সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে রাজ্যের দুই সাংসদ-সহ কিছু নেতার নাম উঠেছিল আগেই। এ বার ওই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়লেন অসমের এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বুধবার বিধাননগর কমিশনারেটে অসমের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। আর সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং সংস্থার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায় এক রাত জেলে কাটিয়ে এ দিনই ফের পুলিশি হেফাজতে গেলেন। এ বার তাঁদের হেফাজতে নিল কলকাতা পুলিশ। এ দিন বিকেলে দু’জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারের সেন্ট্রাল লক-আপে।
মাতঙ্গ এ দিন বেলা পৌনে ৩টে নাগাদ পাঁচ গাড়ির কনভয় নিয়ে হাজির হন বিধাননগর কমিশনারেটের দফতরে। পুলিশ জানায়, মাতঙ্গের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহ ২৫ কোটি টাকায় একটি টিভি চ্যানেল বিক্রি করেছিলেন সুদীপ্তের কাছে। কিন্তু সারদা-কর্তার কাছ থেকে টাকা নিয়েও তিনি তাঁকে ওই চ্যানেলের মালিকানা হস্তান্তর করেননি। জিজ্ঞাসাবাদের পরে বেরিয়ে এসে মাতঙ্গ অবশ্য বলেন, “সাক্ষী হিসেবে এসেছিলাম। আমি চাই, সুদীপ্তের কঠোর শাস্তি হোক।”
শুধু মনোরঞ্জনার টিভি চ্যানেল নয়, অসমে প্রায় তিন কোটি টাকা দিয়ে দু’টি সংবাদপত্রও কিনেছিলেন সুদীপ্ত। কিন্তু ওই দু’টি সংবাদপত্রেরও মালিকানা পাননি তিনি। একটি নিউজ চ্যানেলে সুদীপ্ত প্রায় ২৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। সেই চ্যানেলের শেয়ারও তাঁকে হস্তান্তর করা হয়নি বলে অভিযোগ। সংবাদপত্র ও চ্যানেলের পাশাপাশি তিনি অসমে ছ’কোটি টাকায় একটি পাঁচতলা আবাসন এবং দেড় কোটি টাকায় ২০ বিঘা জমিও কিনেছিলেন বলে সুদীপ্ত তদন্তকারী অফিসারদের জানিয়েছেন। |
এর আগে সুদীপ্ত ও দেবযানীকে হেফাজতে নিয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেট এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। জেরা করার পরে মঙ্গলবার তাঁদের জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই অনুসারে তাঁদের রাখা হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। এ দিন সেখান থেকে তাঁদের লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ জানায়, রাতেই লেক থানার একটি মামলায় সুদীপ্ত ও দেবযানীকে জেরা করেন বিশেষ তদন্তকারীরা।
সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা রুমা ভুঁইয়া নামে এক এজেন্ট গত এপ্রিলে লেক থানায় সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। রুমার অভিযোগ, তিনি ঢাকুরিয়ায় সারদার অফিসে সাড়ে চার লক্ষ টাকা জমা দেন। এপ্রিলে গিয়ে দেখেন, অফিসে তালা ঝুলছে। ওই মামলায় আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় সুরথেশ্বর মণ্ডল এ দিন সুদীপ্ত-দেবযানীকে ১৪ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
এ দিনই খড়দহ ও চুঁচুড়া থানার পুলিশ চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার অফিসে হানা দিয়ে প্রচুর নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে। অভিযোগ, ওই সংস্থা বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা তোলার পরে আমানতকারীদের প্রতারণা করেছে। ব্যবসার হাল খারাপ হতে থাকায় সেখানকার এক কর্তা বাংলাদেশের পাট চুকিয়ে দিয়ে খড়দহে বসবাস করছিলেন। বাংলাদেশের প্রতারিত আমানতকারীদের এক জন খড়দহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে খড়দহ থেকে ওই সংস্থা-কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, চুঁচুড়ায় সংস্থার রিজিওনাল অফিস রয়েছে। তাদের মূল কার্যালয় কলকাতায়। তার পরেই এ দিন পুলিশ চুঁচুড়ার অফিসে হানা দেয়। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “ওই সংস্থার নাম রয়াল ইনফা প্রপার্টিজ লিমিটেড। তাদের সম্বন্ধে সবিস্তার তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।”
|