বিধাননগর কমিশনারেট এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের পরে কলকাতা পুলিশ বুধবার সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েই এক দফা জেরা করেছিল। তার পরেই তাঁকে ঢাকুরিয়ায় নিয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালাল কলকাতা পুলিশের একটি দল। সেখানে সারদার আমানতকারীদের সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে বলে পুলিশের দাবি।
সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে বিভিন্ন জেলা পুলিশ আলাদা আলাদা ভাবে কেন তদন্ত করছে, ইতিমধ্যে সেই প্রশ্ন উঠেছে। আইনজীবীদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট সামগ্রিক ভাবে এই ঘটনার তদন্ত করবে। এবং সব ক্ষেত্রে তদন্ত হবে সিটের অধীনেই। সিট গড়াও হয়েছে। তা হলে বিধাননগর কমিশনারেট, কলকাতা পুলিশ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ এখন আলাদা ভাবে তদন্ত করছে কেন, প্রশ্ন তুলেছেন সুদীপ্তদের আইনজীবীরা।
সুদীপ্তকে নিয়ে কলকাতা পুলিশ এ দিন তল্লাশি চালালেও সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে দিনভর লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপেই রাখা হয়েছিল। সেখানেই দফায় দফায় তাঁকে জেরা করা হয়। |
দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার অভিযোগ, সরকার একসঙ্গে সব মামলার তদন্ত না-করে তাঁর মক্কেলকে বারবার নানা জায়গায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করছে।
কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে এত দিনের তদন্তে কামালগাজি এবং বিষ্ণুপুরের সারদা গার্ডেন ছাড়া সে-ভাবে সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাকর্তাদের ধারণা, এ বার তাঁদের তদন্তে বহু সম্পত্তির খোঁজ মিলবে। কারণ হিসেবে গোয়েন্দারা বলছেন, এই ধরনের ব্যবসায়ীরা কলকাতায় সম্পত্তি গড়ে তোলার বিষয়েই বেশি মনোযোগী হন। সেই কারণে সুদীপ্তকে জেরা করে সম্পত্তির হদিস পেতে চাইছে কলকাতা পুলিশ। ঢাকুরিয়ায় সারদা গোষ্ঠীর ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের অফিস রয়েছে। পুলিশ জানায়, ১৫ এপ্রিলের পরে ওই অফিসটি বন্ধ হয়ে যায়। ওখানে ঢাকুরিয়া, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, যাদবপুর, কসবা অঞ্চলের আমানতকারীদের টাকা জমা নেওয়া হত। অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে রীনা ভুঁইয়া নামে সংস্থার এক এজেন্ট লেক থানায় সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এ দিন ওই অফিসে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। পুলিশের ধারণা, পর্যটনের অফিস হিসেবে বাইরে দেখানো হলেও সেখানে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার কাজকর্ম হত। পুলিশ এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ সুদীপ্তকে সঙ্গে নিয়ে ওই অফিসে পৌঁছয়। ঘণ্টা ছয়েক তল্লাশি চালিয়ে কম্পিউটারের ২৫টি হার্ডডিক্স ও নথিপত্র আটক করা হয়। কলকাতা পুলিশের এক অফিসারের কথায়, “আমাদের ধারণা, এখানকার আমানতকারীদের কত টাকা জমা ছিল, অফিসের কম্পিউটার থেকে সেই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।” ওই অফিসার জানান, আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বিধাননগর পুলিশ সুদীপ্তকে তাদের হেফাজতে নিলেও ঢাকুরিয়ার এই অফিসে তল্লাশি চালানো হয়নি। গোয়েন্দারা জানান, এ দিন বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরই ‘জানি না’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন সুদীপ্ত।
বুধবার আদালতের অনুমতি পেয়ে কলকাতা পুলিশ সুদীপ্ত-দেবযানীকে লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে নিয়ে যায়। লক-আপে সাধারণ বন্দিদের খাবারই দেওয়া হয়েছে সুদীপ্তদের। |