নাম জড়িয়েছে আরাবুলেরও
মনোনয়ন শুরুতেই হাঙ্গামা, অভিযুক্ত তৃণমূল
শঙ্কা সত্যি করে পঞ্চায়েতে মনোনয়নপত্র জমার প্রথম দিনেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে গোলমালের অভিযোগ এসেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগ এসেছে বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর থেকেও। গোলমালে যেমন বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীরা আহত হয়েছেন, তেমনই কিছু এলাকায় আক্রান্ত হয়েছে তৃণমূলও। এবং এর ফলেই বড় হয়ে উঠেছে ভোট-পর্বের প্রথম থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি। কিন্তু সেই বাহিনী কবে মিলবে বা আদৌ মিলবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে প্রশাসনিক অফিসারদের উপরে নিয়ন্ত্রণ নিয়েও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের।
প্রশাসনের একটি মহলের বক্তব্য, যে সব এলাকায় গোলমালের আশঙ্কা ছিল, প্রথম দিনে তেমনই কিছু জায়গা থেকে হাঙ্গামার খবর পাওয়া গিয়েছে। ভাঙড়ে সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলার অভিযোগে গ্রেফতার হতে হয়েছিল প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে। এ দিন রেজ্জাক তাঁর নেতৃত্বে সিপিএম প্রার্থীদের মেরে তাড়ানোর অভিযোগ করেন। আরাবুল অবশ্য জানান, পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়াবেন বলে তিনি মনোনয়নপত্র তুলতে সকাল থেকেই ব্লক অফিসে ছিলেন। তবে সিপিএমের অভিযোগ, পলাশ গঙ্গোপাধ্যায় নামে গুরুতর আহত এক সিপিএম প্রার্থীকে কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্য দিকে, বর্ধমান থেকে যাদব বাগ নামে এক কংগ্রেস নেতাকে গুরুতর জখম অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে উদাসীন থাকার অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা।
গোলমালের খবর যে তাঁরা পেয়েছেন, বিকেলে সে কথা জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায়ও। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশে লিখিত অভিযোগও হয়েছে।
তবে এই সব কিছুর মধ্যেও কমিশন সূত্রের খবর, প্রথম দিনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে অন্য বারের তুলনায় বেশি। পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬৮টি, গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫৮টি, জেলা পরিষদে ৬টি মনোনয়ন জমা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই গোলমালের মধ্যে রাজ্যের সঙ্গে কমিশনের নতুন করে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে প্রশাসনিক অফিসারদের উপরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। পঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পঞ্চায়েত এলাকায় ওসি থেকে ডিজি পর্যন্ত সব পুলিশ অফিসারকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কমিশন। বুধবার জারি করা হয়েছে জেলাশাসকদের নিয়ন্ত্রণ করার বিজ্ঞপ্তিও। কমিশনের এই বিজ্ঞপ্তি মানতে রাজি নয় রাজ্য। রাজ্যের বক্তব্য, শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে প্রশাসনিক অফিসারেরা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সব বক্তব্য মেনে চলবেন। কিন্তু কোনও গাফিলতি হয়েছে মনে করলে শাস্তি দেওয়ার যে অধিকার কমিশন চাইছে, তা তাদের নেই বলে মনে করে রাজ্য। রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, শুধু জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এই ক্ষমতা রয়েছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত আইনে সেই ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের এই বক্তব্য মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র চিঠি দিয়ে এ দিন কমিশনকে জানিয়েও দিয়েছেন।
কিন্তু কমিশন তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে এ দিন ফের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করার দিন থেকেই সরকারি অফিসারেরা তাদের অধীনে চলে এসেছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত আইনে কি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এমন অধিকার দেওয়া হয়েছে? কমিশনের এক কর্তার মন্তব্য, তাঁরা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে চলছেন। সেই মতোই ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাজ্য পঞ্চায়েত আইনে নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি এই অধিকার দেওয়া নেই। কিন্তু ওই আইনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে যে প্লেনারি ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেই মতোই তিনি এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেন। নির্বাচন কমিশন আবার মনে করে, সংবিধানের ২৪৩ (কে) ধারা মেনে সব হওয়া উচিত। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে এ দিন বলেছেন, “আমার মনে হয় না রাজ্য সরকারকে ২৪৩ (কে) ধারা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে।”
এর সঙ্গে সমানতালে চলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনা নিয়ে জট। ৩০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এ দিন চিঠি দিয়েছে রাজ্য। প্রথম পর্বের ভোটের দু’দিন আগে থেকে পরবর্তী ১৫ দিন এই বাহিনী চেয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, ৪০০ কোম্পানি বাহিনী চাওয়া হবে। কিন্তু দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে শেষ পর্যন্ত ৩০০ কোম্পানি চাওয়া হয়েছে। দিল্লি নীতিগত ভাবে কিছু ফোর্স পাঠাতে সম্মত হলেও শেষ পর্যন্ত কত পরিমাণ আধা সেনা রাজ্যে আসবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। পঞ্জাব, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ থেকেও ১৩০ কোম্পানি পুলিশ চাওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গলবার রাতেই স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন কমিশনের সচিব তাপস রায়কে। রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে কি তাঁরা সন্তুষ্ট? তাপসবাবু বলেন, “আমাদের বক্তব্য আমরা রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে এ দিনই জানিয়ে দিয়েছি।” কমিশন সূত্রে বলা হয়, কত পরিমাণ বাহিনীর জন্য কেন্দ্রকে লেখা হবে, সেই তথ্য স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিতে জানানো হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, ৩টি রাজ্যের কাছে মোট ১৩০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছে। বাহিনীর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও বলা হবে। এ দিন কমিশনের সচিব রাজ্যকে যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। কমিশন আগের চিঠিতে বাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে চারটি বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। রাজ্যের উত্তরে তার একটি বিষয়েরও স্পষ্ট জবাব নেই বলে কমিশনের সচিব তাঁর চিঠিতে লিখেছেন।
কমিশন বুধবার যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে তারা জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশমতো পুলিশি ব্যবস্থার দায়িত্ব রাজ্যের। তা না হলে কমিশনকে যে আদালতের মত নিয়েই এগোতে হবে, তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। কমিশনের এক কর্তা জানান, যদি আদালতের নির্দেশ মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা না যায়, তা হলে ফের আদালতে গিয়েই তা জানানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। যদিও কমিশন আদালতে গেলেও ভোট হবে বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য বাহিনী আনার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। সেটাই আদালতকে জানানো হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন্দ্রের পক্ষে কি এখন ৩০০ কোম্পানি বাহিনী দেওয়া সম্ভব? নাকি কেন্দ্র পারবে না জেনেই রাজ্য ইচ্ছে করে শেষ মুহূর্তে এই চিঠি পাঠাচ্ছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি র্শীষ সূত্র জানাচ্ছেন, মার্চ মাসে পশ্চিমবঙ্গকে জানানো হয়েছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে সমস্যা হবে না। কিন্তু তখন রাজ্য কিছু চায়নি। এখন ভোট-প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম দফার ভোটগ্রহণে মাত্র এক মাস
বাকি। এত কম সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিরিক্ত বাহিনী পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে মাওবাদীরা রাজ্যে নেতাদের উপরে হামলা এবং নাশকতা চালাতে পারে বলে কেন্দ্রই রাজ্যকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানেন, তার পরে যদি কেন্দ্রই পর্যাপ্ত বাহিনী না দেয়, তা হলে ইউপিএ-সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.