প্রথম দিনেই চোখ রাঙানি, অভিযোগ ওড়াল শাসকদল
নোনয়নপত্র জমার প্রথম দিনেই বিরোধীদের উপর হামলা, মারধরের অভিযোগ উঠল রাজ্যে শাসক দলের বিরুদ্ধে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন ২ ব্লকে সিপিএম ও মোহনপুরে কংগ্রেস প্রার্থীদের হুমকি, মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর, পটাশপুর ও পাঁশকুড়াতেও সিপিএম প্রার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, পাঁশকুড়া ১ ব্লক অফিসের সামনেই তৃণমূল ব্লক সভাপতি দীপ্তিকুমার জানাকে হেনস্থা করেন তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন। তবে এত ঝামেলার মধ্যেও পূর্বে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসক দলকে টেক্কা দিয়েছে বিরোধী বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। পঞ্চায়েত স্তরে সিপিএমের ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন যেখানে, সেখানে তৃণমূলের মাত্র ১৭ জন। জেলা পরিষদে তো কোনও আসনেই তৃণমূলের মনোনয়ন পত্র জমা পড়েনি। পাশের জেলার মতো পূর্বেও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়নি বলেই কি দেরি? জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতা মামুদ হোসেন বলেন, “প্রার্থী তালিকা অনেক আগে ঠিক হয়েছে। আগামী শুক্রবার ও সোমবার আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দেবেন।”

তমলুকে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন ময়নার কংগ্রেস প্রার্থীরা।—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন জেলার প্রতিটি ব্লক অফিস ও মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে বাড়তি পুলিশ ছিল। পাঁশকুড়া, শহিদ মাতঙ্গিনী, তমলুক, সুতাহাটা, কাঁথি ৩-সহ বিভিন্ন ব্লকে বামেরা মনোনয়ন জমা দেন। নন্দীগ্রামে কংগ্রেস ও বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা মনোনয়ন তোলেন নির্বিঘ্নেই। কিন্তু বেলা যত গড়ায় বিভিন্ন জায়গা থেকে হুমকি, মারধরের অভিযোগ আসতে থাকে। ভগবানপুর ২ ব্লক অফিস থেকে মনোনয়ন পত্র তোলার পর পাশের একটি সেলুনে বসে তা পূরণ করছিলেন স্থানীয় মুগবেড়িয়া পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী স্বপন বারিক। অভিযোগ, সেই সময় এক দল তৃণমূল কর্মী এসে তাঁকে হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। কংগ্রেসের কাঁথি মহকুমা সভাপতি গঙ্গারাম মিশ্রের অভিযোগ, “খবর পেয়ে পুলিশ এলে তৃণমূলের লোকেরা চলে যান। পরে ফের স্বপন বারিকের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেন তাঁরা। ভয় পেয়ে আর মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি স্বপনবাবু।” যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে নিজেদের প্রচারের আলোয় আনতে অসত্য মনগড়া গল্প পরিবেশন করছে কংগ্রেস।”
পাঁশকুড়া ব্লক অফিসের বাইরে আবার রীতিমতো শিবির করে বসেছিলেন তৃণমূলের লোকেরা। দুপুর বেলা সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় সিপিএমের পাঁশকুড়া জোনাল কমিটির সদস্য সৌমেন মাইতিকে তাঁরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। এরপরই পুলিশ গিয়ে তৃণমূলের শিবির সরিয়ে দেয়। পটাশপুর-১ ব্লকের সিংদাপুলের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে সিপিএম নেতা অনিল দাসকে আটকে তৃণমূল সমর্থকরা মোবাইল, টাকা ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাপস মাজি অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ব্লকেই আবার দুই কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে পটাশপুর ১ ব্লক প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে আড়াইশো মিটারের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক মানস কর মহাপাত্রের অভিযোগ, “মনোনয়ন পত্র তুলে বাড়ি ফেরার পথে দলীয় প্রার্থী নির্মল দাস ও মদন মণ্ডলকে মারধর করে তৃণমূলের লোকেরা। নির্মলের হাত ভেঙে দিয়েছে। মদনকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। সর্বদল বৈঠকে পুলিশ যতই আশ্বাস দিক না কেন, বাস্তবে হাত গুটিয়ে বসে আছে।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাপস মাজি এ ক্ষেত্রে মারধরের অভিযোগ একেবারে না উড়িয়ে বলেন, “মনোনয়নপত্র তোলার পর কংগ্রেসের লোকেরা আমাদের দলের নামে কুৎসিত গালিগালাজ করছিল। দলীয় লোকজন প্রতিবাদ করায় সামান্য বচসা, ঠেলাঠেলি হয়েছে।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসিত পাল ও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহি মারধর, হুমকির অভিযোগ করলেও পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দিন প্রায় নির্বিঘ্নে কেটেছে। জেলার কয়েকটি এলাকা থেকে কিছু অভিযোগ এসেছে। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গণ্ডগোল হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাঁতন ২ পঞ্চায়েত সমিতির সম্ভাব্য প্রার্থী সিপিএম নেতা বিশ্বজিৎ খাটুয়াকে মারধর ও বাড়িতে ঘেরাও করে রাখার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রাতে তালদা গ্রামে গিয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সিপিএমের দাঁতন ২ জোনাল কমিটির সম্পাদক আবদুল রহিম বলেন, “খণ্ডরুই লোকাল কমিটির সদস্য তালদা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎবাবুকে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী করার জন্য দলে সিদ্ধান্ত হয়। এ দিন গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় প্রচার সেরে বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে তৃণমূলের লোকজন লাঠি দিয়ে মারধর করে। তারপর অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় হাইস্কুলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর মনোনয়নপত্র জমা দিলে তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। বিশ্বজিৎবাবুর বাড়ির লোকজন পুলিশে খবর দিলে বাড়ি ঘেরাও করে হুমকি দেয় তৃণমূলের লোকেরা।” প্রার্থীর সমর্থনে বাড়িতে বৈঠক করায় হুমকি দেওয়া হয় দলীয় সমর্থক শ্যামল হেমব্রমকেও। গোটা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে বলে দাবি জোনাল কমিটির সম্পাদকের।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক শৈবাল গিরি বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিজেদের পক্ষে জনসমর্থন না থাকায় মিথ্যা অভিযোগ করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে সিপিএম।” মোহনপুর ব্লকেও একই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের মোহনপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক রমণীকান্ত জানার অভিযোগ, “গোমুন্ডার প্রার্থী প্রভাস জানাকে ব্লকে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মোহনপুরের প্রার্থী গণেশ রানাকে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.