কোথাও বাগান বা খামারে লুকিয়ে থাকছেন লোকজন। কোথাও আবার অপেক্ষা চলছে প্রকাশ্যেই, হচ্ছে রান্নাবান্নাও। মনোনয়ন তোলা-জমায় বাধা দিতে নানা জায়গায় ব্লক অফিসের একশো মিটারের বাইরে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই অপেক্ষা করছে কিছু লোকজন। খবর পৌঁছে গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও। তাই ওই সব অবস্থানকারীদের ছবি তুলে আনতে ভিডিওগ্রাফার পাঠানো হচ্ছে বলে জানান জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা।
আগের দু’দিনের মতো না হলেও শুক্রবারও মনোনয়ন পেশ নিয়ে জেলার নানা এলাকায় বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোল হয়েছে। এ দিন গোলমাল পাকানোর অভিযোগে জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকে মোট চার জন তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “মোটের উপরে এ দিন পরিস্থিতি শান্ত ছিল। পঞ্চায়েত স্তরে ১১৬১ ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ১৭৯টি মনোনেয়ন জমা পড়েছে। জেলা পরিষদে জমা পড়েছে ৪টি মনোনয়ন। এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত স্তরে মোট ২২৬২টি, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ৩৮৩টি ও জেলা পরিষদে মোট ১১টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।” |
এ দিন ভাতারে সিপিএমের জোনাল অফিসে ঢুকে প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিধানসভায় বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক সৈয়দ মহম্মদ মসীহকে নিগ্রহের অভিযোগে আরও দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। মেমারিতে সিপিএমের লোকজনের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রায়না ১ ও বর্ধমান ১ ব্লক অফিসের কাছে এ দিন রান্না করছিলেন কিছু লোকজন। তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট কোনও নির্দেশ না থাকায় ব্লক অফিসের একশো মিটারের বাইরে এই পথ আটকে থাকা লোকজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না বলে জেলা পুলিশের দাবি। এই ‘অবরোধে’ আটকে পড়া প্রার্থীদের পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মেমারি ২ ব্লকের মহিষগড়িয়ার পাইকার মোড়ে তৃণমূল কর্মীরা জড়ো হন। দলের স্থানীয় নেতা কেরামত আলি অভিযোগ করেন, সিপিএমের লোকজনেরা তাঁদের উপরে হামলা চালায়। তাতে তাঁদের ১২ জন সমর্থক আহত হন। তাঁদের মধ্যে চার জনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ও তিন জনকে মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মেমারি থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। তবে সিপিএমের মেমারি জোনাল নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেনে।
ভাতারে ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন বিজেপি-র মাহাতা পঞ্চায়েতের কয়েক জন প্রার্থী ও প্রস্তাবক। স্থানীয় পালার মোড়ের কাছে প্রায় ৪০ জন সশস্ত্র তৃণমূল সমর্থক তাঁদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। আহত ছ’জন বিজেপি সমর্থককে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কালনা ১ ব্লকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য সিপিএম প্রার্থীদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, ওই ব্লকের সুলতানপুর, বেগপুর ও আটঘোড়িয়া-সিমলন পঞ্চায়েতে প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া, মারধর করা হচ্ছে। দলের রাজ্য কমিটির সদস্য অঞ্জু করের কথায়, “সুলতানপুর পঞ্চায়েতে এখনও পর্যন্ত দলের ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছে। তাঁদের মধ্যে দশ জনকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে তৃণমূল। কয়েক জনকে মারধরও করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা জেলা পুলিশ সুপার এবং নির্বাচনী পর্যবেক্ষককে জানিয়েছি।” যদিও ওই পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতা সুকুর শেখের দাবি, “সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ।” কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠি জানান, ওই ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে কিছু অভিযোগ মিলেছে। এলাকাগুলিতে নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ দিন বর্ধমান ২ ব্লক অফিসে যাওয়ার বিভিন্ন রাস্তায় প্রচুর পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সেখানে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা পড়েনি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গত দু’দিন সিপিএম এবং কংগ্রেসের নেতারা বারবার অভিযোগ করছেন, তাঁদের প্রার্থীরা ব্লক অফিস পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছেন না। তার আগেই তাঁদের কাছ থেকে নথিপত্র কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এ দিন জেলাশাসক বলেন, “যে এলাকাগুলিতে এমন অবস্থানের অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখতে এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে ভিডিওগ্রাফার পাঠানো হচ্ছে। তাঁরা অবস্থানকারীদের ছবি তুলে আনবেন।”
|