কাঠগড়ায় শাসক দল
জমি না পেয়ে বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা
পারিবারিক অশান্তি মেটাতে গিয়ে চাওয়া হয়েছিল জমির ভাগ। অভিযোগ, জমি না মেলায় জমির মালকিন এক বৃদ্ধাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছে শাসক দলের লোকজন।
ঝাড়গ্রাম শহরে মঙ্গলবারের ওই ঘটনায় ৭ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধ বৃদ্ধা সাবিত্রী সরকার এখন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকের উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ৬৫ বছরের সাবিত্রীদেবী অভিযোগ করেছেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা গৌরাঙ্গ প্রধান দলবল নিয়ে আমার জমির একটা অংশ আত্মসাৎ করতে চাইছিলেন। ওঁর লোকেরাই আমার গায়ে আগুন দিয়েছে।” সাবিত্রীদেবীর ছোট ছেলে সঞ্জয়ও ঝাড়গ্রাম থানায় গৌরাঙ্গবাবু-সহ সাত জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ‘‘দাবি মতো জমি না পাওয়ায় মাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে অভিযুক্তেরা।’’
এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হননি। অন্যতম অভিযুক্ত গৌরাঙ্গবাবুর দাবি, “সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের দলের একটা গোষ্ঠী সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।” গৌরাঙ্গবাবু বুধবার সকাল অবধিও ঝাড়গ্রাম শহরেই ছিলেন। ক্রমে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় দুপুরের পর থেকে তাঁকে আর এলাকায় দেখা যায়নি। মোবাইলও বন্ধ হয়ে যায়। তার আগেই পুলিশ তাঁদের ধরল না কেন? ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “কেন কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, সেটা আপনারা জানতে চাইতে পারেন না।” তবে বুধবার রাতের খবর, এলাকায় বাড়তে থাকা ক্ষোভের মুখে পুলিশ অভিযুক্তদের খুঁজে বার করে গ্রেফতার করার তোড়জোড় শুরু করেছে।

ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে সাবিত্রী সরকার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা তথা শাসক দলের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বলেন, “ঘটনাটা শুনেছি। বিশদ জানি না। কী করে হল বুঝতেও পারছি না।” দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “গৌরাঙ্গ প্রধান এ কাজে জড়িত বলে আমরা বিশ্বাস করি না। তবে বিষয়টি দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখা হবে।” তবে তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘গৌরাঙ্গর লোকজনই কাজটা করেছে। কিন্তু গৌরাঙ্গ আমাদের দলের কেউ নন।”
বস্তুত গৌরাঙ্গ প্রধান আগে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বছর দু’য়েক আগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। গত মার্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ঝাড়গ্রামে আসেন, তখন তাঁর হস্তক্ষেপে গৌরাঙ্গবাবুকে দলে ফেরানো হয়। তবে পদ দেওয়া হয়নি (শুভেন্দুবাবুর দাবি অনুযায়ী, গৌরাঙ্গকে দলে ফেরানোই হয়নি)। বাকি ছয় অভিযুক্ত রাহুল মুখোপাধ্যায়, গোরা দণ্ডপাট, বাপি, ভকো, তারু ও রানা এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত। এঁদের নামে পুলিশে আগেও নানা অভিযোগ রয়েছে। গৌরাঙ্গবাবু অবশ্য এদের সঙ্গে কোনও সম্পর্কের কথা মানতে চাননি।
ঘটনার সূত্রপাত কী ভাবে?
ঝাড়গ্রাম শহরের বেনাগেড়িয়ায় প্রায় ৩৮ কাঠা জমি রয়েছে বিধবা সাবিত্রীদেবীর। ওই জমিরই একটি অংশে থাকেন তিনি। সাবিত্রীদেবীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে মৃত্যুঞ্জয় দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী রাধারানি কলকাতার ট্যাংরায় ভাড়া থাকেন। ছোট ছেলে সঞ্জয় থাকেন বেলেঘাটায়। মেয়েরা বিবাহিত। বড় মেয়ে পুণ্যশ্রী ও ছোট মেয়ে জয়শ্রী সাবিত্রীদেবীর দেওয়া জমিতেই বাড়ি করেছেন। মেজ মেয়ে নীলিমা কলকাতায় থাকেন।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জমির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সম্প্রতি সাবিত্রীদেবীর সঙ্গে বড় পুত্রবধূর বিরোধ বাধে। রাধারানিদেবী তখন কলকাতায় ট্যাংরা এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর জীবন সাহার চিঠি নিয়ে
গৌরাঙ্গবাবুর দ্বারস্থ হন। রাধারানি নিজে স্বীকার করেন, “শাশুড়ি জমির ভাগ দিচ্ছিলেন না। সমস্যা মেটাতে কলকাতায় স্থানীয় কাউন্সিলর জীবন সাহার চিঠি নিয়ে মাসখানেক আগে গৌরাঙ্গবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি বোঝান। কিন্তু তার পরিণতিতে এমন কিছু হবে আমার ধারণা ছিল না।”
সাবিত্রীদেবীর ছোট মেয়ে জয়শ্রীর অভিযোগ, “১৭ মে গৌরাঙ্গবাবুর লোকজন আমিন নিয়ে এসে মায়ের জমি মেপে জানায়, ৩৩ কাঠা জমি অংশীদারদের মধ্যে ভাগ হোক। বাকি ৫ কাঠা তাদের দিতে হবে।” তৃণমূল কর্মীদের জমি দিতে চাননি সাবিত্রীদেবী। তবে বড় পুত্রবধূকে সাড়ে ৫ কাঠা জমি লিখে দেন। রাধারানিদেবীও গৌরাঙ্গকে জানান, সমস্যা মিটেছে। বৃদ্ধার ছেলেমেয়েদের অভিযোগ, এর পর থেকেই গৌরাঙ্গবাবুরা জমি দখলের হুমকি দেন। জমি না দিলে টাকা দিতে হবে বলেও দাবি করেন। কিন্তু সাবিত্রীদেবী রাজি হননি। তার জেরেই মঙ্গলবার সাবিত্রীদেবীর উপরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। জয়শ্রী বলেন, “আমি রান্না করছিলাম। চিৎকার শুনে গিয়ে দেখি, বাড়ির সামনে কাঁঠালতলায় মা ছোটাছুটি করছে, গোটা শরীর জ্বলছে। তখন ওই লোকগুলোকে ছুটে পালাতে দেখি।”
গৌরাঙ্গ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “অন্যের জমি চাইব কেন? কলকাতার কাউন্সিলরের চিঠি এনে সাহায্য চেয়েছিলেন রাধারানিদেবী। সাবিত্রীদেবীকে বোঝায়, ছেলের বউকে জমি দিয়ে সমস্যা মেটান।” যাঁর চিঠি পেয়ে বিবাদ মেটাতে গিয়েছিলেন গৌরাঙ্গ, কলকাতা কর্পোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেই তৃণমূল কাউন্সিলর জীবন সাহা বলেন, “গৌরাঙ্গবাবুকে চিনি না। রাধারানিদেবী বলেছিলেন ওঁকে চিঠি লিখে দিতে। তাই দিয়েছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.