অফিসার-পুলিশ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই, জানিয়ে দিল কমিশন
পুলিশ ও প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার নিয়েও তীব্র হল রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বন্দ্ব। শুক্রবার রাজ্যকে পাল্টা চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়ে দিল, এই অধিকার তাদেরই। এ ক্ষেত্রে কমিশনের বর্ম হল, সংবিধানের ২৪৩ কে ধারা। ওই ধারা অনুযায়ী পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ, নির্দেশ এবং পরিচালনার অধিকার শুধুমাত্র কমিশনের উপর ন্যস্ত। মহাকরণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের কথা বলে কর্মী-অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার নিজেদের হাতে রাখার কথা বলেছিল। জবাবে কমিশন এ দিন জানিয়েছে, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই আইন তৈরি হয়। কোনও আইনই সংবিধানে বলে দেওয়া বিধানের চেয়ে বড় হতে পারে না। এই যুক্তি দিয়ে তারা জানিয়ে দেয়, তাই পঞ্চায়েত ভোটে অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বাভাবিক নিয়মেই কমিশনের হাতে থাকবে।
আগামী সোমবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ পুনর্বিবেচনা মামলায় শুনানি ফের শুরু হবে। কমিশন সূত্রের খবর, সেখানে তারা এই প্রসঙ্গটিও তুলবে। কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বিদেশ থেকে ফিরেছেন। এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কমিশন সূত্রের খবর, দু’জনের মধ্যে আলোচনাতেই ঠিক হয়, পুলিশ-প্রশাসনিক অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও শুনানির সময় তোলা হবে। অন্য দিকে, মহাকরণ সূত্রে খবর, এই টানাপোড়েন অনভিপ্রেত বলে আদালতে যেতে পারে রাজ্যও।
এখন প্রশ্ন, এর কোনও প্রভাব কি ভোট প্রক্রিয়ার উপরে পড়বে? কমিশন এবং মহাকরণ, দুই সূত্রেই বলা হয়েছে, সরাসরি কোনও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আপাতত নেই। তবে পরোক্ষে প্রভাব পড়তেই পারে।
গত ২৭ জুন কমিশন পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। তার পরেই কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতার কথা উল্লেখ করে দু’টি বিজ্ঞপ্তিতে থানার ওসি থেকে ডিজি এবং জেলাশাসকের অধীনে কর্মরত অফিসারদের তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসার কথা জানানো হয়। রাজ্য তা মানতে চায়নি। রাজ্যের বক্তব্য ছিল, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী ভোট ঘোষণার পরে কর্মী-অফিসারেরা সরাসরি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসে। ভোট চলাকালীন গোলমাল হলে কমিশনই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে এমন কোনও কথা আইনে বলা নেই। ফলে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা-পর্বে এ নিয়ে কমিশনের অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মানা সম্ভব নয়।
দু’দিন আগেই কমিশনকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য। এ দিন কমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, “সংবিধানে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাও সেই একই। ফলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন যে ভাবে কাজ করে, সেই পথই অনুসরণ করা হচ্ছে। মামলা চলাকালীন কমিশনের আইনজীবী আদালতেও একই কথা বারবার বলেছেন।” কমিশনের ওই কর্তার বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টও এ নিয়ে বেশ কয়েকটি রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কোনও অংশেই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের চেয়ে কম নয়।”
তবে শুধু নিয়ন্ত্রণই নয়, তিন বছর একই পদে থাকা ডিএম-এসপি থেকে থানার ওসি-দের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কমিশন যে ফতোয়া দিয়েছিল, রাজ্য তা-ও মানবে না বলে জানিয়েছে। যদিও কমিশনের নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই সেই তালিকা তৈরি করে রেখেছে রাজ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অফিসারদের বদলির বিষয়টি নিয়েও মতভেদ তীব্র হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, বেশির ভাগ অফিসারকে ইতিমধ্যেই বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যে গুটিকয় অফিসার তিন বছর পরেও একই জায়গায় রয়ে গিয়েছেন, সরকার তাদের পঞ্চায়েত ভোটের পরই বদলি করবে। কিন্তু এখন বদলি করলে ভোট পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটবে। কমিশনকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারির পর আবার প্রতি পদে সরকারের সঙ্গে কমিশনের চিঠির লড়াই চলছে। কমিশনের অভিযোগ, সরকার যথাযথ সহায়তা করছে না। অন্য দিকে, রাজ্যের যুক্তি, পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনে যা যা বলা রয়েছে, সরকারি অফিসারেরা তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন। পঞ্চায়েত ভোট পরিচালিত হয় পঞ্চায়েত আইন মেনেই। সুতরাং কমিশন বাড়তি কোনও অধিকার চাইলে তা মানা হবে না। একই সঙ্গে রাজ্যের অভিযোগ, সরকারকে অসহযোগী প্রমাণ করতে প্রতিদিন যে ভাবে কমিশন একের পর এক চিঠি পাঠাচ্ছে এবং রাজ্যকে তা খণ্ডন করে পাল্টা চিঠি দিতে হচ্ছে, তা অভিপ্রেত নয়। তাই সরকার প্রয়োজনে আদালত খুললে সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছে বলে মহাকরণ সূত্রে খবর।
উল্টো দিকে, কমিশনও আদালতকে জানাবে, আদালতের নির্দেশে ভোট হচ্ছে। সেই মতো নিরাপত্তা চেয়ে এখনও কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস সরকারি স্তর থেকে পাওয়া যায়নি। প্রথম দফার প্রায় ৭০ শতাংশ অতি-স্পর্শকাতর এবং স্পর্শকাতর বুথে কী ভাবে আদালত নির্দেশিত সূত্র মেনে নিরাপত্তা বাহিনী দেওয়া হবে, তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। একই ভাবে মনোনয়ন পর্বেও যে ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা ছিল, তা করতে পারেনি সরকার। ভোট পরিচালনা পর্বে যে সব ক্ষেত্রে সহমত হচ্ছে না, তা নিয়েও আদালতের নির্দেশ চাওয়া হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।

সংবিধানের ২৪৩ কে ধারা
উপধারা ১) পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরি থেকে ভোট পরিচালনা পর্যন্ত
যাবতীয় কাজের কর্তৃত্ব, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার শুধু রাজ্য নির্বাচন কমিশনের।
উপধারা ৩) কমিশন চাইলে ১ নম্বর উপধারা মেনে সুষ্ঠু ভাবে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার জন্য
সমস্ত ধরনের কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে সরকারকে নির্দেশ দেবেন রাজ্যপাল।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.