টোলগে ওজবে-কে শেষ পর্যন্ত কলকাতা ফুটবল ছাড়তে হল না। দলবদলের বাজারে এ বারের সবথেকে বড় চমক দিয়ে অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকারকে শুক্রবার তুলে নিল মহমেডান।
নতুন ক্লাবের চুক্তিপত্রে সইসাবুদ করে অস্ট্রেলিয়ায় ছুটি কাটাতে যাওয়ার পথে শুক্রবার রাতে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে টোলগে বলে দিলেন, “গত বছর অনেক বিতর্কে জড়িয়েছি। চোট-আঘাতও ছিল। এ বার সব সমস্যা সরিয়ে মহমেডানে সেরা ফর্মে খেলতে চাই।” নতুন মরসুমে নতুন ক্লাবে নিজেকে একশো শতাংশ ফিট রাখতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও নিয়মিত অনুশীলন করবেন বলেও জানিয়ে দিলেন টোলগে। “আমি দেশে ফিরে আলাদা ভাবে অনুশীলন করে ফিট থাকতে চাই।” |
মোহনবাগান টোলগেকে ছেঁটে ফেলেছিল বৃহস্পতিবারই। বাগান কর্তারা এ দিন তাঁর হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা আর অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার টিকিট ধরিয়ে দেওয়ার পর পাঁচ ঘণ্টাও কাটল না। মহমেডানে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান টোলগে। গত বার ছিলেন ওডাফার সঙ্গী। এ বার টোলগের সঙ্গী হচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান জোসিমার। ভারতে আসার পর গত তিন বছরে যে দু’টি ক্লাবে খেলেছেন টোলগে, সেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই কলকাতা লিগ, আই লিগ, ফেড কাপে এ বার গোল করার জন্য ঝাঁপাতে হবে তাঁকে। টোলগে অবশ্য বললেন, “শুধু ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান কেন, সব দলকেই গোল দিতে হবে আমাকে।”
টোলগেকে সই করানোর পর উচ্ছ্বসিত মহমেডান ফুটবল সচিব ইকবাল আহমেদ বললেন, “তিন জন বিদেশিকে আগেই সই করিয়েছিলাম। এশীয় কোটায় এক জন ভাল স্ট্রাইকার দরকার ছিল আমাদের। সে জন্যই টোলগেকে নিলাম। অস্ট্রেলিয়া থেকে ছুটি কাটিয়ে ফিরেই ও আমাদের অনুশীলনে নামবে।” টোলগেও নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া। বললেন, “যারা আমাকে বাতিলের দলে ফেলে দিয়েছেন তাঁদের কিছু দেখানোর আছে আমার।”
মোহনবাগান টোলগেকে ছেড়ে দেওয়ার পরই এ দিন সকাল থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন মহমেডান কর্তারা। দক্ষিণ কলকাতায় টোলগের ফ্ল্যাটে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেন। তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন বাগান কর্তারা কখন টাকা ও টিকিট পৌঁছে দেন সে জন্য। বিকেলের দিকে সেই কাজ হয়ে যেতেই মহমেডান মাঠ সচিব কামারুদ্দিনের তপসিয়ার অফিসে টোলগে ও তাঁর বান্ধবী সেরাপকে নিয়ে আসেন দলের ফিজিও ফুজা তোপে এবং এজেন্ট ড্যানিয়েল। কথাবার্তা শুরু হয়। এবং সাড়ে আটটা নাগাদ চুক্তিতে সই করে মাঠ সচিবের গাড়িতেই বিমানবন্দরের দিকে হাসিমুখে রওনা দেন টোলগে। মাঠ কামারুদ্দিন বললেন, “টোলগের সঙ্গে দশ মাসের চুক্তি হয়েছে আমাদের।”
মোহনবাগান তাঁকে যে টাকা দিত তাঁর চেয়ে অনেক কম টাকায় টোলগে সই করলেন মহমেডানে। তবে তিনি শুরুতে দাবি করেছিলেন কোটি টাকা। সেটা অবশ্য দিতে রাজি ছিলেন না মহমেডান কর্তারা। অন্য কোনও ক্লাবের প্রস্তাব না থাকায় শেষ পর্যন্ত মহমেডানের দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি। তবে একটি শর্ত চাপান বাগান-ছাঁটাই স্ট্রাইকার। আলোচনার সময় টোলগে নতুন ক্লাবের কর্তাদের বলেন, “আমি জানুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলে ডাক পেতে পারি। যদি ডাক পাই তা হলে আমাকে আড়াই মাসের জন্য ছাড়তে হবে।” মহমেডান কর্তারা জানান, দেশের সব ক্লাব যদি আইপিএলে ফুটবলার ছাড়ে, তা হলে তাঁরাও ছাড়বেন। তবে ওই সময়ের জন্য ক্লাব মাইনে কাটবে। টোলগেকে সই করানোর পর মহমেডানের বিদেশির কোটা শেষ হয়ে গেল। দুই ব্রাজিলিয়ান জোসিমার, লুসিয়ানো সাব্রোসা, নাইজিরিয়ান আলফ্রেডের সঙ্গে সাদা-কালো জার্সি গায়ে খেলবেন টোলগে। |
সই করেই বান্ধবী সেরাপকে নিয়ে রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ দমদমে পৌঁছন টোলগে। বিকেল পর্যন্ত তাঁর মুখ ছিল শুকনো। সেই মুখেই উজ্জ্বল হাসি ফুটল সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া ক্লাব মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ উগরে দেওয়ার সময়। “মোহনবাগানের অনেক ছোট কর্তাই খুব ভাল। কিন্তু বড় কর্তাদের নামে কিছু বলতে চাই না। তবে ওদের জন্যই গত মরসুমে অনেক বার তিক্ত অভিজ্ঞতার সামনে পড়তে হয়েছে আমাকে।” শেষ পর্যন্ত কলকাতার ক্লাবেই খেলতে হচ্ছে, সে জন্যই সম্ভবত তীব্র ক্ষোভ জানাননি ওডাফার দলের বিরুদ্ধে। বললেন, “ওডাফার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এ বার ওর বিরুদ্ধে খেলব। ওর জন্য শুভেচ্ছা রইল।”
তবে আর এক প্রাক্তন ক্লাব সম্পর্কে অবশ্য উদাসীন দেখাল টোলগেকে। “ইস্টবেঙ্গল নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বলতে চাইও না,” বলে দিলেন টোলগে। তবে লাল-হলুদের অনেক কর্তাই বলছেন, ইস্টবেঙ্গলে ফিরতে নাকি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন আপনি? উত্তরে টোলগে শুধু বললেন, “বোগাস।” পাশাপাশি তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “আমার কোনও সিদ্ধান্তের জন্যই আফসোস নেই। যা হয় তা ভালর জন্যই হয়।”
|