|
|
|
|
দিন দিল রাজ্য, কমিশন দ্বিমত জেলা ভাগ নিয়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জেলাবিন্যাস নিয়ে কমিশনের আপত্তির মধ্যেই শুক্রবার ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করল রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তি এ দিন বিকেলের আগেই পৌঁছে যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে কী আছে, তা কমিশনে হওয়া সর্বদলীয় বৈঠকের প্রতিনিধিদের জানিয়েও দেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। তবে নির্বাচন কমিশন এ দিন তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। কমিশন সূত্রে বলা হয়, তৃতীয় দফার ভোটের দিন নিয়ে এ দিন বৈঠকে থাকা রাজনৈতিক দলগুলির কেউ কেউ আপত্তি তুলেছে। তা ছাড়া জেলাবিন্যাস নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব কমিশনের মনঃপূত হয়নি। তাই এ ব্যাপারে তারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আরও অন্তত এক দফা আলোচনা চায়। আগামী সোমবার সেই আলোচনা হওয়ার কথা। তার পরেই নির্বাচন কমিশন ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে। কমিশন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হবে।
তবে ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে মোটামুটি ভাবে দু’পক্ষের যে বিশেষ মতভেদ নেই, তা এ দিনের সর্বদলীয় বৈঠকের পরে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এ দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজ্য জানায়, ২, ৬ এবং ১০ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট হবে। ১০ জুলাই রথযাত্রা। ওই দিন রমজান মাসও শুরু হচ্ছে। কমিশন তাই আজ, শনিবার রাজ্যকে প্রস্তাব দিয়ে বলবে, তৃতীয় দফার ভোট আগে বা পরে করা হোক। রাজ্য সেই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হতে পারে বলেই মহাকরণ সূত্রের খবর। তাই এখন কেবল জেলাবিন্যাসের উপরেই দু’পক্ষের মতপার্থক্য দাঁড়িয়ে রয়েছে। উত্তরবঙ্গ সফর সেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ফিরে এসেছেন। মহাকরণ সূত্রে বলা হয়, তিনি চান, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে পঞ্চায়েত ভোট সময়েই শেষ হোক। কোথাও বিরোধ থাকলে মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাতে হস্তক্ষেপ করবেন বলেও মহাকরণের সূত্রটি জানিয়েছেন। |
|
অন্য দিকে, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে তাদের তীব্র আপত্তি থাকলেও পঞ্চায়েত ভোট যাতে সুষ্ঠু ভাবে হয়, সে জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বলে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়া আবেদনে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। এ দিন সর্বদলীয় বৈঠকে মীরাদেবীর কথাবার্তায়ও এই মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে বলে বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। সব পক্ষই মনে করছেন, কিছু কিছু বিষয়ে আপত্তি থাকলেও আগামী সপ্তাহেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এ দিন সর্বদলীয় বৈঠকের পরে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মীরা পাণ্ডের বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মহাকরণ সূত্রের দাবি।
জেলাবিন্যাস নিয়ে কমিশনের প্রধান আপত্তি হাওড়া-কেন্দ্রিক। এক কমিশন-কর্তা জানান, রাজ্যের প্রস্তাবিত সূচিতে হাওড়ায় ২ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। কিন্তু ২ জুন হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন থাকায় সেখানকার জেলাশাসক এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় চলে গিয়েছেন। সেই ভোট প্রক্রিয়া শেষ না হলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন তাঁকে পাবে না। এতে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন কমিশন-কর্তারা।
