আগেও তিনি একাধিক বার পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছেন। কিন্তু সেই সব সময়ে ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী নেতা মঙ্গল সিংহ মুড়ার গতিবিধি ছিল মূলত ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত কয়েকটি গ্রামেই। ঝাড়খণ্ডে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা রয়েছে। পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে তাঁকে। ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে খড়্গপুরে এসে বৈঠক করে গিয়েছেন মঙ্গল। সকলের চোখে ধুলো দিয়ে ট্রেনে খড়্গপুরে এসে তিনি ট্রেনেই ঝাড়খণ্ডে ফিরে গিয়েছেন।
কে এই মঙ্গল সিংহ মুড়া?
ঝাড়খণ্ড পুলিশ জানাচ্ছে, মঙ্গল পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার ঘাটশিলা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার এরিয়া কম্যান্ডার। আর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বলছে, ঝাড়খণ্ডের অন্য ডাকাবুকো মাওবাদী নেতা কুন্দন পাহানের মতো মঙ্গল শুধু ‘অ্যাকশন স্কোয়াড’-এর নেতা নন, দক্ষ সংগঠকও। তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতার কথা মাওবাদীদের একাংশ নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বেলপাহাড়ির মাওবাদী নেতা মদন মাহাতো, তাঁর স্ত্রী জবা এবং বেলপাহাড়ির অন্য এরিয়া কম্যান্ডার শ্যামল মাহাতো কাজকর্ম চালাচ্ছেন মঙ্গল সিংহ মুড়ার তত্ত্বাবধানেই।
গত ২১ মে খড়্গপুরে অন্তত দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন মঙ্গল। ঝাড়খণ্ড পুলিশের ধারণা, গোয়েন্দা পুলিশ মঙ্গলকেই কিষেণজির ভাই মাল্লুজোলা বেণুগোপাল ওরফে ভূপতি বলে ভুল করেছিল। ঝাড়খণ্ড পুলিশের এই সন্দেহের ভিত্তিতে তদন্তও শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি)-এর এক কর্তার কথায়, “প্রথমে ভেবেছিলাম, কোনও অতিথিনিবাসে ওই বৈঠক হয়েছে। পরে খবর মেলে, খড়্গপুর টাউনে সম্ভবত কোনও তেলুগুভাষীর বাড়িতেই ওই বৈঠক হয়।”
ওই আইবি-কর্তা জানান, মাওপন্থী মানবাধিকারকর্মী বলে পরিচিত এক ব্যক্তি খড়্গপুরে মঙ্গলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর বাড়ি কলকাতার আশেপাশে। বৈঠকের আগে, বৈঠক চলাকালীন এবং তার পরে ঝাড়খণ্ডের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছনো পর্যন্ত মঙ্গলকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল শ্যামলের উপরে। গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “যাঁর বাড়িতে বৈঠক হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, আমরা সেই তেলুগুভাষীর পরিচয় জানার চেষ্টা করছি।” খড়্গপুরে কী নিয়ে বৈঠক করেছেন মঙ্গল?
ঝাড়খণ্ড পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অফিসারেরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসায় মাওবাদী নেতারা পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী অধ্যুষিত জায়গাগুলিতে যাতায়াত শুরু করেছেন। গোপন বৈঠকও করছেন সীমানাবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। বৈঠকের জন্য সেই সব জায়গাকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে, পুলিশি অভিযান হলে যেখান থেকে সহজেই ফের ঝাড়খণ্ডে ঢুকে পড়া যায়। এক সপ্তাহ আগে খড়্গপুরে মঙ্গলের বৈঠকে দুই বাঙালি মাওবাদী নেতাও যোগ দিয়েছিলেন বলে খবর আছে ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে। ওই দু’জনের মধ্যে এক জন এক সময় কিষেণজির ছায়াসঙ্গী ছিলেন।
ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশা সংলগ্ন জঙ্গলমহলের কোথাও কোথাও মাওবাদীরা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দিতে পারে বলে সন্দেহ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে তাদের স্থানীয় কোনও কোনও নেতাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় মঙ্গলের ওই বৈঠকের বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে মাওবাদীদের মোকাবিলা করছে। তা সত্ত্বেও সকলের চোখে ধুলো দিয়ে মঙ্গল কী ভাবে খড়্গপুরে ঢুকলেন, বুঝতে পারছে না তিন রাজ্যের পুলিশ।
|