সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে আমানতকারীরা কবে কতটুকু টাকা ফেরত পাবেন, আদৌ পাবেন কি না, তা নিয়ে সর্বস্তরেই সংশয় আছে। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন যাতে আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেন, তার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকেও উদ্যোগী হতে বললেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত।
বৃহস্পতিবার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের এক আলোচনাসভায় অসীমবাবু জানান, সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই প্রান্তিক চাষি বা ছোট ব্যবসায়ী। সারদায় রাখা তাঁদের টাকা তছরুপের ফলে তাঁরা অথৈ জলে পড়ে গিয়েছেন। এই বিপদ কাটিয়ে ওঠার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির উচিত, তাঁদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া। সেই সঙ্গেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দাবি, সারদার সমস্ত সম্পত্তি আটক ও নিলাম করে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকেই।
কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি কী ভাবে ঋণ দেবে ক্ষতিগ্রস্তদের? অসীমবাবু জানান, এ রাজ্য থেকে ব্যাঙ্কগুলি প্রতি বছর প্রায় চার লক্ষ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। তার বদলে ঋণ দেওয়া হয় মাত্র দু’লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। শতাংশের হিসেবে সেটা ৬০-এর কিছু বেশি। অথচ অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে মোট আমানত সংগ্রহের ৯০ শতাংশই ঋণ বাবদ দেওয়া হয় বলে জানান প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। সারদা কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের কেন ব্যাঙ্কঋণ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে অসীমবাবু বলেন, ওই ঘটনায় ছোট চাষি বা ব্যবসায়ীরা আর্থিক দিক থেকে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে উৎপাদন মার খেয়েছে। সেই উৎপাদন বাড়ানোর জন্যই চার শতাংশ সুদে ব্যাঙ্কঋণ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, পরিষেবা বাড়ানোর জন্য রাজ্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখা বাড়াতে হবে।
সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেছে। তার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা সিগারেটের উপরে কর বসিয়ে আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসীমবাবুর বক্তব্য, এ ভাবে কর বসানো হলে সারদা কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তেরাও তার আওতায় পড়বেন। ফলে ওই ভাঁড়ারে তাঁদের টাকাও জমা হবে। অর্থাৎ কেলেঙ্কারিতে তাঁদের ক্ষতি যা হওয়ার, তা তো হয়েছেই। তার উপরে সরকার এই বাড়তি কর বসানোয় তাঁদের উপরে চাপ বাড়বে।
অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি নিয়ে সেবি-র তদন্তের প্রসঙ্গে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালের ২৩ এপ্রিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সারদা-সহ চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে সেবি-র কাছে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিল। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সেবি সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সারদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে অসীমবাবুর দাবি। কিন্তু এই ব্যবস্থা নিতে সেবির তিন বছর সময় লাগল কেন, এ দিন সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
সারদা কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই এবং অন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মনোভাবেরও সমালোচনা করেছেন অসীমবাবু। তিনি বলেন, সারদা গোষ্ঠী অন্যান্য রাজ্যেও ব্যবসা করত। সেখানেও তাদের সম্পত্তি রয়েছে। ফলে মোট সম্পত্তির হিসেব পেতে গেলে কেন্দ্রীয় সংস্থাই সব থেকে ভাল তদন্ত করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অধীনে তদন্ত হলে তা নিরপেক্ষ হবে বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি জানান, অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির উপরে মূলত নজরদারি চালানোর কথা সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। কিন্তু তাদের যথেষ্ট পরিমাণে পরিকাঠামো নেই। ভবিষ্যতে সারদা কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা রুখতে পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এখনই নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অসীমবাবু।
|