সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় সল্টলেকের এপিজে স্কুলের ছাত্রী যমজ বোন নন্দিতা ও নম্রতা দু’জনেই ‘এ+’ গ্রেড পেলেও তাদের প্রাপ্ত নম্বরে সামান্য ফারাক থেকে গিয়েছে। হাওড়ার বালি ঘোষপাড়ার যমজ ভাই সৌরীশ ও স্বর্ভানু অবশ্য হুবহু একই নম্বর পেয়েছে মাধ্যমিকে। বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পরীক্ষা দিয়ে দু’জনেই পেয়েছে ৬২০।
চেহারার মিল থেকে চুলের স্টাইল অবিকল একই রকম। দু’জনের মধ্যে কে স্বর্ভানু আর কে সৌরীশ, তা মুখস্থ করতে ঝাড়া এক বছর লেগেছিল বাংলার মাস্টারমশাইয়ের। এমন ‘ভুল’ অনেকেরই হয়েছে। এখন দু’জনের ফল হুবহু একই হয়ে যাওয়ায় পরিজন থেকে প্রতিবেশী, স্কুলের বন্ধু থেকে শিক্ষক সকলেই ফের নতুন করে দ্বিতীয় বার অবাক। |
প্রথম শ্রেণি থেকেই বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছে দুই ভাই। স্কুলের পরীক্ষাতেও বেশ কয়েক বার একই নম্বর পেয়েছিল তারা। স্বর্ভানুর কথায়, “এ যাবৎ সেরা বিস্ময়টা বোধ হয় লুকিয়ে ছিল ইন্টারনেটে। আমিই দু’জনের নম্বর দেখি। তার পরেই আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। অদ্ভূত অনুভূতি।” সৌরীশ বলে, “আমি সাধারণত ওর থেকে সামান্য কম নম্বর পাই। দু’জনেই যে একেবারে কাঁটায়-কাঁটায় একই নম্বর পাব, কেউই ভাবিনি। তাই অসম্ভব ভাল লেগেছে।” অঙ্কে দু’জনেই একশোয় ১০০ পেয়েছে। বাংলাতেও দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৮০। ফল জেনে স্কুলের শিক্ষকরাও বেজায় হেসেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেসে আসছে শুভেচ্ছা।
স্বর্ভানুদের বাবা প্রশান্তকুমার ঘোষ প্রেসিডেন্সি জেলের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার। তিনি বলছেন, “ব্যাপারটা কাকতালীয়। কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির। এর থেকে ভাল কিছু বোধ হয় আর হতে পারত না।” বাংলার গৃহশিক্ষক তপন ভট্টাচার্যের সংযোজন, “ওদের নম্বর দেখে আমি তো ভাবছি, বোধহয় জিনের কেরামতি!” ছোট থেকেই দু’জনকে পড়াচ্ছেন এলাকার বাসিন্দা কালীপদ দাস। তিনি বলেন, “শুধু পড়াশোনাতেই মেধাবী নয়, চরিত্রের দিক থেকেও দু’জনেই অত্যন্ত মার্জিত ও শৃঙ্খলাপরায়ণ।” মা সোমাদেবীর চোখেমুখে তখন যেন বিজয়ীর হাসি।
গান-বাজনা থেকে ক্রিকেট-ফুটবল দুই যমজ ভাইয়ের সব কিছুই কার্যত এক সঙ্গে। স্কুলের ফুটবল দলেরও সদস্য ছিল তারা। আপাতত একই সঙ্গে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। দু’জনের স্বপ্ন অবশ্য একটু আলাদা। সৌরীশ চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে আর স্বর্ভানু বাবার মতোই ডাক্তার।
২০০৫ সালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার কৃষক পরিবারের যমজ ছেলে রজত ও রাকেশ সরকার মাধ্যমিকে ৫৭৭ নম্বর পেয়েছিলেন। তার আগে আর এক জোড়া যমজ, রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অতীশ দাশগুপ্ত স্কুল ফাইনালে একই নম্বর পান।
সৌরীশ-স্বর্ভানু সেই জোড়া-কপালে ভাইদের তালিকায় নবতম সংযোজন।
|