বাণিজ্য শাখার উত্তরপত্রের মূল্যায়নে কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানের উপরে গুরুদায়িত্ব চাপাতে চায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠক করে সেখান থেকেই পরীক্ষকদের খাতা দিয়ে দেওয়া হত। প্রথা ভেঙে এ বার কলেজে কলেজে উত্তরপত্র পাঠানোর পরিকল্পনা হচ্ছে। কলেজের অধ্যক্ষ বা বিভাগীয় প্রধানেরাই তা শিক্ষকদের মধ্যে বিতরণ করবেন।
এতে এক ব্যবস্থায় দু’টো লক্ষ্য ভেদ করা যাবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। i এই পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট পত্রের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকেরাই খাতা দেখবেন। i উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে সব শিক্ষককেই যুক্ত করা যাবে। আপাতত পার্ট ওয়ানের মূল্যায়ন দিয়ে এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। পরে বাণিজ্যের অন্যান্য পরীক্ষাতেও নতুন পদ্ধতি চালু করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়। যে-সব কলেজে বাণিজ্য শাখার পঠনপাঠন হয়, সেখানকার অধ্যক্ষদের সঙ্গে আজ, বৃহস্পতিবার এই নিয়ে বৈঠকে বসছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বাণিজ্য শাখার পার্ট ওয়ানে অনার্সের কোনও পত্র নেই। পাঁচটি সাধারণ ও বাধ্যতামূলক পত্র এবং ভাষার একটি পত্র পড়তে হয়। বাধ্যতামূলক প্রতিটি পত্রের জন্য বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের প্রয়োজন। যেমন, অর্থনীতির শিক্ষক সাধারণত ম্যানেজমেন্ট ও বাণিজ্যিক গণিতের খাতা দেখেন না। মূল্যায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে উত্তরপত্রগুলি সে-ভাবেই বিতরণ করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কোন কলেজে কোন বিষয়ের কত বিশেষজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন, বারবার তা জানতে চেয়েও অনেক কলেজের কাছ থেকেই সেই তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে উত্তরপত্র বিতরণে সমস্যা হয়। এ বছর পার্ট ওয়ানে বাণিজ্যের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আগের থেকে বেশি। প্রায় ৩২ হাজার। খাতার সংখ্যা এক লক্ষ ৬০ হাজার। সেই জন্যই এই নতুন পদ্ধতি চালু করতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয়।
কী সেই পদ্ধতি?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, কোন কলেজ থেকে বাণিজ্যের কত পড়ুয়া পরীক্ষা দিয়েছেন এবং কোথায় কত পরীক্ষক আছেন, তার ভিত্তিতে মূল্যায়নের জন্য কলেজে কলেজে উত্তরপত্র পাঠাবে বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সঙ্গে থাকবে প্রধান পরীক্ষকদের তৈরি নির্দেশিকা, যার ভিত্তিতে উত্তরপত্রের মূল্যায়ন করতে হবে। বিভাগীয় প্রধান বা অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে খাতাগুলি বিতরণ করে দেবেন। নির্দিষ্ট সময়ে উত্তরপত্রের মূল্যায়ন ও স্ক্রুটিনি শেষ করবে কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয় সেগুলো পৌঁছে দেবে প্রধান পরীক্ষকের কাছে। তিনি দেখে নেবেন, মূল্যায়ন যথাযথ হয়েছে কি না।
নতুন পদ্ধতি নিয়ে অন্তত দু’টি জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। • যে-সব কলেজ বিষয় অনুযায়ী শিক্ষকদের নামই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় না, তাদের উপরেই আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়াটা কত দূর যুক্তিযুক্ত? • সব কলেজে উত্তরপত্রের গোপনতা বজায় রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে কি?
যোগমায়া দেবী কলেজের অধ্যক্ষা গার্গী নাথ বলেন, “আমাদের একটা ভবনে তিনটে কলেজের (যোগমায়া, আশুতোষ ও শ্যামাপ্রসাদ) লড়ালড়ি! আড়াই-তিন হাজার খাতা পাঠালে রাখব কোথায়?” গোয়েনকা কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা, “বিশ্ববিদ্যালয় কী চায়, দেখা যাক!” নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ সুজিত দাস এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “অধ্যক্ষ যদি উত্তরপত্র বিতরণ করেন, কেউই খাতা দেখার দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।”
বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য সমস্যাগুলি নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি। এক কর্তার কথায়, “জায়গার অভাবটা বড় কথা নয়। কারণ, শিক্ষক চাইলে বাড়ি নিয়ে গিয়ে খাতা দেখবেন। সময়মতো মূল্যায়ন করে নম্বর জমা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে অধ্যক্ষের একটা দায়িত্ব থাকবে। আশা করা যায়, তিনি তা পালন করবেন।” |