প্রায় এক বছর আগের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়কার বিভাজনই যেন ফের ছায়া ফেলল বাম ছাত্র রাজনীতিতে। রাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সে বার ভোট দেয়নি দুই বাম শরিক সিপিআই এবং আরএসপি। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র-নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বুধবার ছাত্র কনভেনশনে উপস্থিত থাকল ওই দু’দলেরই ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ এবং পিএসইউ। হাজির হল না সিপিএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের দুই ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং ছাত্র ব্লক। বছরখানেক আগে যারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণববাবুকে সমর্থন করেছিল!
এবং আরও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বহিষ্কৃতদের সঙ্গে এক সারিতে থাকবে না বলে যে কনভেনশন এড়িয়ে গেল এসএফআই, তার অন্যতম দাবি ছিল পুলিশ হেফাজতে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর প্রকৃত তদন্ত। আমরণ যে সুদীপ্ত ছিলেন এসএফআই নেতা! এসএফআইয়ের অনুপস্থিতিতেই বৃহত্তর বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনে সঙ্কীর্ণতাবাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে সওয়াল করলেন অন্য সংগঠনের নেতারা। সুদীপ্তদের পরম্পরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকারও করলেন তাঁরাই! |
যে যে সংগঠনকে নিয়ে গত শনিবার ‘শান্তি, গণতন্ত্র, সংহতি মঞ্চে’র উদ্যোগে কনভেনশন শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গিয়েছিল, তাদের সকলকে নিয়ে এ দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টা কনভেনশনে নজর ছিল জেএনইউয়ের ছাত্র-নেতাদের দিকেই। এসএফআই থেকে বহিষ্কারের পরে তাঁরা এই প্রথম কলকাতায় কোনও অনুষ্ঠান করলেন। জেএনইউয়ের ওই নেতারা এখন ডিএসএফ নামে নতুন ছাত্র সংগঠন চালাচ্ছেন। তাঁদের তরফে জিকো দাশগুপ্তের বক্তব্য, “কোনও নির্দিষ্ট দলের লেজুড় না-হয়ে স্বতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার দাবিতেই আমরা পদক্ষেপ করছি। শুধু সাংসদ বা বিধায়ক হওয়ার রাজনীতি আমাদের লক্ষ্য নয়। এসএফআই-সহ বামফ্রন্টের চারটি দলের ছাত্র সংগঠনকেই এই কনভেনশনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। দু’টি এসেছে, দু’টি আসেনি।” এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, “আনুষ্ঠানিক দূরে থাক, টেলিফোনেও আমন্ত্রণ আসেনি! এলে না হয় সংগঠনে আলোচনা করে ঠিক করতাম, কী করব!”
এই দাবি-পাল্টা দাবির আবহেই এসএফআইয়ের প্রতি প্রচ্ছন্ন কটাক্ষে জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি তথা ডিএসএফ নেতা ভি আই লেনিন কুমার এ দিনের কনভেনশনে বলেছেন, “কিছু লোকের ধারণা হয়েছে, জঙ্গি ছাত্র আন্দোলন মানে বোধহয় ধুতি বা পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেওয়া! জঙ্গি আন্দোলন ওই দিল্লিতেই ধর্ষণ-কাণ্ডের পরে দেখা গিয়েছে। তাতে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণও করেছেন। আর সুদীপ্ত গুপ্ত কোনও একটি সংগঠনেরও কেউ নয়। সে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রের লড়াইয়ের আইকন!” লেনিনের এই বক্তব্যের কথা জেনে এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় আবার পাল্টা বলেছেন, “সুদীপ্ত আমাদের ছাত্র সংগঠনের ২৬১ তম শহিদ। এসএফআই না-করলে এদের প্রাণ দিতেও হত না! মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সুদীপ্ত রং বদলায়নি। তার পরম্পরাও কেউ কেড়ে নিতে পারবে না!”
দুই ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠনের দুই সাধারণ সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় ও মৃণ্ময় সেনগুপ্ত অবশ্য কৌশলে এসএফআইয়ের সমালোচনাই করেছেন। পার্থ বলেছেন, “বামফ্রন্টের সব ছাত্র সংগঠনকে এক বন্ধনীতে ফেলা ঠিক নয়। এ অচ্ছ্যুত, ও থাকলে যেতে পারব না, এই রকম সঙ্কীর্ণতাবাদী মনোভাব নিয়ে থাকলে গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন প্রসারিত হবে বলেও মনে করি না।” মৃণ্ময়ের কথায়, “সুদীপ্ত যে আক্রমণের শিকার, বৃহত্তর বাম ঐক্য ছাড়া তার মোকাবিলা সম্ভব নয়। এখানে কোনও সঙ্কীর্ণতার স্থান নেই।” বাম সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময়ে পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, কেরল, দিল্লির বহিষ্কৃত সিপিএম সদস্যেদের নিয়ে নতুন দল গড়ার চেষ্টায় আছেন বিক্ষুব্ধেরা। সেই উদ্যোগেরই এক টুকরো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল এ দিন প্রেসিডেন্সিতে।
|