কম-বেশি সন্ত্রাসের অভিযোগ আসছে সব জেলা থেকে। ভয়-ভীতির মোকাবিলা করে সর্বত্র প্রার্থী দেওয়া কত দূর সম্ভব, আশঙ্কা রয়েছে জেলা নেতৃত্বের। তবু ‘সন্ত্রাসে’র ভয়ে পঞ্চায়েত ভোটের সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে গাফিলতি চলবে না বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সমস্যা যা-ই থাক, সব আসনেই প্রার্থী দেওয়ার জন্যই দলকে তৈরি হতে হবে বলে তাঁর নির্দেশ।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রবিবার আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির যে বৈঠক বসেছিল, সেখানেই সন্ত্রাসের কথা তুলে আনেন পশ্চিম ও পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমানের মতো কিছু জেলার প্রতিনিধিরা। জেলার নেতারা বলেন, কোথাও প্রত্যক্ষ সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। কোথাও হুমকি-হয়রানির পদ্ধতি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে শাসক দল। এই অবস্থায় সব আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকী, পিছন থেকে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেও পরিত্রাণ পাওয়া মুশকিল। আবার সংরক্ষণের জন্য এ বার পঞ্চায়েতের আসন বিন্যাসের যে চেহারা হয়েছে, তাতে সংরক্ষিত আসনগুলিতে উপযুক্ত প্রার্থীর সন্ধান করা সমস্যাজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জেলাগুলির বক্তব্য শোনার পরে জবাবি ভাষণে বিমানবাবু বলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় বাম আমলেই সন্ত্রাসের কবলে পড়ে এক বছরে ৬৫ জন কর্মী-সমর্থক প্রাণ দিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুরেও দল আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সব জেলায় সন্ত্রাসের চিত্র এক রকম নয়। তাই সন্ত্রাসকে ‘অজুহাত’ হিসাবে খাড়া করে যে কোনও জেলার নেতৃত্ব যেন ময়দান থেকে সরে না-আসেন! |
আলিমুদ্দিনে সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিমান বসু, নিরুপম সেন ও সূর্যকান্ত মিশ্র। —নিজস্ব চিত্র |
জেলায় জেলায় বামফ্রন্টের মধ্যে আসন বণ্টনের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। বেশির ভাগ জেলাতেই আসন ভাগের আলোচনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। রাজ্য সম্পাদকের নির্দেশ, এ বার যে কোনও মূল্যে বাম ঐক্য বজায় রাখতেই হবে। আপস চলবে না। শরিক দলের সঙ্গে সিপিএমের দাবির সংঘাতে একান্তই রফা বেরোনোর মতো পরিস্থিতি না-থাকলে বড় দল হিসাবে প্রয়োজনে তাঁদেরই ‘আত্মত্যাগ’ করতে হবে বলেও রাজ্য কমিটিকে পরামর্শ দেন বিমানবাবু।
বৈঠকের শুরুতে বিমানবাবুই এ দিন তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকারের প্রতি রাজ্যের সর্বত্র মানুষের মনোভাবে বিরাট পরিবর্তন যে এখনও হয়নি, তিন কেন্দ্রে মিশ্র ফলই তার ইঙ্গিত। কিন্তু শাসক দল সম্পর্কে জনমনে যতটুকু অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে তাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে সিপিএমের কর্মীরা এখনও যথেষ্ট সক্রিয় হচ্ছেন না। এই সূত্রেই মালদহের ইংরেজবাজারের (যেখানে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজ্য সম্পাদক বলেন, সেখানে অতীতে ৩৩% ভোট পেয়েও তাঁদের জয় এসেছে। আবার ৩৮%, কখনও ৪৫% ভোট পেয়েও সিপিএমকে হারতে হয়েছে। কিন্তু ভোটের হার এর আগে কখনওই ৩০%-এর নীচে নামেনি! এর কারণ অনুসন্ধানে গভীর ভাবে মনোযোগী হতে হবে। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যায়, সব মিলিয়ে মালদহ জেলা নেতৃত্বের কাজে বিমানবাবু যে সন্তুষ্ট নন, তা-ই বৈঠকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি সংক্রান্ত রাজ্য কমিটির এ দিনের বৈঠকে পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার তিন জেলা সম্পাদক কানু সাহু, বীরেশ্বর লাহিড়ী ও গৌতম দেব উপস্থিত ছিলেন না। আসতে পারেননি দার্জিলিঙের সান্দোপাল লেপচা ও আনন্দ পাঠকও। এঁরা সকলেই অবশ্য অনুপস্থিতির কথা দলকে জানিয়েছিলেন। বিমানবাবু সেই কথা বৈঠকে জানিয়েই বলেন, যাঁরা কিছু বলেননি, তাঁদের ব্যাপারে কিছু বলতে তিনি ‘নাচার’! শমীক লাহিড়ীর মতো যে নেতারা বারবার বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেই দিকেই বিমানবাবুর ইঙ্গিত ছিল বলে দলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। |