প্রথমে আইনজীবীদের সাহায্য নিয়ে জেলে থাকা দুষ্কৃতীদের জামিনের ব্যবস্থা করা, তার পরে তাদের নিজের দলে টেনে এনে মাস কয়েক ধরেই চুঁচুড়ার নানা এলাকায় দুষ্কর্ম করে বেড়ানোর অভিযোগ উঠছিল সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। তাকে ধরতে নাজেহাল হচ্ছিল পুলিশ। শেষমেশ বৃহস্পতিবার রাতে বৈদ্যবাটি রেলগেট লাগোয়া একটি নির্মীয়মাণ আবাসনের গোপন ডেরা থেকে সঞ্জয় ও তার দুই শাগরেদ বিশ্বজিৎ ওরফে ছোটকা এবং রতনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু তাজা কার্তুজও উদ্ধার করা হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই খুন-সহ নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়।
মাস কয়েক ধরে চুঁচুড়া ও সংলগ্ন এলাকায় সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য যথেষ্ট বেড়েছে। প্রতি রাতে বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ায় সমাজবিরোধীদের এই দৌরাত্ম্য নিয়ে পুলিশের দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্প্রতি পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী ১২ জন বাছা পুলিশ অফিসারকে নিয়ে একটি বিশেষ বাহিনী তৈরি করেন। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিশেষ বাহিনীর তল্লাশিতে সঞ্জয় চুঁচুড়া ছেড়ে ডেরা বাঁধে বৈদ্যবাটির এক ওষুধ ব্যবসায়ীর ওই নির্মীয়মাণ আবাসনে। শ্রীরামপুর থানার আইসি তথাগত পাণ্ডে দলবল নিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সেখানে হানা দেন।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃত সঞ্জয় কবুল করেছে, চুঁচুড়া এলাকায় তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুষ্কৃতী টোটনকে খতম করতেই সে ঘুঁটি সাজাচ্ছিল। যে সব দুষ্কৃতী জেলে, যাদের আইনজীবীর সাহায্য নেওয়ার আর্থিক সঙ্গতি নেই, তেমনই কিছু দুষ্কৃতীর জন্য আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের ব্যবস্থা করে সে দল তৈরি করছিল। এ ভাবেই সে মাস কয়েক আগে ছোটকা ও রতনকে বের করে আনে কলকাতার জেল থেকে। এক সময়ে হুগলির ত্রাস হুব্বা শ্যামল খুনে মূল অভিযুক্ত নেপু গিরির সঙ্গেও সে যোগাযোগ রাখছিল। নেপু বর্তমানে প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছে। টোটনকে পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে জেলা সদর চুঁচুড়ায় দুষ্কৃতীদের এমন বাড়বাড়ন্ত পুলিশকে ভাবাচ্ছে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক নেতার যোগাযোগ নিয়েও পুলিশ যথেষ্ট চাপে। ধরা পড়ার পরে সঞ্জয় নিজেকে শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতার ভাই বলে দাবি করেছে পুলিশের কাছে। কিন্তু তা সত্য নয় বলেই পুলিশের ধারণা।
হুগলি জেলা পুলিশের এক কর্তা এ ব্যাপারে বলেন, “সমাজবিরোধীরা অনেক সময় সুবিধা আদায় করার জন্য পুলিশকে চাপে ফেলতে নানা কথা বলে। পুলিশ সব বিষয়টাই খতিয়ে দেখছে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। সঞ্জয়ের দলে আরও কারা ছিল তা দেখা হচ্ছে।” |