এ যেন অবিকল বলিউডি চিত্রনাট্য!
হিন্দি সিনেমায় যেমন মালিককে ঠকিয়ে কোটি কোটি টাকার সংস্থার মালিক হয়ে উঠতেন শক্তি কপূর-প্রেম চোপড়ারা, এ-ও ঠিক তাই। প্রাক্তন কর্মী অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা-ই মালিকানা হাতিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে অসহায়ের মতো দেখছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের কাছে বুধবার এমনটাই দাবি করেছেন তিনি।
কিন্তু সুদীপ্ত সেন তখনই পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন না কেন? সুদীপ্তর বক্তব্য, বুম্বার সঙ্গে নেতা-পুলিশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেননি। সুদীপ্তর এই দাবি কতটা সত্যি, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
সুদীপ্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, বুম্বা-সহ অন্য কয়েকটি অফিস থেকে টাকা আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই কারণে মাস আটেক আগে সারদার ‘ব্যাঙ্কিং-হেড’ দেবযানী মুখোপাধ্যায় সব অফিসে একটি ই-মেল করে আমানতকারীদের জমা টাকা হেড অফিসে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। অফিসগুলিতে ই-মেল করার পাশাপাশি টাকা সরাসরি হেড অফিসে টাকা জমা দেওয়ার জন্য এজেন্টদেরও একটি ১২ পাতার চিঠি পাঠিয়েছিলেন দেবযানী। সুদীপ্তর দাবি, ওই মেল ও চিঠি পাঠানোর পরেই বুম্বা সারদা গোষ্ঠীতে ভাঙন ধরানোর কাজে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জেলা-সহ ত্রিপুরার এজেন্ট ও ডিভিশনাল ম্যানেজারদের সঙ্গে বৈঠক করে বুম্বা। তার পরই বিভিন্ন জেলার ডিভিশনাল ম্যানেজাররা সারদার অফিসেই নিজেরা এক-একটা অর্থলগ্নি সংস্থা খুলে বসেন। বুম্বার নির্দেশ মেনেই ওই সব সংস্থা খোলা হয় বলে সুদীপ্তর দাবি। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, সারদার নামে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলে ওই সব ম্যানেজাররা নিজেদের সংস্থায় জমা করতেন। এত কিছু জানার পরেও বুম্বার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেননি সুদীপ্ত। কারণ, তদন্তকারীদের সুদীপ্ত জানান, বুম্বা শাসক দলের বহু নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। পুলিশের কয়েক জন বড় কর্তার সঙ্গেও তার ওঠাবসা ছিল। সেই কারণেই তিনি অভিযোগ দায়ের করতে ভরসা পাননি।
তদন্তকারীরা জানান, বুম্বার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ত্রিপুরায় সারদার ব্যবসা শুরু হয়েছিল। বুম্বাই ত্রিপুরায় সারদার ব্যবসা দেখভাল করতেন। পাশাপাশি, সারদার জমি কেনা-বেচার ঘটনায় অশোক বিশ্বাস নামে এক জনের নাম উঠে এসেছে। বুধবার অশোকবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত এসপি কঙ্করপ্রসাদ বারুই ও এসডিপিও বারুইপুর দীপক সরকার। জমি কেনা-বেচার তথ্য সল্টলেক অফিসে আছে বলে অশোকবাবু পুলিশকে জানান।
এ দিন বারুইপুর ফুলতলায় সারদার একটি অফিস থেকে খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণের একটি যন্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। সারদা অ্যাগ্রো লিমিটেডের নামে ওই যন্ত্রটি ৪৫ লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছিল বলে জেরায় জানিয়েছেন সুদীপ্ত। সোনারপুর থানা এলাকার একটি গ্যারাজ থেকে সারদার
একটি অ্যাম্বুল্যান্সও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্যারাজ মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ দিন দেবযানীকে কিন্তু জেরা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। দেবযানীও মঙ্গলবার পুলিশি হেফাজতেই গিয়েছিলেন। কিন্তু রাতে অসুস্থ হয়ে পড়ার ফলে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার দুপুরে চিকিৎসকেরা দেবযানীকে ছুটি দিলে তাঁকে সোনারপুর থানার লক-আপে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানান, গরমে কাহিল পড়েছিলেন দেবযানী। এ দিন সকালে তিনি অনেকটাই সুস্থ হন। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁকে জেরা করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
|