দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বিক্ষিপ্ত হাঙ্গামা
ছেঁড়া হল মনোনয়নপত্র, অভিযোগ মারেরও
ব্লক অফিস থেকে সিপিএম প্রার্থীদের জন্য প্রায় আড়াইশো মনোনয়নপত্র তুলে বেরিয়ে আসছিলেন এক যুবক।
আচমকা পথ আটকে দাঁড়ান তৃণমূলের কিছু লোকজন। শুরু হয় মারধর। হাত থেকে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। অন্তত সঞ্জীব খাঁড়া নামে ওই যুবকের অভিযোগ তেমনই।
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের এই ঘটনায় সিপিএম পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও তৃণমূলের দাবি, বৃষ্টিতে তাঁদের কোনও কর্মীই ব্লক অফিসে যাননি। পুলিশও ‘খতিয়ে দেখছি’ ছাড়া কোনও আশ্বাস দেয়নি।
বস্তুত তৃণমূলের হামলা ও পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে বুধবার, মনোনয়নপত্র তোলার প্রথম দিনেই অশান্ত দক্ষিণবঙ্গ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে আরাবুল ইসলামের বাহিনীর হাতে মার খেয়ে পলাশ গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক সিপিএম কর্মী নামে ই এম বাইপাসে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ। বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি এবং দুই মেদিনীপুরেও
জায়গায় জায়গায় গোলমাল হয়েছে। যাদব বাগ নামে এক কংগ্রেস নেতাকে গুরুতর জখম অবস্থায় রাতেই বর্ধমান থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাঁকুড়াতেও সিপিএমের দু’জন হাসপাতালে ভর্তি। দু’এক জায়গায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও আক্রান্ত হন।
বর্ধমানের আহত কংগ্রেস নেতা যাদব বাগ। —নিজস্ব চিত্র
বিকেলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় জানান, বর্ধমানের বড়শুল ২ ব্লক ও খণ্ডঘোষ এবং বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটিতে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে বলে তাঁদের কাছেও খবর এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশে অভিযোগও হয়েছে। সপ্তাহের শুরুতেই জেলায়-জেলায় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, মনোনয়ন জমা দিতে বাধা পাচ্ছেন বলে কেউ জানালে পুলিশের মোবাইল ভ্যান গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করবে। কিন্তু প্রায় কোথাওই পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, “কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না-নেওয়ায় এবং পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় নির্বাচন ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।” বর্ধমানের মেমারি, খণ্ডঘোষ, আউশগ্রাম ও মঙ্গলকোট, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস, জয়পুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, পূবর্র্ মেদিনীপুরের পটাশপুর, পাঁশকুড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে বাম প্রার্থীরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
কংগ্রেসের তরফে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের কাছে এলাকা ধরে ধরে হামলার বিবরণ দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিকেলে মালদহের কংগ্রেস সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীও নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে প্রার্থীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ জানান। বিজেপি-র অভিযোগ, বর্ধমান সদর ১ ও ২, মেমারি ২, মঙ্গলকোট এবং কেশপুরে তাদের প্রার্থীদের মারধর করে ব্লক অফিসে ঢুকতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনও বর্ধমানের বড়শূল এবং কালনার বুলবুলিতলায় তৃণমূলের হামলার অভিযোগ তুলেছে। গণ্ডগোল এড়াতে ব্লক অফিসের বদলে মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএম। আজ, বৃহস্পতিবারও তাদের প্রতিনিধিদল মীরাদেবীর সঙ্গে দেখা করবে বলে কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে।
সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লাকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরে বেশ কিছু দিন দলেও কোণঠাসা ছিলেন ভাঙড়ের আরাবুল ইসলাম। রেজ্জাক এ দিন অভিযোগ করেন, “ভাঙড় ২ ব্লকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে আরাবুল ইসলামের নেতৃত্বে আমাদের প্রার্থীদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের অভিযোগ, “ব্লক অফিসের ১০০ মিটারের মধ্যেই বাম প্রার্থীদের উপরে হামলা চালানো হয়। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার অরুণ সেনগুপ্ত অবশ্য দাবি করেন, “আমার অফিসে ক্যামেরা বসানো রয়েছে। ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও গণ্ডগোল হলে ধরা পড়ত।” আরাবুলেরও দাবি, “পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়ানোর মনোনয়ন তুলতে আমি সকাল থেকেই ব্লক অফিসে রয়েছি। কোনও গোলমাল চোখে পড়েনি।”
বর্ধমানে জেলা কংগ্রেসের অভিযোগ, বিভিন্ন ব্লক অফিসে যাওয়া তাঁদের ১২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র দু’জন মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন। বাকিদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বড়শূলে বর্ধমান ২ ব্লক অফিসে গিয়ে মার খান কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা যাদব বাগ। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সিপিএমের অভিযোগ, মেমারি-২ ও খণ্ডঘোষ ব্লক অফিসের সামনে পুলিশের সামনেই তাঁদের প্রার্থীদের মারধর করে রাস্তায় শুইয়ে রাখা হয়েছিল। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “বড়শূলের ঘটনায় এক জন গ্রেফতার হয়েছে। খণ্ডঘোষে সিপিএমের অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।”
বাঁকুড়ায় বিষ্ণুপুর ব্লক অফিসের কাছে সিপিএম নেতা সুরজিৎ মণ্ডল এবং কৃষকসভার নেতা তপন দত্তকে তৃণমূলের সদস্যরা লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। তাঁরা বাঁকুড়ার হাসপাতালে ভর্তি। দলের চার প্রার্থীকে নিয়ে ব্লক অফিসে যাওয়ার সময়ে ইন্দাস জোনাল কমিটির সদস্য বাসুুদেব রায় মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনিও নার্সিংহোমে ভর্তি। হুগলির আরামবাগে ব্লক অফিসে ঢুকতে গেলেও এক কংগ্রেস কর্মীকে মারধর করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ২ ব্লকে সিপিএম এবং মোহনপুরে কংগ্রেস মারধরের অভিযোগ তুলেছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ভগবানপুর ২ ব্লকে কংগ্রেস প্রার্থীকে হুমকি, পাঁশকুড়ায় সিপিএমের জোনাল সদস্যকে মারধর এবং পটাশপুর-১ ব্লকে এক সিপিএম নেতার টাকা ছিনতাইয়েরও অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.