পঞ্চায়েত ভোট: রাজ্যকে আজ পাল্টা চিঠি দিচ্ছে কমিশন
ঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য সরকারকে আজ সোমবার পাল্টা চিঠি দিতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। চিঠির বয়ান কী হবে, তা সোমবারই দুপুরে বৈঠকে বসে ঠিক করবেন কমিশনের তিন শীর্ষ কর্তা। কমিশন সূত্রের খবর, ওই চিঠিতে ভোটের দিন নিয়ে রাজ্য সরকারকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হবে।
রাজ্য সরকার ২৬ এপ্রিল ১৪টি জেলা এবং ৩০ এপ্রিল তিনটি জেলায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশন সূত্রে রবিবার বলা হয়, কমিশন যে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধী, তা রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়ে দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন মনে করে, রাজ্য সরকার যদি দু’দিনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে চায়, সে ক্ষেত্রে জেলাগুলিকে সমান ভাবে বিভাজন করা উচিত। সেই মতো রাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব দেবে তারা। কমিশনের সূত্রটি বলেন, হয় রাজ্য সরকার জেলাগুলিকে সমান ভাবে ভাগ করুক, নয়তো কমিশনের প্রস্তাব মেনে তিন দিনে ভোট করুক। প্রতিটি বুথে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার কী ভাবছে, তা-ও চিঠিতে জানতে চাইবে কমিশন।
রবিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের সচিব তাপস রায় ও সহ-সচিব রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলকে নিয়ে নিজের দফতরে দফায় দফায় বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
যে সব রাজ্যে পঞ্চায়েত বা পুর ভোট নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সেখানকার কমিশনের সংঘাত হয়েছে, তেমন কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার ও অন্য অফিসারদের সঙ্গে এ দিন মীরাদেবী কথাও বলেন বলে সূত্রের খবর। সন্ধ্যায় আইনজ্ঞের সঙ্গেও কথা বলেন কমিশন কর্তারা। অর্থাৎ সব পথই খোলা রাখছেন তাঁরা।
রাজ্য সরকার শুক্রবার এক তরফা ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের সামনে তিনটি পথ খোলা ছিল। (১) রাজ্যের প্রস্তাব মেনে নেওয়া কিংবা রাজ্যকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য চিঠি দেওয়া। (২) রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করা এবং (৩) আদালতের শরণাপন্ন হওয়া। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে আদালতে যাওয়াটাই কমিশনের পক্ষে সব থেকে সুবিধাজনক বলে কমিশনের মধ্য থেকেই প্রস্তাব উঠেছিল।
রবিবার সারা দিন বৈঠকের পরে কমিশন সূত্রে বলা হয়, “আগে রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে জবাবের জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করা হবে। তার পরে ভাবা হবে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা।” তাপস রায় জানান, এই ধরনের চিঠি সাধারণত লোক দিয়েই পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রেও লোক দিয়েই চিঠি পাঠানো হবে মুখ্যসচিব এবং পঞ্চায়েত সচিবের কাছে।
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সরকার তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। কমিশন তাদের সিদ্ধান্তের কথা সরকারকে জানাক। এর আগে আমাদের কিছু বলার নেই।” সুব্রতবাবু এ দিনও জানিয়েছেন, দু’দফায় ভোট চেয়ে যে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হয়েছে, রাজ্য সরকার সেই অবস্থানেই আছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পঞ্চায়েত দফতরের সেই মর্মেই আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকার এখনও মনোভাব পরিবর্তনের কোনও কারণ দেখছে না।
কমিশন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকার তাদের সুপারিশ ফের খারিজ করে দিলে কমিশন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করতে পারে। সেখানেও সমস্যা না মিটলে কমিশন আইনের পথে যাওয়ার রাস্তা খোলা রাখছে।
কমিশনের সচিব এ দিন বলেন, “সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণের জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাবে কমিশন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাটা আমাদের দায়িত্ব।” অতীতে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে শাসক তৃণমূল। নির্বাচন কমিশন সূত্রের বক্তব্য, ২০১০ সালের পুর নির্বাচনে কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল। কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারকে সোমবার তারা যে চিঠি দিচ্ছে, তাতে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হবে। কমিশনের সচিব বলেন, “আমরা বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এ দিকে, রাজ্য সরকার নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দেওয়ায় সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের শিলান্যাস এবং সংশ্লিষ্ট নানা কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে গেল কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেই বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হবে।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে সংঘাত তৈরি হয়েছে, তাকে নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সচিব। বামফ্রন্ট আমলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক কখনওই এত তিক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কমিশনের আমলারা। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ২০১০ সালে পুর ভোটের নির্ঘণ্ট তৈরি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে মতপার্থক্য তৈরি হলেও রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত কমিশনের মতই মেনে নেয়। এবং ঘটনাচক্রে তখনও রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এই মীরা পাণ্ডেই!
বামফ্রন্ট সরকারের একাধিক মন্ত্রীর বক্তব্য, তাঁরা অনেক আগে থেকেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিতেন। পঞ্চায়েত সচিব কিংবা পুর সচিব নির্বাচন কমিশনের সচিবের সঙ্গে কথা বলতেন। সেই মতো একটা নির্ঘণ্ট তৈরি হতো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সেই মতো একটি ফাইল তৈরি করে তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাতেন।
মুখ্যমন্ত্রী সেই ফাইল মুখ্যসচিবের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। মুখ্যসচিব চূড়ান্ত আলোচনা করতেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দু’পক্ষ সহমত হতেন। তার পরে পঞ্চায়েত সচিব কিংবা পুরসচিব সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতেন। প্রায় একই সময়ে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করে দিত। কোথায় কত নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে, তা-ও জানিয়ে দেওয়া হোত। ২০১০ সালে পুর ভোটে কী হয়েছিল? তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য রবিবার বলেন, “রাজ্য সরকার চেয়েছিল কলকাতা, বিধাননগর পুরসভার সঙ্গে অন্য সব পুরসভার নির্বাচন এক দিনেই করা হোক। কিন্তু মীরা পাণ্ডের মত ছিল, কলকাতা ও বিধাননগর পুরসভার নির্বাচন এক দিনে হোক। বাকি পুরসভাগুলির নির্বাচন হোক আর এক দিনে। পরে রাজ্য সরকার নির্বাচন কমিশনারের মতই মেনে নিয়েছিল। তাই কোনও সমস্যা হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.