|
|
|
|
পুলিশের ধাঁচেই সোর্স নিয়োগ |
গারদে গুপ্ত ছিদ্র
খুঁজতে গোপন চর-জাল
অত্রি মিত্র • কলকাতা |
|
|
লোহার বাসরঘরে ছিদ্র থেকে গিয়েছিল? কিন্তু লৌহকপাটে?
গারদের মধ্যে কয়েক হাতের কুঠুরি। চার দিকে দেওয়াল আর ছাদ। সেই কুঠুরি ঘিরে অষ্টপ্রহর নজরদারি। আপাতদৃষ্টিতে এর বাইরে তো আর কিছুই নেই। তবু সেই কয়েক হাত গারদের মধ্যেই কী ভাবে পৌঁছে যাচ্ছে মোবাইল ফোন, মাদকদ্রব্য এবং নিষিদ্ধ আরও অনেক কিছু? কুখ্যাত বন্দিরাই বা ওই ছোট্ট কুঠুরি থেকে বাইরের অপরাধজগতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে কী ভাবে?
উত্তরটা যে কারাকর্তা ও পুলিশের জানা নেই, তা নয়। তবু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ‘রহস্য’ থেকেই যায়। সেই রহস্য উন্মোচনে জেলের মধ্যে এ বার ‘সিক্রেট সোর্স নেটওয়ার্ক’ (গোপন ‘খবরি’ বা চর-জাল) তৈরি করছে রাজ্যের কারা দফতর। অনেকটা পুলিশের ধাঁচে। ওই গোপন সোর্স বা চরদের মাসোহারা দিতে বছরে খরচ হবে ১০ লক্ষ টাকা। অর্থ দফতরের কাছে সেই টাকা খরচের অনুমোদন চেয়েছে কারা দফতর। কারাকর্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, লৌহকপাটের অন্তরালে কয়েদিদের এই রহস্যজনক কাজকারবারের হদিস দিতে পারবে ওই সব গোপন চর। আর তার জোরে সংশোধনাগারের শুদ্ধতা রক্ষার কাজ সহজ হবে।
পুলিশের গোপন নেটওয়ার্ক বা চর-জাল সব রাজ্যেই দীর্ঘ কালের চালু প্রথা। এটা অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো ব্যবস্থা। অপরাধী ধরতে অথবা তাদের গোপন ডেরার হদিস পেতে তাদের শাগরেদদেরই সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে পুলিশ। আবার অনেক ক্ষেত্রে যে-কোনও পেশার মানুষও পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন। তার জন্য তাঁরা টাকাও পান।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, সূত্রের খবর ও গোপনতা রক্ষার জন্য এই ধরনের সোর্সদের পরিচয় বাইরে প্রকাশ করা হয় না। এঁদেরও যে টাকা দেওয়া হয়, কখনওই প্রকাশ্যে জানানো হয় না সেটাও। তাঁর কথায়, “এই ধরনের সোর্স নেটওয়ার্ক চালাতে যে-অর্থ খরচ হয়, গোপন রাখা হয় তার হিসেবও। সাধারণ ভাবে এই সব অর্থ সরাসরি অনুমোদন করেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল। তাঁর কাছ থেকে এই খাতে অনুমোদন নেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনারেরা। তাঁদের মাধ্যমে সোর্সদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয় স্থানীয় থানার পুলিশ।”
মোটামুটি এই ‘মডেল’ অনুসরণ করেই আইজি (কারা)-র হাতে জেলের সোর্স নেটওয়ার্ক তৈরির যাবতীয় ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা দফতর। প্রাথমিক ভাবে এই নেটওয়ার্ক চালানোর জন্য বছরে ১০ লক্ষ টাকার তহবিল গড়ে তোলা হবে। এক কারাকর্তার কথায়, “কারা দফতরের বাজেটে এমন গোপন খরচের কোনও সংস্থান নেই। অর্থ দফতর অনুমোদন দিলে এই কাজের জন্য নতুন একটি তহবিল গড়া হবে, যা অডিটের আওতায় থাকবে না।”
নজরদারির কড়া ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নতুন একটি গোপন চর-জাল গড়ার পরিকল্পনা কেন?
সাধারণ ভাবে কারারক্ষীরা তাঁদের মতো করে জেলের ভিতরকার গোপন খবর সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে কারা দফতর। তাই জেল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গোপন চর-জাল তৈরির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কারা দফতর সূত্রের খবর, গত এক বছরে শুধু কলকাতার বিভিন্ন জেল থেকেই প্রায় ৫০০ মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। রাজ্যের সব জেল ধরলে সংখ্যাটা হাজারেরও বেশি। বন্দিদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর বেআইনি মাদক এবং অন্যান্য জিনিসপত্রও।
গত বছর জেল থেকে বন্দি পালানোর ঘটনাও ঘটেছে বেশি। কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে রয়েছে আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আফতাব আনসারি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত অক্টোবরে জেলে বসেই সে পাকিস্তানে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছে। ফেসবুক অ্যাকাউন্টও খুলেছে আফতাব। এই সব বেআইনি কাজের সঙ্গে জেলবন্দি কিছু কয়েদি তো যুক্ত আছেই। কারা দফতরের সন্দেহ, জেলের কর্মীদের একাংশও এই সব কাজে পরোক্ষ মদত দেন। সোর্স নেটওয়ার্ক তৈরি হলে এই সব গোপন কাজকর্মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা সহজ হবে বলে মনে করেন কারাকর্তারা।
গোপন চর-জালের সদস্য হিসেবে কাদের নির্বাচন করা হবে?
কারা দফতরের খবর, গোপন সোর্স হিসেবে মূলত কয়েদি ও কারাকর্মীদেরই বেছে নেওয়া হবে।
ওই চরেরা গোপনে খবরাখবর সংগ্রহ করবেন কী ভাবে? “এটা জানিয়ে দিলে তো আর গোপন কিছু থাকবে না! তবে এটা ঠিক যে, আমরা জেলের নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি,” বললেন রাজ্যের আইজি (কারা) রণবীর কুমার।
|
|
|
|
|
|