ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রেনে খড়্গপুরে এসে এক মাওবাদী নেতা কোন বিষয় নিয়ে গোপন বৈঠক করে চুপিসাড়ে ফিরে গেলেন, তা জানতে হিমসিম এখন পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
ছত্তীসগঢ়ের সুকমার ঘটনার পরে এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা বাড়াতে বার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। আবার, জঙ্গলমহলে শাসক দলের নেতা-বিধায়কদের হুমকি ও শাসানি দেওয়াও শুরু হয়েছে বলে
|
কিষেণজির ভাই ভূপতি।—ফাইল চিত্র |
অভিযোগ। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিন্ রাজ্যের নাম না জানা ওই মাওবাদী নেতার আগমন নিয়ে গোয়েন্দা-তথ্য।
কী বলা হয়েছে তাতে? রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ)-এর খবর, সপ্তাহখানেক আগে এক দুপুরে ট্রেনে করে ওই মাওবাদী শীর্ষনেতা ঝাড়খণ্ডের কোনও জায়গা থেকে খড়্গপুরে পৌঁছান। খড়্গপুর টাউনেই এক গোপন আস্তানায় চার জনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ওই চার জনের মধ্যে এক জনের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। সে মাওবাদীদের বেলপাহাড়ির এরিয়া কমান্ডার শ্যামল মাহাতো, বর্তমানে যার গতিবিধি মূলত বেলপাহাড়ি ও সংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা।
বাকি তিন জন সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। তবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এঁদের অন্তত এক জন মাওপন্থী বুদ্ধিজীবী, যিনি কলকাতা বা তার আশপাশের এলাকা থেকে ওই বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ঘণ্টা দুই বৈঠক করে ট্রেনেই ঝাড়খণ্ডে ফিরে যান ওই শীর্ষ মাওবাদী নেতা। তাঁর সঙ্গী ছিল শ্যামল মাহাতো। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে প্রশাসনের।
কিন্তু কে ওই মাওবাদী শীর্ষনেতা, তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক ও জল্পনা। গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, কিষেণজির ছোট ভাই মাল্লুজোলা বেণুগোপাল রাও ওরফে ভূপতিই খড়্গপুরে এসেছিলেন। তাদের বক্তব্য, কিষেণজি নিহত হওয়ার পরে একাধিক বার জঙ্গলমহলে এসেছিলেন বেণুগোপাল। খাস খড়্গপুর টাউন ও তার আশপাশে কিষেণজির একাধিক গোপন ডেরা ছিল। মৃত্যুর সপ্তাহ খানেক আগেও তিনি ওই রকম একটি ডেরায় রাত কাটিয়েছিলেন। সেই কারণে বেণুগোপালের আসার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছে গোয়েন্দাদের ওই অংশ।
আবার অন্য পক্ষের মত হল, বেণুগোপালের জন্য মাওবাদীদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিষেণজির চেয়েও বেশি। কারণ, মাওবাদীদের ‘অপারেশনাল হেডকোয়ার্টার্স’ দণ্ডকারণ্যের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বেণুগোপাল। সুতরাং তাঁর
পক্ষে নিরাপত্তাবেষ্টিত হয়ে দিনেদুপুরে খড়্গপুর শহরে এসে বৈঠক
করে যাওয়া সম্ভব নয়। এই অংশ
মনে করে, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে জঙ্গলমহল এলাকার দলের রণকৌশল ঠিক করতে মাওবাদীদের শীর্ষস্তরের কোনও সাংগঠনিক নেতা এসেছিলেন। ওই শীর্ষনেতা যেই হোন, খড়্গপুরে হওয়া ওই বৈঠকের জায়গা চিহ্নিত করাই এখন মূল কাজ বলে জানিয়েছেন আইবি-র এর কর্তা। তাঁর কথায়, “সেটা করা গেলে ওই শীর্ষনেতার পরিচয় জানতে অসুবিধা হবে না। তবে বৈঠকের কারণ যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, সে বিষয়টি এক রকম নিশ্চিত।”
রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (আইনশৃঙ্খলা) বাণীব্রত বসু বলেন, “মাওবাদীদের সাম্প্রতিক গতিবিধি সংক্রান্ত কিছু খবর আমরা পেয়েছি। তা নিয়ে খোঁজখবর চলছে। জঙ্গলমহলে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশকে চূড়ান্ত সতর্ক করা হয়েছে।”
পুলিশ আরও জেনেছে, মঙ্গলবার দিনভর লালগড়ের আমলিয়া গ্রাম-সংলগ্ন কামরাঙ্গির জঙ্গলে চার মাওবাদী ঘোরাঘুরি করেছে। তাদের এক জন দুপুর আড়াইটে নাগাদ আমলিয়া গ্রামের এক বাড়িতে গিয়ে জলও চায়। এই ব্যাপারে কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নিয়েছে পুলিশ। এই গ্রামেই নিহত মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতোর বাড়ি। শশধরের দাদা, জনসাধারণের কমিটির নেতা ছত্রধর এখন জেলবন্দি।
|