালতের নজরদারিতে সারদা-কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত-সহ ৮ দফা দাবিতে বামফ্রন্টের জমায়েত ছিল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। তার পরে আইন অমান্য। পুলিশের বক্তব্য, কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আয়োজিত এ দিনের কর্মসূচিতে মিছিল করে
কেউ রানি রাসমণিতে আসেননি। ফলে, শহরের যান চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক ছিল। তবে নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা, সারিবদ্ধ ভাবে আন্দোলনকারীরা এসেছেন এবং তার জেরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, এস এন ব্যানার্জি রোড, নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে যানজট ছিল। |
|
মুখোমুখি। শুক্রবার রানি রাসমণি রোডে বামফ্রন্টের আইন অমান্য। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক। |
তবে এই জটের সব দায় নিতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। বামেদের জমায়েত ছিল রানি রাসমণির একটি লেনে। কিন্তু বাকি দু’টি লেনও বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশই। ধর্মতলা, কার্জন পার্ক, মেয়ো রোডের আশেপাশে এ দিনের পুলিশি আয়োজন ছিল যুদ্ধ-কালীন! রাজ্য পুলিশ থেকে চেয়ে-আনা মহিলা পুলিশ-সহ দু’হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ধর্মতলা চত্বরে। নানা দিকে পুলিশ ক্যাম্প। জল-কামান, র্যাফ তো বটেই, রাজভবনের সামনে এবং কার্জন পার্কের দক্ষিণ দিকে উঁচু মইয়ে চড়ে জমায়েতের ভিডিও রেকর্ডিং-ও করেছে পুলিশ। বাম নেতারা ৩৪ বছর সরকার চালিয়েছেন। কিন্তু সেই ছয়ের দশকের খাদ্য আন্দোলনের সময়েও এমন রাজসূয় পুলিশি যজ্ঞ তাঁরা দেখেননি বলে জানাচ্ছেন প্রবীণ বাম নেতারা।
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ঘোষণা করেছিলেন, হয় তাঁদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যেতে হবে। নয়তো লাঠি চালিয়ে হঠাতে হবে! কিন্তু এ দিন কার্যক্ষেত্রে পঞ্চম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সজল গুহকে এনে পুলিশ ঘোষণা করিয়ে দেয়, আইন অমান্যকারীদের সকলকে গ্রেফতার এবং একই সঙ্গে বিনা শর্তে মুক্তিও দেওয়া হল! বিমানবাবুরা দেখেন, এতে তাঁদের দাবিরক্ষা হচ্ছে না। তাঁদের প্রশ্ন, আমরা কি দুধ ভাত? রাস্তার ব্যারিকেডের সামনে থেকে ফের মঞ্চে ফিরে গিয়ে বিমানবাবু তাই জানিয়ে দেন, তাঁরা ঘটনাস্থলেই অবস্থানে বসছেন! পুলিশ তখন সবে হাঁফ ছেড়ে বসতে যাচ্ছিল! ফ্রন্ট নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আবার তারা ‘সাবধান’ মোডে! এক পুলিশ-কর্তার প্রশ্ন, “নাম কা ওয়াস্তে গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে গিয়ে জামিন দিয়ে দিলে সেটাও তো দুধ ভাতই হত!”
বিমানবাবুরা যখন অবস্থানে বসে, মঞ্চে গান-কবিতা চলছে, আইন অমান্যকারীরা তত ক্ষণে অনেকেই বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরেছেন! শেষমেশ মঞ্চেই মঞ্জুকুমার মজুমদার, ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্য, জয়ন্ত রায়, নরেন চট্টোপাধ্যায়, প্রতিম চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে বিমানবাবুই মাইক ধরে বলেন, “আইন ভাঙার নামে এখানে যা হল, সেটা আসলে প্রহসন! নিশ্চয়ই উপর তলার নির্দেশ ছিল পুলিশের উপরে। এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এর পরে কলকাতায় সভা করতে পুলিশের আর অনুমতি নেব না!”
তার আগে অবশ্য প্রবীণতম বাম নেতা অশোক ঘোষ পুলিশি আয়োজনের বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিমানবাবু বলেছিলেন, “পুলিশের নাকি টাকা নেই, পরিকাঠামো নেই! মাথা খারাপ না-হলে কেউ মঞ্চের সামনে ৮টা, পিছনে ৬টা ব্যারিকেড করে? পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন দিতে এত হামলা হচ্ছে। সেগুলো ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?” আর বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলেন, “আপনি সংবিধান লঙ্ঘন করবেন। আপনি আমাদের আইন অমান্য করার অধিকার মানবেন না! আমরাও আপনার আইন ভাঙা মানব না! এ ভাবে চলতে থাকবে!”
কিন্তু শেষ তো হতেই হত! বিমানবাবু যখন ঘোষণা করলেন, “বীরপুঙ্গব পুলিশকে বলছি, আমাদের কর্মসূচি সমাপ্ত! আপনারা ল্যাজ গুটিয়ে বাড়ি যেতে পারেন!” যবনিকা নামল নাটকে!
|
পুরনো খবর: ৪০০ কোম্পানি চেয়ে শেষ লগ্নে চিঠি দিল্লিকে |
|
|
|
|
|