সারদা গোষ্ঠীর কর্ড়ধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে আগেও মুখ খুলেছিলেন সংস্থার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়। এ বার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে সংস্থা-প্রধানের বিরুদ্ধে বোমা ফাটিয়ে তিনি অভিযোগ করলেন, সুদীপ্ত তাঁকে রীতিমতো হুমকি দিচ্ছিলেন।
দেবযানী পুলিশকে জানিয়েছেন, কলকাতা ছেড়ে পালানোর পরে দিল্লি থেকে তাঁকে লাগাতার ফোন করে দিল্লি পৌঁছে যেতে বলতেন সারদা-কর্তা। প্রথমে তিনি রাজি হননি। তখনই সুদীপ্ত তাঁকে শাসাতে শুরু করেন। সেই শাসানির মুখে সারদা-কর্তার পাঠানো বিমানের টিকিট নিয়েই তিনি দিল্লি রওনা হন। সেখান থেকে সোনমার্গে পৌঁছনোর পরে তাঁর মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও দেবযানীর অভিযোগ। বেগতিক দেখে তিনি হোটেলকর্মীদের মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করেন। পুলিশি সূত্রের খবর, দেবযানীর পরিজনদের মোবাইলের সূত্র ধরেই সোনমার্গের হোটেলের হদিস পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। ২৩ এপ্রিল সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় সুদীপ্ত ও দেবযানীকে।
দেবযানী অভিযোগ করছেন সারদা-কর্তার বিরুদ্ধে আর সুদীপ্তের নালিশ, তাঁকে ডুবিয়েছেন তাঁরই এক শ্রেণির কর্মী। সেই অভিযুক্ত কর্মী-তালিকার প্রথমেই আছেন সারদার বারুইপুর অফিসের সর্বেসর্বা অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা। রবিবার রাতে সংস্থার বারুইপুর দফতরের একটি ভল্ট ভাঙার পরে পুলিশের ধারণা, অফিসের ভিতরেই বন্ধকী কারবার শুরু করেছিলেন সারদার কর্মীদের একাংশ। এই সন্দেহ কেন?
তদন্তকারীরা জানান, ওই ভল্টে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার সোনা-রুপোর গয়না পাওয়া গিয়েছে। সাধারণ ভাবে অর্থ লগ্নি সংস্থার ভল্টে গয়না থাকার কথা নয়। গয়না থাকার ইঙ্গিত দেননি সারদা-কর্তা সুদীপ্তও। তা হলে গয়না এল কী করে? পুলিশের অনুমান, বারুইপুর অফিসের ডিভিশনাল ম্যানেজার বুম্বার নেতৃত্বে এক দল কর্মী সারদার ভিতরে থেকেই বন্ধকী ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এবং এ কাজে আমানতকারীদের টাকাই খাটানো হত বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
এক পুলিশকর্তার কথায়, “বুম্বার নেতৃত্বে এক দল কর্মী পৃথক অর্থ লগ্নি সংস্থা খুলেছিলেন বলে সুদীপ্তের অভিযোগ। ভল্ট ভেঙে গয়না উদ্ধারের পরে সেই অভিযোগের সত্যতার কিছু প্রমাণ তো মিলছেই।” তদন্তে নেমে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ জেনেছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও বুম্বা টাকা ফেরত দেননি বলে বহু আমানতকারীর অভিযোগ। টাকা ফেরত চাওয়ায় বুম্বা শাসাচ্ছিলেন বলেও নালিশ করেছেন অনেকে। বুম্বার অফিস থেকে প্রচুর নথি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সব নথি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন বিধাননগরের গোয়েন্দারাও। পুলিশি সূত্রের খবর, সুদীপ্তের পরিবারের অন্তত ১০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে। সেগুলিতে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানান। জেরায় সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন, একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে তাঁর বড় অংশের শেয়ার রয়েছে। সেই সূত্রেই ওই সংবাদমাধ্যমের এক শীর্ষ কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা।
|