মনোনয়ন থেকেই ভিডিওগ্রাফির নির্দেশ দিলেন মীরা
ঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পেশের সময় থেকেই নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি চাইছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। সেই লক্ষ্যেই জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে প্রথম দফার বৈঠকে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার ৯ জেলার পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মীরাদেবী। সেখানে মনোনয়ন পেশের সময় ভয় দেখিয়ে প্রার্থীকে আটকানোর প্রসঙ্গও ওঠে। কমিশন জানতে পেরেছে, রাজ্যের বহু এলাকায় এমন আশঙ্কায় ভুগছে বিভিন্ন দল। তা রুখতে প্রয়োজনে মনোনয়ন-পর্ব থেকেই ভিডিওগ্রাফি বা ভিডিওয় ছবি তোলার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার। আজ, রবিবার বাকি ৮ জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্য সরকারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে ভোটপর্বের শেষ দিন এবং জেলাবিন্যাস নিয়ে নিজেদের আপত্তি এবং মতামতও জানিয়েছে কমিশন। আরও জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেবে তারা।
পঞ্চায়েত ভোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, “এটা রাজ্য সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যের বিষয়। আশা করছি দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।”
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এ দিন যে সব দাওয়াইয়ের কথা বলেছেন নির্বাচন কমিশনার, তা এক কথায় নজিরবিহীন। এক দিকে যেমন ভিডিওগ্রাফির কথা বলেছেন তিনি (কোনও ভোটেই মনোনয়ন পেশের সময় থেকে এমন ছবি তোলার ব্যবস্থা বেনজির), অন্য দিকে তেমনই নামে-বেনামে সব অভিযোগ নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের উপরেও জোর দিয়েছেন। ডিএম-এসপিদের তিনি বলেছেন, আতঙ্ক কাটিয়ে সকলের জন্য সমানাধিকারের ব্যবস্থা করতে না পারলে মনোনয়ন-পর্বেই বহু আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফয়সালা হয়ে যেতে পারে। প্রশাসনিক ভাবে তা অভিপ্রেত নয়। সে জন্য সম্ভাব্য গোলমালের এলাকা বেছে নিয়ে টহলও চালাতে হবে।
মীরাদেবীর এই প্রস্তাব শুনে দু’এক জন জেলাশাসক বৈঠকে বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশি টহলদারিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। কোনও পক্ষ অভিযোগ তুলতে পারে, পুলিশ দিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।” এ কথা শুনে মীরাদেবী জানিয়ে দেন, এমন অভিযোগ অমূলক। পুলিশি টহল এখন থেকেই শুরু করতে হবে। অবাধ নির্বাচনের জন্য তা অত্যন্ত জরুরি।
একই সঙ্গে মীরাদেবী স্পষ্ট করে দেন, জনসভা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে সমস্ত দলের সমানাধিকারের ব্যবস্থা করাটাই প্রশাসনের সব থেকে বড় কাজ। কেউ যেন অভিযোগ করতে না পারে, কোনও বিশেষ দলের প্রতি প্রশাসন পক্ষপাত করছে। তিনি জেলাশাসকদের বলেন, বড় নেতা এবং তারকা প্রচারকারীদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি তুলে রাখতে হবে।
অভিযোগপত্র গ্রহণের উপরেও জোর দেন মীরাদেবী। জানান, সব জায়গায় অভিযোগপত্র গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব অভিযোগ বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রহণ করতে হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা-ও জানাতে হবে অভিযোগকারীকে। এ দিন জেলাশাসকরা অতি-স্পর্শকাতর এবং স্পর্শকাতর বুথের তালিকা জমা দিয়েছেন কমিশনে। হাইকোর্টের নির্দেশমতো যাতে প্রতিটি বুথে নির্দিষ্ট সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ থাকে, সেই ব্যবস্থাও করতে বলেছেন মীরাদেবী।
সাত দাওয়াই
• মনোনয়ন পেশে ভয় দেখালে কড়া ব্যবস্থা
• ভিডিওগ্রাফি করতে হবে মনোনয়ন-পর্বের
• তারকা প্রচারকদের প্রতিটি পদেরও ভিডিওগ্রাফি
• মনোনয়ন থেকেই উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় টহল
• জনসভার মাঠ ব্যবহারে সমানাধিকার
• নামে, বেনামে সব অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিকার
• দাগিদের গ্রেফতার করা শুরু

প্রশাসনিক প্রস্তুতির ফাঁকেই এ দিন রাজ্যের ঘোষিত দিন এবং জেলাবিন্যাসে আপত্তি জানিয়ে পাল্টা চিঠি দিয়েছে কমিশন। সরকার প্রথম দফায় ৯টি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় চারটি করে জেলায় ভোট চেয়েছে। কমিশন চায়, প্রথম দফায় ৬টি, দ্বিতীয় দফায় ৫টি এবং তৃতীয় দফায় ৬টি জেলায় ভোট হোক। হাওড়ায় জুনের গোড়ায় লোকসভা উপনির্বাচন থাকায় সেখানে শেষ দফায় ভোট চায় কমিশন। অথচ রাজ্য চায়, প্রথম দফাতেই ভোট হোক হাওড়ায়। এ নিয়ে মতভেদ এখনও মেটেনি। ১০ জুলাই রথযাত্রা থাকায় কমিশন চায় ভোট হোক ১১ তারিখ। আর রমজান মাস শুরু হয়ে যাবে বলে রাজ্য চায় ৯ তারিখেই হোক তৃতীয় দফা। কমিশনের সচিব তাপস রায় শনিবার বলেন, “দিন ও জেলার কিছু বদল চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি। জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের এখন থেকেই অবাধ ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।” কমিশন ও প্রশাসনের সামনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন রাখাই বড় পরীক্ষা, তা এ দিন বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতাদের কথাতেই স্পষ্ট। কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস ৪১ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে মাত্র ২০ হাজারে প্রার্থী দিতে পেরেছিল। কারণ সিপিএমের সন্ত্রাস। ২০১১ সালে নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ দিয়ে অবাধ ভোট করিয়েছিল। আশা করব, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ধাঁচেই ভোট করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।”
সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, “বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সন্ত্রাস হবে বলে আমরা কমিশনকে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছি। ভোটের চারটি পর্ব: মনোনয়ন, প্রচার, ভোটগ্রহণ এবং গণনা। কমিশনের কাজ প্রতিটি পর্বেই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। ডিএম-এসপিদের সেই নির্দেশ দিয়ে উচিত কাজই করেছেন কমিশনার। এখন সে সব জেলাস্তরে মানা হলেই ভাল।” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, শাসকদলের সন্ত্রাস ও নির্বাচনী বিধি ভাঙার প্রতিটি ঘটনা পুলিশের সঙ্গে কমিশনকেও জানানো হোক। এত দিন এই অভ্যাস ছিল না সিপিএমের। সেটাই গড়ে তুলতে বলছেন সূর্যবাবু। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগে তো পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলই সন্ত্রাসের শিকার হতো। সুতরাং আমরা চাই, অবাধ ভোটের ব্যবস্থা করুক কমিশন। সিপিএমের কুকীর্তির কারণেই মানুষ ওদের ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাই এ বার পঞ্চায়েতে মানুষের আর্শীবাদ আমরাই পাব।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.