|
|
|
|
তিনি-বিনা দল চালাতে নব্বইয়ের তালিকা মমতার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দলের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রক্ষাকারীদের তালিকা তৈরি করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, তিনি যখন ইহজগতে থাকবেন না, তখনও দলের উপরে নজরদারি থাকবে তাঁরই!
জানিয়ে দিলেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রীই।
হাওড়ার উপনির্বাচনের প্রচারের শেষ লগ্নে শুক্রবার সালকিয়ার সভায় মমতার ঘোষণা, “সিপিএম-কংগ্রেসের ধারণা, আমাকে খুন করে দিলে তৃণমূল পার্টিটা উঠে যাবে। কিন্তু আমি ৯০ জনের তালিকা তৈরি করে রেখেছি। তাদের কসম খাইয়েছি, আমি চলে গেলেও তারা পার্টি গুটিয়ে চলে যাবে না! যদি যায়, তা হলে ওপর থেকে আমি তোমাদের টুঁটি টিপে ধরব!”
দল হিসাবে তৃণমূল আপাদমস্তক মমতা-নির্ভর বলে নানা রকম প্রচার সব সময়ই জারি রাখে বিরোধীরা। তাদের জবাব দিতে এ দিন একেবারে তাঁর অননুকরণীয় ভঙ্গিতে দলের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রক্ষার বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী! |
|
সালকিয়ার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র |
ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার প্রেক্ষিতে তাঁর উপরেও হামলা হতে পারে বলে দিল্লি সতর্ক করেছে। তাঁর বাড়িতে উড়ো ফোনের তদন্তও হচ্ছে। কিন্তু তিনি যে মৃত্যু-ভয়ে ভীত নন, তা বুঝিয়েই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমাকে নাকি খুন করা হবে! এর আগেও এ রকম হয়েছে। আমার উপরে আগে সিপিএমের হামলা হয়েছে। কিন্তু মানুষের আশীর্বাদে আমি বেঁচে গিয়েছি।” গার্ডেনরিচ, হাজরায় তাঁর উপরে অতীতের হামলার বিবরণ দিয়ে মমতার বক্তব্য, “যত দিন বাঁচব, তত দিন মানুষের স্বার্থ রক্ষায় লড়াই করে যাব!”
সাম্প্রতি ধারা মেনে এ দিনও ফের তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কেন্দ্রে আগামী লোকসভা ভোটের পরে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-র সরকার থাকবে না। কেন্দ্র কী ভাবে রাজ্যকে বঞ্চনা করছে, তার বিবরণ দিয়েই হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থীকে দেখিয়ে জনতার উদ্দেশে মমতার আহ্বান, “প্রসূনকে (বন্দ্যোপাধ্যায়) জিতিয়ে আগামী দিনে বাংলা থেকে তৃণমূলের দিল্লি জয় করার যাত্রা শুরু হবে।”
তৃণমূল নেত্রীর মুখে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি-র কড়া সমালোচনা শোনা গিয়েছে প্রচারের শেষ দিনেও। বরং, এ দিন তাঁর বাড়তি অভিযোগ, “সিপিএমের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভোটে কখনও কংগ্রেস, কখনও বিজেপি নির্দল প্রার্থী দাঁড় করায়। সিপিএমের এই খেলাটা আমি জানি! আমার হাতে কাগজপত্র আছে। পঞ্চায়েত ভোটের সময় দেখিয়ে দেব!” এ বার হাওড়ায় বিজেপি প্রার্থী না-দিলেও দুই নির্দলকে দাঁড় করিয়েছে বলে তৃণমূল নেত্রী এ দিনও অভিযোগ করেছেন।
প্রসঙ্গত, রবিবার হাওড়ার উপনির্বাচনের জন্য প্রচার শেষ হয়েছে এ দিন সন্ধ্যা ৬টায়। চলতি সপ্তাহে উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ হাওড়ায় পরের পর সভা এবং মিছিল করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সালকিয়ায় সভা করে এ দিন প্রচার শেষে হাওড়া ছাড়ার মুখে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি মমতার নির্দেশ, “কেউ কোনও প্ররোচনায় পা দেবে না। মাথা ঠান্ডা রাখবে।” একেবারে শেষ লগ্নেও তৃণমূল নেত্রীকে হাওড়ায় প্রচারে থাকতে দেখে রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, উপনির্বাচনকে এ বার খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা। দোলা সেনের নেতৃত্বে বালি জুটমিল থেকে ঘুষুড়ি পর্যন্ত তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে
এ দিন মিছিল হয়েছে আইএনটিটিইউসি-রও।
হাওড়ায় শেষ দিনের প্রচারে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও প্রার্থী না দেওয়ায় বিজেপি-র কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আঁতাঁতের রাস্তা খোলা রাখতেই প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিমানবাবুর কথায়, “বিজেপি-র সঙ্গে আঁতাঁত করে তৃণমূল এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে টেনে আনতে চেষ্টা করছে।” সিপিএম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে বালির লালাবাবু সায়র রোড হয়ে লিলুয়া পর্যন্ত পদযাত্রায় ছিলেন বিমানবাবু, মহম্মদ সেলিম, রবীন দেব, মঞ্জুকুমার মজুমদারেরা। শুরুতে মিছিলের বহর যা ছিল, লিলুয়ায় শেষ হওয়ার সময়ে তার আকার বেড়েছিল অনেকটাই। আগাগোড়া কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ছিল। বিমানবাবুর দাবি, “প্রচারের সময় আমাদের কর্মীদের বাধাও হেনস্থা করছিল তৃণমূল কর্মীরা। নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ জানানোর পরে প্রশাসন তৎপর হয়েছে।”
হাওড়ায় প্রায় ২১% সংখ্যালঘু ভোট। সে দিকে লক্ষ রেখেই মমতা প্রচারে তুলে ধরেছেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থে তৃণমূলের সরকার গত দু’বছরে কী কী কাজ করেছে। কিন্তু হাওড়ায় প্রচার সেরে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ইমরান কিদোয়াই এ দিন অভিযোগ করেন, “সংখ্যালঘুদের জন্য কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কেবল প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে! টাকা খরচ হচ্ছে না।” কেন্দ্র সংখ্যালঘুদের প্রতি বঞ্চনা করছে বলে যে অভিযোগ মমতা বারবার করছেন, তা নস্যাৎ করে ইমরানের যুক্তি, “কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের স্বার্থ বরাবরই দেখেছে। দেখছেও। সংখ্যালঘুদের যেমন কংগ্রেসকে দরকার, কংগ্রেসেরও সংখ্যালঘুদের দরকার।” |
|
|
|
|
|