আলিপুর এলাকায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং উন্নত মানের পুর-পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাস্তার বিভিন্ন প্রান্তে বসল অত্যাধুনিক থ্রি-জি নজরদারি ক্যামেরা। ‘আলিপুর সিটিজেন্স ফোরাম’-এর উদ্যোগে একটি বিশেষ প্রযুক্তির ১১৬টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই ক্যামেরার আওতায় শুধু আলিপুরের বড় রাস্তাই নয়, এলাকার অলিগলিও চলে আসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আলিপুর থানার কন্ট্রোল রুমে বসে ক্যামেরাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। ক্যামেরা প্রস্তুতকারক সংস্থার দাবি, এই থ্রি-জি প্রযুক্তির ক্যামেরা সাধারণ নজরদারি ক্যামেরার থেকে অনেক বেশি উন্নত। সেই কারণে পুলিশ কোনও ঘটনার প্রমাণ হিসেবে এই ক্যামেরার ‘ফিড’ আদালতে সহজেই পেশ করতে পারবে। এই ক্যামেরার উন্নত মানের ফিডকে কোনও ভাবেই বিকৃত করা যাবে না। ছবিগুলি মুছেও ফেলা যাবে না। কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ জানান, শীঘ্রই এ রকম আরও ৪০০টি ক্যামেরা কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হবে।
বুধবার আলিপুর থানায় এই পরিষেবার উদ্বোধন করেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অনুষ্ঠানে কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার খলিল আহমেদ, সাংসদ সুব্রত বক্সী এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। ছিলেন আলিপুর সিটিজেন্স ফোরামের সদস্যেরাও। শুধু আলিপুর থানাতেই নয়, আলিপুরের ৯ নম্বর বরো অফিসেও থাকবে এর কন্ট্রোল রুম। |

আলিপুর থানায় নজর-ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
আলিপুর সিটিজেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট এস কে জালান জানান, ‘স্মার্ট ভিডিও ম্যানেজমেন্ট’ প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে। তাঁর দাবি, এই রকম উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে গোটা একটি থানা এলাকাকে ক্যামেরার নজরবন্দি করে ফেলার ঘটনা দেশে এই প্রথম। পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে এই ক্যামেরাগুলি বসানো হয়েছে।
উন্নত মানের এই ক্যামেরার প্রস্তুতকারক সংস্থার তরফে তাদের বিজনেস হেড (পূর্ব) তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা জানান, এলসিডি বা এলইডি মনিটরের সাহায্যে কন্ট্রোল রুমে বসেই এমন অনেকগুলি ক্যামেরাকে একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কন্ট্রোল রুমে মাউসের ক্লিকেই ক্যামেরাকে ‘প্যান’ বা ‘জুম’ও করা যাবে। ফলে আলিপুরের রাস্তায় সন্দেহজনক লোকজন বা জিনিস খুব সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
এ ছাড়া, রাস্তায় কোথায় জঞ্জাল পড়ে আছে, কোথায় রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে বা কোনও গাড়ি বেআইনি ভাবে পার্ক করা আছে কি না, ক্যামেরায় ধরা যাবে সে সবও।
অনুষ্ঠানে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে আলিপুরে এক শিল্পপতিকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ে এই ধরনের ক্যামেরা থাকলে খুব সহজেই সমাধান হয়ে যেত। আলিপুর সিটিজেন্স ফোরামের এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। শুধু নিরাপত্তাই নয়, শহরে উন্নত মানের পুর-পরিষেবার জন্য এই ক্যামেরার একটি কন্ট্রোল রুম ন’নম্বর বরো অফিসেও খোলা হল।”
পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ এ দিন বলেন, “এখন কোনও ঘটনা যদি ক্যামেরায় ধরা পড়ে, তা হলে তার ফিড আদালতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসাবে নেওয়া হয়। এই ক্যামেরার সাহায্যে উন্নত মানের ফিড খুব সহজেই আদালতে পেশ করা যাবে। তবে শুধু আলিপুরেই, ওই সংস্থার সহযোগিতায় গোটা কলকাতা জুড়ে এ রকমই আরও ক্যামেরা বসানো হবে। তাতেও শহরটা আরও সুরক্ষিত হয়ে উঠবে। সেই সঙ্গে পুর-পরিষেবাও আরও উন্নত হবে।” |