|
|
|
|
কমিশনের নিদান |
মনোনয়নপত্র দেওয়া যাবে এসডিও অফিসে
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরাপত্তার প্রশ্ন নিয়ে রাজ্য সরকারের উপরে ফের এক প্রস্ত চাপ বাড়াল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর্ব থেকেই রাজ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এমতাবস্থায় প্রার্থীরা যাতে নির্ভয়ে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, সার্বিক ভাবে তার ব্যবস্থা করার জন্য শুক্রবার রাজ্য সরকারকে চিঠি দিল কমিশন। পাশাপাশি সংঘর্ষপ্রবণ কিছু এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোনয়ন মহকুমা অফিসে (এসডিও অফিস) জমা দেওয়ারও নির্দেশ জারি করল তারা। নিরাপত্তার প্রশ্নে কমিশন যে কতখানি দায়বদ্ধ, সেটা বোঝাতেই এই জোড়া পদক্ষেপ বলে মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ।
রাজ্য সরকারকে পাঠানো চিঠিতে কমিশন বলেছে, বিভিন্ন জেলায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের হুমকি ও ভয় দেখানোও হচ্ছে। এই আশঙ্কা করেই যে নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছিল, সে কথাও চিঠিতে স্পষ্ট করা হয়েছে। একই কথা সোমবার কলকাতা হাইকোর্টকেও জানানো হবে বলে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যসচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর্বে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব।
নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মাফিক এখনও রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছয়নি। কতটা কী বাহিনী পাওয়া যাবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তাও রয়েছে। এই অবস্থায় শুধু রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়েই দায়িত্ব সারেনি কমিশন। গত তিন দিনের অভিজ্ঞতায় কমিশন দেখেছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা বেশি ঘটেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে, যা ব্লক অফিসে জমা নেওয়া হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই সব জেলায় মহকুমাশাসকের অফিসেও যাতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, কমিশন তা বিবেচনা করে দেখছে। শুক্রবার ভাঙড়-২ ও ক্যানিং-২ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোনয়নপত্র মহকুমাশাসকের অফিসে জমা নেওয়ার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। প্রথম দফার ন’টি জেলার ক্ষেত্রে আপাতত ১০টি ব্লকের জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর কোন জেলার কোন ব্লকের প্রার্থীরা এই সুবিধা পাবেন, তা আজ, শনিবার কমিশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
প্রথম দফার ভোটের শুরুতেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে গোলমালে কমিশন আতঙ্কিত। এর মধ্যে শুক্রবার দ্বিতীয় দফার চারটি জেলার (নদিয়া, মালদহ, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ) ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কমিশন। ওই জেলাগুলিতে আজ, শনিবার থেকে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শুরু হবে। নিরাপত্তা বাহিনী কম থাকায় সেখানেও গোলমালের আশঙ্কা করছে কমিশন।
বামফ্রন্টের তরফে সিপিএম নেতা রবীন দেব এ দিন মীরা পাণ্ডের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ, তিন বছর পরেও বর্ধমানের ডিএম ওঙ্কার সিংহ মিনা একই পদে রয়েছেন। হাওড়ার ডিএম-সহ সমস্ত পদস্থ কর্তা রবিবারের উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় জাতি-উপজাতির শংসাপত্র মিলছে না। তাই ওই শংসাপত্র পেশের মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি জানান তাঁরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দুই ২৪ পরগনায় প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। বর্ধমান, হুগলি, দুই মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাদের কর্মীদের মারধর করে মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি বলে লিখিত অভিযোগ করে বিজেপি-ও।
ভাতারে সিপিএমের অফিসে ঢুকে বিধানসভায় বাম মুখ্য সচেতক সৈয়দ মহম্মদ মসীহকে নিগ্রহ করা হয়। দুই তৃণমূলকর্মী গ্রেফতার হন। মেমারিতেও গোলমালে জড়িয়ে দুই তৃণমূলকর্মী গ্রেফতার হন। মেমারির মহিষগড়িয়ায় সিপিএম তৃণমূলের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ৭ তৃণমূলকর্মী হাসপাতালে। লাউদোহায় তৃণমূলকর্মীর কানে কোপ মারার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক অফিসে সর্বদল বৈঠক শেষে বাড়ি ফেরার পথে সিপিআইয়ের নন্দীগ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক কালীপদ মেইকাপকে ঘিরে তৃণমূলের লোকেরা মারধর করে বলে অভিযোগ। তিনি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ব্লক কংগ্রেস সভাপতি রামনারায়ণ গিরিকে তুলে নিয়ে গিয়ে তৃণমূল বেধড়ক পেটায় বলে অভিযোগ। খানাকুলে এক প্রার্থীকে মারধর, আর এক জনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছে সিপিএম। তৃণমূল সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে।
কমিশন সূত্রের খবর, বুধবার থেকে এ দিন সন্ধে পর্যন্ত ৭,৫৭৬টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। কমিশন সূত্রের খবর এর মধ্যে তৃণমূল প্রার্থী রয়েছেন ২,২৯৯ জন এবং সিপিএম প্রার্থী রয়েছেন ৩,৭২৩ জন। গত তিন দিনে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিরোধী দল সিপিএম শাসক দলের থেকে তুলনায় বেশি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পেরেছে।
প্রথম দফার ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই এ দিন সকালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার ভোটের পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ চলার সময় পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী অশান্তিপ্রবণ নয় এমন বুথে এক জন করে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। যদি লাঠি চালানোর মতো ঘঠনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে কী হবে? কমিশন সরাসরি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে পর্যবেক্ষকরা যে বিষয়টি তুলেছেন তা কমিশনের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হয়েছে।
|
পুরনো খবর: মনোনয়ন শুরুতেই হাঙ্গামা, অভিযুক্ত তৃণমূল |
|
|
|
|
|