|
|
|
|
সংঘর্ষ মেমারি ও হরিপালে |
পুলিশে ভরসা নেই, জমায়েত করেই প্রতিরোধ সিপিএমের
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে জায়গায়-জায়গায় ব্লক অফিসের কাছে জমায়েত করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে সিপিএম। যার মধ্যে অনেকের কাছেই অস্ত্র থাকছে বলে অভিযোগ। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের সম্ভাবনাও ক্রমশ প্রবল হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারই বর্ধমানে মেমারি-২ ব্লক অফিসের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের কর্মী-সমর্থকেরা। ঘটনাস্থল থেকে তির ও ধনুক-সহ দুই সিপিএম সমর্থককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার স্পষ্টই বলছেন, “সব জায়গায় জমায়েত করেই আমরা মনোনয়ন জমা দিতে যাব। তৃণমূলের লোকেরা চড়াও হলে প্রতিরোধ হবে।” যদিও তির-ধনুক কাঁধে আদিবাসীরা ছাড়া আর কারও অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেননি।
দু’পক্ষে ইট ছোড়াছুড়ি হয়েছে হুগলির হরিপালেও। তাতে শুধু দুই দলের কর্মী-সমর্থকেরাই নন, হরিপাল থানার ওসি বঙ্কিম বিশ্বাস-সহ পাঁচ পুলিশকর্মী অল্পবিস্তর জখম হয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, পাল্টা মার দেওয়ার রাস্তা নিলে সিপিএমের কার্যত দু’দিক দিয়ে লাভ। মনোনয়ন জমা করার রাস্তা তো খুলবেই, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা শিকেয় উঠেছে বলে শোরগোল করার রাস্তাও সুগম হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনেও অবশ্য বেশির ভাগ জায়গায় সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থীদেরই মার খাওয়া ও মনোনয়ন জমা দিতে বাধা পাওয়ার অভিযোগ অব্যাহত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে ফের জামিনে থাকা তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এবং বর্ধমানের লাউদোহা-সহ বেশ কিছু জায়গায় সিপিএমের প্রার্থীরা মার খেয়েছেন বলে অভিযোগ। |
|
মেমারিতে সিপিএম সমর্থকদের জমায়েত। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র |
ভাঙড় প্রসঙ্গে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “ভোটের সঙ্গে লোহার রড, পিস্তল, কাটারির সম্পর্ক নেই। আরাবুলের আশ্রিত খুদে, জুলফিকার, সিরাজুল এ সব নিয়ে এসেছিল।” পুলিশ-প্রশাসন নিজেদের ভূমিকা ভুলে একটি দলের হয়ে কাজ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের কাছে একই অভিযোগ জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এবং দলের নেতা মানস ভুঁইয়া। তাঁদের দাবি, ব্লক অফিসগুলির সামনে ১৪৪ ধারা জারি করা হোক এবং প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে ভিতরে নিয়ে যান। এআইইউডিএফ নেতা সিদ্দিকুল্লাও কমিশনের কাছে তাঁদের অভিযোগ জানিয়েছেন।
নিরাপত্তার স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া নিয়ে জলঘোলার পরে রাজ্য সরকার এখন দাবি করছে, ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে নয়, রাজ্যের হাতেই থাকবে। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের ওই দাবি বিস্ময়কর এবং বিভ্রান্তিকর। এটা হতে পারে না।” রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার যে সব প্রশ্ন তুলেছে, তার আইনগত দিক খতিয়ে দেখে তারা উত্তর দেবে।
মেমারি-২ ব্লকে বুধবার তৃণমূলের বাধায় সিপিএম একটিও মনোনয়ন জমা করতে পারেনি বলে অভিযোগ। এ দিন প্রচুর লোকজন নিয়ে তারা ফের পাহাড়হাটিতে ব্লক অফিসে যায়। তার মধ্যে তির-ধনুক-লাঠি হাতে প্রচুর লোক ছিল বলে অভিযোগ। অফিস থেকে খানিকটা দূরে বেশির ভাগ লোককে দাঁড় করিয়ে রেখে প্রার্থী ও নেতারা এগিয়ে যান। তখনই তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের মেমারি ২ পশ্চিম লোকাল সম্পাদক অমল ঘোষকে মারধর করা হয়। তা দেখে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সিপিএমের লোকজন রে-রে করে তেড়ে যান। মারপিট বেধে যায়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপিএম প্রার্থীদের ব্লক অফিসে ঢুকিয়ে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।
বর্ধমানেরই লাউদোহায় অবশ্য ব্লক অফিসের রাস্তা আটকে সিপিএমের প্রার্থীদের চড়চাপড় দিয়ে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। আউশগ্রামে ব্লক অফিস থেকে দুই বিজেপি প্রার্থীকে মেরে-ধরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কেতুগ্রাম ১ ব্লকে আবার এসইউসিআইয়ের প্রার্থীদের হাত থেকে মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বুধবার বড়শূলে গণ্ডগোলের পরে এ দিন বর্ধমান ২ ব্লক অফিসে কোনও দলের একটিও মনোনয়ন জমা পড়েনি।
নন্দীগ্রাম ২ ব্লক অফিসে এ দিন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য সুরপতি দেবনাথের নেতৃত্বে মনোনয়ন জমা করেছিলেন বেশ কয়েক জন। সন্ধ্যায় রেয়াপাড়ায় বাড়ির কাছেই একটি চা দোকানে তাঁকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। পাঁশকুড়া ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক অফিসের কাছ থেকে বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া, মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল অবশ্য সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে।
বিরোধীরা বারবার শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুললেও, ঘটনাচক্রে প্রথম দু’দিনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলের চেয়ে এগিয়ে আছে সিপিএম। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, বুধবার গ্রাম পঞ্চায়েতে যে ২০৭৯টি মনোনয়ন জমা পড়ে, তার মধ্যে ৮৪১টি দিয়েছে সিপিএম। তৃণমূল দিয়েছে ৬১৮টি। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আসা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪৫৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩৪৯টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৩০টি জেলা পরিষদ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে। সিপিএম যেখানে ১১৪২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে মনোনয়ন দিয়েছে, তৃণমূল দিয়েছে ৮১২টিতে।
তৃণমূল সূত্রে দাবি, বিরোধীরা যে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা পাচ্ছেন না, তা এতেই স্পষ্ট। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, বেশির ভাগ জায়গায় গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি তৃণমূল। তাই গোড়ায় তারা মনোনয়ন জমা করায় পিছিয়ে আছে। আর এই ফাঁকেই দ্রুত ঘর গুছিয়ে নিতে চাইছে মরিয়া সিপিএম।
|
পুরনো খবর: ছেঁড়া হল মনোনয়নপত্র, অভিযোগ মারেরও |
|
|
|
|
|