সরকার চায়, প্রথম পর্যায়ে কলকাতার আশপাশে ছ’টি জেলার সঙ্গে জঙ্গলমহলের তিনটি জেলারও ভোট হোক। পরের ধাপে মালদহ, মুর্শিদাবাদের সঙ্গে নদিয়া, বীরভূমে এবং তৃতীয় ধাপে দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে ভোট চেয়েছে সরকার। কমিশন ঠিক তার উল্টো বিন্যাসে ভোট চাইছে। অর্থাৎ, প্রথম পর্যায়ে উত্তরবঙ্গের চারটি জেলার সঙ্গে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দ্বিতীয় পর্যায়ে নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি এবং বীরভূমে আর শেষ পর্যায়ে জঙ্গলমহলের তিন জেলার সঙ্গে, হাওড়া, বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুরে। তবে আগামী সোমবার কমিশন এবং রাজ্যের যে বৈঠক হওয়ার কথা আছে, তাতে জেলাবিন্যাস নিয়েও মতভেদ মিটে যাবে আশা করা হচ্ছে।
আজ, শনিবার নিরাপত্তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। এ দিনই মহাকরণে স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। রাজ্যের প্রস্তাব মতো প্রথম দফায় ৯ জেলায় ভোট করাতে হলে অন্তত ৫৮ হাজার সশস্ত্র পুলিশ প্রয়োজন। সাধারণ কনস্টেবল মেলালে এই সংখ্যাটা পৌঁছবে প্রায় ১ লক্ষে। অথচ রাজ্যের হাতে রয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার সশস্ত্র পুলিশ। কলকাতা পুলিশ থেকে মিলতে পারে আরও ১০ হাজার। ফলে ভিন রাজ্য থেকে অন্তত ২০০ কোম্পানি সশস্ত্র পুলিশ আনতে হবে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও পঞ্চায়েত ভোট যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে হয়, তার জন্য এ দিন সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে কমিশন। সেখানেই রাজ্য সরকারের জারি করা ভোটের শেষ দফার দিন বদলের অনুরোধ করেন বিরোধীরা। এক কমিশন-কর্তা বলেন, “এ দিনের সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধীরা ১০ তারিখে রথযাত্রার প্রসঙ্গ তুলে তার বদলে আগে বা পরে ভোট করার অনুরোধ করেন। সেইমতো রাজ্যকে চিঠি দিচ্ছে কমিশন।” বৈঠক থেকে বেরিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “বাম আমলে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিল তৎকালীন সরকার। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঠিক সময়ে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট চাই।” আগেও সরকার বলেছে, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। জানিয়েছে, মমতার আমলে রাজ্যে যে ক’টি নির্বাচন হয়েছে, তার সবগুলি ছিল অবাধ ও শান্তিপূর্ণ।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কমিশনের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে এই দিন বামফ্রন্টের এবং কংগ্রেস প্রতিনিধিরা বারবার মনোনয়ন শুরুর দিন থেকে ভোট গোনার দিন পর্যন্ত সর্বস্তরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়েছেন। তবে মীরাদেবী এই দিন বৈঠকের শুরুতেই জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আদালত তাদের নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে চলবে কমিশন। সুতরাং এই নিয়ে আর কোনও আলোচনা নয়।
বৈঠকে সিপিএমের রবীন দেব বলেন, বর্তমান আমলে বিধানসভা ও লোকসভার যে ক’টি উপনির্বাচন হয়েছে, সেখানে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাই ভোট অবাধ ও শান্তিতে হয়েছে। কিন্তু সমবায় ভোট, কলেজ ভোটেও রাজ্যের পুলিশ শান্তি রাখতে পারছে না। গার্ডেনরিচে কলেজ ভোটের পর কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে সরিয়ে দিতে হয়েছে। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, “রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাই রাজ্য পুলিশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীরও দাবি জানাচ্ছি আমরা।” তিনি বলেন, যাতে প্রার্থীরা অবাধে মনোনয়নপত্র জমা করতে পারেন তার জন্যও যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। আগের ভোটে যেমন বহু মানুষ মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তেমন অবস্থা যেন না হয়। |
পুরনো খবর: পঞ্চায়েত ভোট: রাজ্যকে আজ পাল্টা চিঠি দিচ্ছে কমিশন |
|
|
|
|
|