জেলে বন্দি শিক্ষক নেতা প্রদীপ সাহাকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড় করানোর কথা ভেবেও শেষমেশ পিছিয়ে এল সিপিএম।
কদিন আগেই নদিয়ার নবদ্বীপ আদালতে দাঁড়িয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অঞ্জু কর জানিয়েছিলেন, তাঁরা প্রদীপবাবুকে জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী করতে চান। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদারও সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। কিন্তু আইনজীবীদের পরামর্শ এবং প্রদীপবাবুর বাড়ির অনিচ্ছায় শেষমেশ তাঁদের পিছু হটতে হল। অঞ্জুদেবী বলেন, “আইনজীবীদের কথা তো মানতেই হবে। তাই শেষ পর্যন্ত সরে আসতে হল।”
সিপিএম সূত্রের খবর, সোমবার তাদের জেলা পরিষদের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত জেলা পরিষদের প্রার্থীদের নামের যে তালিকা হয়েছে, তাতে প্রদীপবাবুর নাম নেই। তৃণমূল ইতিমধ্যে ভেবে ফেলেছিল, যাঁকে খুনের অভিযোগে প্রদীপবাবুকে জেলে থাকতে হচ্ছে, পূর্বস্থলীর সেই তৃণমূল নেতা সজল ঘোষের স্ত্রীকে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করানো যেতে পারে। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “প্রদীপ সাহা দাঁড়ালেই আমরা সজলবাবুর স্ত্রী ইন্দ্রানীদেবীকে দাঁড় করাতাম। তাতে হারবে বুঝেই সিপিএম ওদের খুনি নেতাকে সরিয়ে নিয়েছে।”
সিপিএম অবশ্য দাবি করছে, প্রায় দেড় বছর জেলে আটকে থাকা প্রদীপবাবুর জামিনের কথা ভেবেই তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। গত বছর ৯ জানুয়ারি পূর্বস্থলী কলেজে মনোনয়ন দাখিল নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই কয়েক জন জখম হন। নবদ্বীপের একটি হাসপাতালে জখম ছাত্রদের ভর্তি করা হয়েছিল। রাতে তাঁদের দেখতে গিয়ে হাসপাতাল চত্বরেই খুন হন পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ। তাঁকে খুনের অভিযোগে ওই রাতেই সিপিএমের পূর্বস্থলী ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক তথা পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহাকে তাঁর নবদ্বীপের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখন থেকেই তিনি জেলে। গত সোমবার মাধ্যমিকে যুগ্ম প্রথম হয়ে বারবার ‘স্যারে’র কথা বলেছে তাঁরই স্কুলের সৌরাশিস বিশ্বাস। কিন্তু পরের দিনই ফের তাঁর জামিন নাকচ হয়ে গিয়েছে।
সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল বলেন, “প্রদীপ সাহাকে পূর্বস্থলী থেকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হলেও ওঁর আইনজীবীরা জানান, ওঁঁকে প্রার্থী করা হলে মামলায় ক্ষতি হতে পারে। আইনজীবীদের কাছে এ কথা শোনার পরে ওঁর বাড়ির লোকজনেরাও সম্মতি দেননি। শেষ পর্যন্ত আমাদের মত পরিবর্তন করতে হয়েছে। ওঁকে যে আসনে দাঁড় করানোর কথা হচ্ছিল, দল সেখানে অন্য প্রার্থী দেবে।” সিপিএম নেতারা মনে করিয়ে দেন, মাস ছয়েক আগে প্রদীপবাবুর স্কুলে পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে ৬টি আসনেই তাঁদের প্রার্থীরা বড় ব্যবধানে জিতেছেন। ফলে এলাকায় যে প্রদীপবাবু ও তাঁর দলের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ, তা কার্যত প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের দাবি অর্থহীন। প্রদীপবাবুর স্ত্রী শম্পা সাহা শুধু বলেন, “দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই চূড়ান্ত।”
|