|
|
|
|
বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টা |
গ্রেফতার গৌরাঙ্গ, দায় এড়াচ্ছে তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
জমি দিতে নারাজ বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন ঝাড়গ্রামে তৃণমূল নেতা বলে পরিচিত গৌরাঙ্গ প্রধান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে ধরা হয়। তবে গৌরাঙ্গের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক রয়েছে
বলে মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিকে, সংবাদমাধ্যমে ওই বৃদ্ধার উপরে হামলার কথা জেনে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন।
কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত বলেন, “চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন মেদিনীপুর রেঞ্জের ডিআইজি-কে ব্যক্তিগত ভাবে ঘটনার তদন্ত করে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা
দিতে বলেছেন।” তবে ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা ওই নির্দেশ এখনও হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ঝাড়গ্রাম শহর থেকেই গৌরাঙ্গকে ধরা হয়েছে।” তিনি জানান আজ, শুক্রবার আদালতে হাজির করা হবে ধৃতকে। |
|
গৌরাঙ্গ প্রধান। ঝাড়গ্রামে ধৃত তৃণমূল কর্মী। —ফাইল চিত্র |
ঝাড়গ্রাম শহরের বেনাগেড়িয়ার বাসিন্দা বিধবা সাবিত্রী সরকারের সঙ্গে তাঁর বিধবা বড় বউমা রাধারানিদেবীর জমি সংক্রান্ত বিবাদের মীমাংসা করতে গিয়ে গৌরাঙ্গবাবু ও তাঁর দলবল ৫ কাঠা জমি চেয়েছিলেন বলে পরিবারের দাবি। অভিযোগ, জমি না পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সাবিত্রীদেবীকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। গৌরাঙ্গ-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধার ছোট ছেলে সঞ্জয়। বুধবার রাত থেকে গৌরাঙ্গ-সহ সাত অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাতে শুরু করে পুলিশ। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গৌরাঙ্গ ছাড়া অন্যদের খোঁজ মেলেনি।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দলে ছিলেন গৌরাঙ্গ। বছর সাতেক আগে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক হন। সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গৌরাঙ্গ গত বিধানসভা ভোটে ঝাড়গ্রামে সুকুমার হাঁসদার নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন। বছর দু’য়েক আগে দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তাঁকে দলে ফেরানো হয়। তবে পদ দেওয়া হয়নি।
পদে না থাকলেও এলাকায় গৌরাঙ্গর দাপট ছিল যথেষ্টই। স্থানীয় সূত্রের খবর, গৌরাঙ্গ ও তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে জমির দালাল চক্রের ঘনিষ্ঠতা ছিল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল কর্মীর দাবি, “কোনও মালিক সরাসরি জমি বিক্রি করতে গেলেই বাধা দিত গৌরাঙ্গর দলবল। চাহিদা মতো টাকা না দিলেই তারা জুলুম করত।” পরিবারের দাবি, সেই জুলুমেরই শিকার হয়েছেন সাবিত্রীদেবী। বৃদ্ধার অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। ঝাড়গ্রাম হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। এ দিনও পুলিশ তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হাসপাতালে গিয়েছিল।
তবে তৃণমূল নেতৃত্ব এখন দাবি করছেন, গৌরাঙ্গর সঙ্গে দলের কোনও সংস্রব নেই। মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “গৌরাঙ্গ দলের কেউ নন।” কিন্তু কিছু দিন আগেও তো তৃণমূলের কর্মসূচিতে প্রথম সারিতেই দেখা যেত তাঁকে? সুকুমারবাবুর জবাব, “সে তো কত লোকেই আসে। কী করা যাবে!” তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার রাতে কলকাতায় পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত এক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতেই সেখানে গৌরাঙ্গ-প্রসঙ্গ ওঠে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে জেলা নেতৃত্বকে সতর্ক করে দেন রাজ্য স্তরের নেতারা। বলে দেওয়া হয়, গৌরাঙ্গের সঙ্গে আপাতত দলের কেউ প্রকাশ্যে সম্পর্কও রাখতে পারবে না।
|
পুরনো খবর: জমি না পেয়ে বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা |
|
|
|
|
|